বিতর্ক...
ডিজেলে ভর্তুকি রদ করা দরকার
পক্ষে
ভর্তুকি-‘গুড়’ কোন পিঁপড়ে খায়
ভর্তুকি হল আমজনতার দেওয়া নানা করের টাকা যা সরকার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে জনস্বার্থে দিয়ে থাকে। এই ভর্তুকি ডিজেলে দেওয়ার কোনও যুক্তি থাকতে পারে না। পেট্রোল বা রান্নার গ্যাসেও ভর্তুকি দেওয়ার জন্য কোনও যুক্তি নেই। আর সরকার ভর্তুকি দেওয়ার কথা বললেও বস্তুত তা দিচ্ছে কি না সেটাই এ ক্ষেত্রে বিচার্য। সরকার ভর্তুকি বলে যা দেয় বিভিন্ন তেল কোম্পানিগুলিকে, সেখানেও তাদের লক্ষ্য থাকে এই কোম্পানিগুলির লাভের অঙ্ককে কী করে আরও বাড়িয়ে তোলা যায়। তাদের লোকসান হচ্ছে বা হতে পারে, তাই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বিষয়টা আদৌ এমন নয়। তেল বাবদ কর আদায় এবং ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করলে তেলের দাম তো স্বাভাবিক ভাবেই কমবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিবর্তে তেল কোম্পানিগুলির স্বার্থের কথা ভাবলে সরকার কোনও দিনই তা করতে পারবে না।
ভারতের আন্তর্জাতিক বাজারের সূচক বর্তমানে নিম্নগামী। ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য হ্রাস ধীরে ধীরে বিভীষিকা রূপ ধারণ করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ঊর্ধ্বগামী। ডলারের দাম গত ডিসেম্বর মাসে বাড়ার পর আবার কমে এসেছিল। কিন্তু গত দেড় মাসে এই দাম ৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ৫৬ টাকা হয়েছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যত বৃদ্ধি পাবে, ভারতের পেট্রোজাত পণ্য আমদানির খরচ ততই বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের বাজারে তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হয়নি। ফলে, তেলের চাহিদা কমেনি। এর ফলে পেট্রোজাত দ্রব্য আমদানির খরচ বেড়েছে অর্থাৎ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। সরকার সম্প্রতি পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে। ডিজেল, কেরোসিন, এল পি জি-র দাম অপরিবর্তিত রেখেছে। যেখানে ব্যক্তিগত ব্যবহারের ডিজেল গাড়ি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবা দরকার, সেখানে সরকার ডিজেল গাড়ির উপর চড়া কর বসাতেও নারাজ। যে দেশের রাজকোষে অসীম শূন্যতা বিরাজ করে সেই দেশের শাসকদের ভর্তুকি দেওয়ার বাসনা হওয়াও পাপ। একান্ত অনিবার্য না-হলে ডিজেলের ভর্তুকি রদ করাই বিধেয়। ডিজেলের ভর্তুকি রদ ও তেলের দাম বাড়ানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে অর্থনীতিকে সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।
ভর্তুকির ক্রাচে ভর দিয়ে দীর্ঘ কাল চলা অভ্যাস করলে অক্ষম আরও অক্ষম হয়ে যায়। রাষ্ট্রের পক্ষেও সেটা মর্যাদার নয়। দু’বছর আগেই সরকার পেট্রোল থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। তখন ডিজেল, কেরোসিন বা এল পি জি-র কথা বলা হয়নি। তার ফলে, ইতিমধ্যেই সরকারের ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতির দায় সরকার নেবে বলেছে।
কিন্তু ভর্তুকির এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সুফলটুকু কারা ভোগ করছে? মূলত সম্পন্ন গৃহস্থরাই এই পর্যায়ের যন্ত্রপাতির মালিক। মফস্সলের ভাড়া গাাড়ির চালকরা সিলিন্ডার পিছু সাত-আটশো টাকা দিয়ে দেদার কিনে নিচ্ছে রান্নার এল পি জি। বৈধ গ্রাহকরা দাম দিয়েও ঠিক
সময়ে সিলিন্ডার পাচ্ছে না। তা হলে ভর্তুকির ‘গুড়’ কোন জাতের ‘পিঁপড়েতে’ খাচ্ছে, একটু চোখ কান খোলা রেখে দেখুন না। এ ভাবে সরকার আর কত দিন জেগে জেগে ঘুমোবে?

বিপক্ষে
আমজনতার কথাটাও ভাবুন
চড়া হারে মূল্যবৃদ্ধির পর যদি ডিজেলের উপরেও ভর্তুকি রদ করে দেওয়া হয়, তা হলে সাধারণ জনগণের (মূলত পরিবহণ ব্যবস্থায় যুক্ত খেটে খাওয়া মানুষজনের) নাভিশ্বাস উঠে যাবে। মানছি, পরিবেশ দূষণে এই সমস্ত পেট্রোপণ্যের রাক্ষুসে ভূমিকা আছে। কিন্তু সব কিছু জানা সত্ত্বেও এদের উপর নির্ভর না-করলে আমাদের এক মুহূর্তও চলবে না, চলে না। তাই, পেট্রোলের আগুনে-দামের পর ডিজেল যখন একমাত্র ভরসা, তখন সেটির উপর থেকেও ভর্তুকি তুলে দেওয়া হলে আবার সেই সাইকেল, রিকশা আর শ্রীচরণের ভরসায় ফিরে যেতে হয়। তা ছাড়া, খেটে-খাওয়া মানুষের অন্ন সংস্থানের উপায় কী হবে, সে ভাবনাও থেকেই যায়।
পৃথিবীর সব দেশেই শক্তিক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার অপরিহার্য। ভারতেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে ডিজেল আমদানি উত্তরোত্তর বাড়ছে। ডিজেল এখনও সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের (খনিজ) মূল্য হেরফের হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যে ভর্তুকি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতা বজায় রাখার চেষ্টা করে।
খবরে প্রকাশ, পেট্রোল মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় পেট্রোল চালিত গাড়ির চাহিদা কমে গেছে। তাই বাণিজ্যিক কোম্পানি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ফলে, সরকারি কোষাগারে বিভিন্ন কর বাবদ আয় কমে যাচ্ছে। ডিজেলের ক্ষেত্রে একই নীতি গ্রহণ করলে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চাহিদা এবং উৎপাদন কমে গিয়ে পরিবহণ শিল্পে আঘাত হানবে। এবং পরিণতিতে সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে সরকারের ঘাটতি পূরণের জন্য কর ফাঁকি রোধ এবং কালো টাকা উদ্ধারে নজর দেওয়া উচিত। ডিজেলে ভর্তুকি রদ করা ঠিক নয়।
যাঁরা বিদেশে বেড়াতে যান বা নিজের পয়সায় লন্ডন আমেরিকায় পড়তে যান, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব যদি শুধুমাত্র তাঁদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, তবে দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু নিতান্ত খেটে-খাওয়া শ্রমিক-কেরানি-ফেরিওয়ালা-প্রান্তিক চাষি, সবজি বিক্রেতা কেউই এর কুফল থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
তেলের দাম বাড়ার মূল কারণ, টাকার অবমূল্যায়ন ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমা। এবং এটা অনেকাংশেই কেন্দ্রীয় সরকারের আমদানি-রফতানির ভ্রান্ত নীতির পরিণামও বটে।
তাই আমার মনে হয়, ভারতীয়দের বিদেশ ভ্রমণ সংকুচিত করতে পারলে এবং কিছু অদরকারি আমদানির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে শেয়ার বাজারের খামখেয়ালি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হবে। বিশেষ করে, ডলার ধরে রাখা সম্ভব হবে। ডিজেলে ভর্তুকি রদ করার দরকার হবে না।

ডিজেলের ভর্তুকি প্রত্যাহারের দাবি তোলা সহজ, কারণ যাঁরা ডিজেল ব্যবহার করেন, তাঁদের তেমন রাজনৈতিক জোর নেই। এ দেশের সরকার প্রতি বছর যে বিপুল অর্থ সারের জন্য ভর্তুকি বাবদ খরচ করে, তা প্রত্যাহার করার দাবি করা হয় না কেন? মহাত্মা গাঁধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিরাপত্তা যোজনা, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কত হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, বা হবে, সে হিসেব কোথায়?
সরকার নিজের রাজস্ব নীতি স্থির করুক। যদি ভর্তুকি না দেওয়াই নীতি হয়, তবে সব ভর্তুকিই প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। আর, যদি তা করার মতো রাজনৈতিক কোমরের জোর না থাকে, তবে ডিজেল ভর্তুকি রদ করার চিন্তাও ত্যাগ করুক সরকার।

 
অগস্ট মাসের বিতর্ক
আপনার চিঠি পক্ষে না বিপক্ষে, তা স্পষ্ট উল্লেখ করুন।
২৫ জুলাইয়ের-র মধ্যে এই ঠিকানায়
অগস্ট মাসের বিতর্ক,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.