দুষ্কৃতী-তাণ্ডব রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন খোদ পুলিশ সুপার। তবে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই ফের দুই দুষ্কৃতীগোষ্ঠীর এলাকা দখলের লড়াই শুরু হয়েছে ফরাক্কার অর্জুনপুরে। বোমাবাজিতে ফের অশান্ত গ্রাম। বন্ধ বাজার-হাট, ঘরবন্দি মানুষ-জন। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে ফের।
নিস্ক্রিয়তার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “দুষ্কৃতীদের এই বাড়াবাড়িতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদত রয়েছে। অর্জুনপুরে শান্তি ফেরাতে ফরাক্কা থানাকে সক্রিয় হতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা যখন অভিযোগ তুলছে তখন ফরাক্কা থানার আইসি-কেই জবাবদিহি করতে হবে। পুলিশের ভুমিকায় আমি খুশি নই। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।”
সোমবার দুপুর থেকে অর্জুনপুরে শুরু হয়েছে দফায় দফায় সংঘর্ষ। চলছে বোমাবাজিও। ওই দিন থেকেই বন্ধ অর্জুনপুরের বাজার। মঙ্গলবারও পরিস্থিতি একই। ফলে এ দিন সকাল থেকে বন্ধ সমস্ত স্কুল। তালা দিয়ে দেওয়া হয় পঞ্চায়েত অফিসেও। কাজ বন্ধ হয়ে যায় অর্জুনপুর প্রথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও। |
গত ১ জুন থেকে ৪ জুন পর্যন্ত একই ভাবে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের পরে হুমায়ুন কবীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্জুনপুরে বোমাবাজি রুখতে তৎপর হবে পুলিশ। আবার এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠায় অর্জুনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ওয়ারা বলেন, “পুলিশ নিস্ক্রিয় বলেই এই সব দুষ্কৃতীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে। স্কুলে হাজার পাঁচেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। বাধ্য হয়েই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল ছুটি দিতে হয়েছে।” অর্জুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান লতিফুর রহমান বলেন, “দুষ্কৃতীদের দেখা মাত্র গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশ সুপার। এখন তো থানায় ফোন করলে পুলিশের আসতেই দু’ঘণ্টা লাগে। আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। বাধ্য হয়ে দোকান-পাট বন্ধ করে দিতে হয়েছে।”
অর্জুনপুরে প্রায় ৬০০টি দোকান রয়েছে। এলাকায় গঙ্গার ভাঙন রোধে কয়েক কোটি টাকার কাজও শুরু হয়েছে। ফলে তোলা আদায় করতে এলাকা দখল নিয়েই এই লড়াই বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
অর্জুনপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মহম্মদ মনিরুদ্দিন বলেন, “পুলিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছে বটে। তবে কোনও দুষ্কৃতী আজ পর্যন্ত ধরা পড়েনি।” গ্রামবাসীরা ভয়ে মুখ বন্ধ করে আছে। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মনিরুল হক বলেন, “দুষ্কৃতীরা যে দলেরই হোক, আমরা ওদের শাস্তির দাবি করছি। তবে পুলিশ একেবারে নিস্ক্রিয়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাত খান বলেন, “এ ভাবে কতদিন চলতে পারে? ওই দুষ্কৃতীদের পিছনে যথেষ্ট মদত আছে পুলিশেরই একাংশের।” নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে ফরাক্কা থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছে পুলিশ। তদন্ত হচ্ছে। |