দেশের মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে তৎপর হল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। বিষয়টি নিয়ে আজ খাদ্য মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পুলক চট্টোপাধ্যায়।
ইউপিএ সরকারের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশের মানুষকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় সেই বিল এখনও পাশ করাতে পারেনি সরকার। বর্তমানে ওই বিলটি আলোচনার জন্য সংসদের স্থায়ী কমিটির কাছে রয়েছে। এ দিকে লোকসভা নির্বাচন হতে বাকি মাত্র দু’বছর। এই অবস্থায় দ্রুত বিলটি পাশ করে দেশের মানুষকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে তৎপর হয়েছে কংগ্রেস শিবির। রাজনৈতিক সূত্র বলছে, সেই লক্ষ্যেই আজকের এই বৈঠক। যার তত্ত্বাবধান করেন গাঁধী পরিবার ঘনিষ্ঠ আমলা হিসেবে পরিচিত পুলকবাবু।
কিন্তু কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের মতে, বর্তমান রেশন ব্যবস্থায় যে দুর্নীতি রয়েছে, তা ওই আইনকে বাস্তবায়িত করার পথে সবথেকে বড় বাধা। ইতিমধ্যেই রেশন ব্যবস্থার দুর্নীতি রোধে একাধিক পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক। সেই কাজ বাস্তবে কতটা এগিয়েছে, আজকের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা করেন পুলক চট্টোপাধ্যায়। ভুয়ো রেশন কার্ড ধরার পাশাপাশি খাদ্যশস্য পরিবহণ ও বণ্টনের সময়ে যে দুর্নীতি হয়, তা রোখার কাজ কতটা এগিয়েছে, তা-ও সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ ওই আমলাকে জানান খাদ্য মন্ত্রকের কর্তারা।
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বর্তমানে গোটা দেশে কুড়ি কোটি মানুষ রেশন ব্যবস্থার সুবিধা পান। অথচ বাস্তবে তাদের দশ শতাংশের কোনও অস্তিত্বই নেই! গোটা দেশে রেশন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত একটি চক্র ওই খাদ্যশস্য রেশন থেকে তুলে তা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা লোটে। এই সমস্যা রুখতে গোটা দেশে যাদের প্রকৃত রেশন ব্যবস্থার সুফল পাওয়ার কথা, তাদের নামে ইলেকট্রনিক রেশন কার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। পরীক্ষামূলক ভাবে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্যে এই কাজ এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তাদের তা জানানোও হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের মতে, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআই)-র গুদাম থেকে যে লরির মাধম্যে খাদ্যশস্য গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়, সেগুলিও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাই ওই লরিগুলির গতিপথ নিরীক্ষণ করার জন্য সে গুলিকে জিপিএস পরিষেবার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই ছত্তীসগঢ় সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ করে বিশেষ সাফল্য পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে বৈঠকে।
শুধু দারিদ্রসীমার নীচে (বিপিএল) থাকা পরিবারগুলিই খাদ্য সুরক্ষার সুবিধা পাবে, না কি সীমার ঠিক উপরে থাকা (এপিএল) পরিবারগুলিও এই সুবিধা পাবে, তা নিয়ে সরকারের ভিতরে-বাইরে বিতর্ক রয়েছে। এপিএল ও বিপিএল দুই শ্রেণিকেই এই সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নে আপত্তি রয়েছে কৃষি মন্ত্রকের। আজ বৈঠকে এই বিতর্কে কী পদক্ষেপ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন কার্যকর করতে সক্রিয় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। সনিয়া গাঁধী নিজেই এই বিষয়ে তৎপর। কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার-সহ অনেকেই খাদ্য সুরক্ষা বিলটি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব দ্রুত বিলটি পাশ করাতে চাইছেন। |