খারিজ হয়ে গেল পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা এবং বিজেপি-র তোলা অভিযোগ। গৃহীত হল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মনোনয়নপত্র। কিন্তু গোটা বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর আজ বিশ্রী চেহারা নিল।
বিজেপি-র অভিযোগ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠির যে প্রতিলিপি প্রণববাবুর তরফে আজ রিটার্নিং অফিসারের কাছে পেশ করা হয়েছে, সেটি জাল। এই  সংক্রান্ত লিখিত বক্তব্যে প্রণববাবুর যে সই রয়েছে, তার সঙ্গে ওই চিঠির সই মিলছে না। কংগ্রেসের তরফে অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার তথা রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল ভি কে অগ্নিহোত্রীও বলেছেন, এক জন ব্যক্তি দু’জায়গায় দু’রকম সই করতেই পারেন। যদিও বিজেপি বিষয়টিতে এখানেই ইতি টানতে নারাজ। তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছে। যার জবাবে কংগ্রেস মহল বলছে, সুপ্রিম কোর্টে গেলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না। যা হওয়ার ভোট মেটার পরে হবে। তখন কংগ্রেসও আইনি পথে লড়বে।
মনোনয়নপত্র খতিয়ে দেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা গত কালই ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু প্রণববাবুর বিরুদ্ধে লাভজনক পদে থাকার অভিযোগ এনে তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান সাংমা এবং তাঁর প্রতিনিধি বিজেপি নেতা সত্যপাল জৈন। আজ দুপুর দু’টোর মধ্যে প্রণববাবুকে ব্যাখ্যা দিতে বলেন অগ্নিহোত্রী। সেই ব্যাখ্যা আসার পরে শুরু হয় শুনানি।
রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেলের কক্ষে কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবন বনশল এবং পি চিদম্বরমের সঙ্গে সত্যপাল জৈন এবং বিজেডি নেতা ভতৃহরি মহতাবের যুক্তির লড়াই চলতে থাকে। শুনানি যত দীর্ঘ হয়, ততই উৎকণ্ঠা ছড়ায় কংগ্রেস শিবিরে। কারণ, প্রণববাবুর মনোনয়ন খারিজ হয়ে যাওয়ার অর্থ সাংমার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি হয়ে যাওয়া। উত্তেজনা ছিল বিজেপি নেতাদের মধ্যেও। সংসদ ভবনে বসে গোটা ঘটনার উপর নজর রাখছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ।
শেষ পর্যন্ত অগ্নিহোত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, “সমস্ত মনোনয়নপত্র খতিয়ে দেখে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমার মনোনয়ন গৃহীত হয়েছে। তাঁদের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।” কী যুক্তিতে তিনি সাংমার অভিযোগ খারিজ করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অগ্নিহোত্রী বলেন, “সেটা প্রকাশ করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন অনুমতি দিলে তবেই তা জানাতে পারব। কেউ চাইলে তথ্যের অধিকার আইনেও আবেদন জানাতে পারেন।” তাঁর রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সাংমার শীর্ষ আদালতে যেতে যে বাধা নেই, তা-ও জানিয়ে দেন তিনি।
আর সেক্রেটারি জেনারেলের এই মন্তব্যই সন্দেহ ঘনীভূত করার পক্ষে যথেষ্ট বলে দাবি করছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। বিজেপি-র বক্তব্য, আদালতে গেলে প্রণববাবু কোনও ভাবেই জিততে পারবেন না। বিজেপি নেতা অনন্ত কুমার বলেন, “লড়াই সবে শুরু হল। ইউপিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী আইএসআই থেকে ঠিক ভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই পদত্যাগপত্র যথাযথ ভাবে স্বীকারও হয়নি। তা ছাড়া, প্রণববাবুর পদত্যাগপত্রে যেমন মন্ত্রকের কোনও ক্রমিকসংখ্যা নেই, তেমনই ওই চিঠির উপরে ‘গৃহীত’ বলে আইএসআই-এর প্রেসিডেন্ট যে সই করেছেন, তাতেও অসঙ্গতি রয়েছে।”
বিজেপি-র আরও বক্তব্য, আইএসআই-এর পরিষদের বৈঠকে প্রণববাবুর পদত্যাগ গৃহীত হয়নি। এর জবাবে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল বলেন, “আইএসআই-তে প্রেসিডেন্টের পদ চেয়ারম্যানের থেকে উপরে। ফলে তিনিই প্রণববাবুর ইস্তফা মঞ্জুর করেছেন। তা ছাড়া, পদত্যাগ কী ভাবে গৃহীত হবে, তা নিয়ে আইএসআই-এর সংবিধানে কোনও স্পষ্ট নিয়ম নেই। সংস্থার পরিষদের বৈঠক চার মাস অন্তর এক বার বসে। সুতরাং পরিষদের বৈঠকে পদত্যাগপত্র গ্রহণের যে দাবি তোলা হয়েছে, তা অবান্তর।”
রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বললেও এ নিয়ে জলঘোলা করা কতটা সঙ্গত, তা নিয়ে বিজেপি-র মধ্যেই মতান্তর রয়েছে। দলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন, ইস্তফার বিষয়টি নেহাতই প্রশাসনিক খুঁটিনাটি। ফলে এ নিয়ে বেশি হইচই করাটা মানুষ ভাল চোখে দেখবে না। কিন্তু সুষমা স্বরাজের মতো নেতারা আবার বলছেন, কংগ্রেসকে ভোটের অঙ্কে পর্যুদস্ত করার ক্ষমতা যখন নেই, তখন অস্বস্তিতে ফেলার সুযোগ হাতছাড়া করা হবে কেন? বিজেপি-র এই শিবিরের নেতাদের মতে, প্রণববাবুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চারটি রাস্তা এখন খোলা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে সাধারণত আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। কিন্তু বিশেষ আবেদন করা যেতেই পারে। সেটা যদি না করা হয়, তা হলে দ্বিতীয় বিকল্প হল, ভোট পর্ব মেটার পরে মামলা করা। অর্থাৎ, প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেও তাঁর সেই পদে থাকার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা। তৃতীয়ত, এখনই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করা। যদিও আইনজীবীদের একটি অংশের মতে, মনোনয়নপত্র গৃহীত হবে কিনা, সে ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ফলে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। বিজেপি-র হাতে শেষ অস্ত্র হল, প্রচারে জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানানো যে, যিনি ‘জাল’ নথি দিয়েছেন, তাঁকে জেতানো উচিত নয়। |