বাঘা যতীন হাসপাতাল
জানলার পাশে স্ত্রী-রোগের আউটডোর, কর্মীরাও পুরুষ
‘আব্রু’ বলতে যা বোঝায়, তার বিন্দুমাত্রও অবশিষ্ট নেই সেই ঘরে। অথচ, সেটাই কলকাতার এক হাসপাতালের গাইনি আউটডোর!
আউটডোরের যে ঘরে মহিলাদের শুইয়ে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা, তার পাশেই বহুতল বাড়ি। ছাদ বা বারান্দায় দাঁড়ালে সরাসরি নজর যায় ঘরের ভিতরে। আউটডোরের ঘর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নয়, তাই দিনভর তার জানলা খোলাই থাকত। পরিদর্শনে এসে চমকে ওঠেন অন্য হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসক। তাঁরা দেখেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে নিরুপায় মহিলারা লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে কী ভাবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন এই ‘অনিয়ম’।
মহিলাদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ে কোনও মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্টও উপস্থিত থাকেন না। কারণ, সমস্ত বিভাগের আউটডোর মিলিয়ে সাকুল্যে তিন জন অ্যাটেন্ড্যান্ট। আর সকলেই পুরুষ। তাই আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মতো পরীক্ষার জন্যও কোনও মহিলা কর্মীকে পাওয়া যায় না বেশির ভাগ সময়েই। এ সব ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ে মহিলা কর্মীর উপস্থিত থাকাটা বাধ্যতামূলক।
কোনও অজ গ্রাম নয়, ছবিটা কলকাতার বাঘা যতীন হাসপাতালের। সম্প্রতি এই হাসপাতালকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আর সেই নড়াচড়াতেই সামনে এসেছে বেশ কিছু অনিয়ম। ন্যাশনালের চক্ষু বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, “বাঘা যতীনে মাইক্রোস্কোপ ছিল, অপারেশন থিয়েটারও ছিল। কিন্তু ডাক্তারের অভাবে অস্ত্রোপচার হত না। আমরা সেটা শুরু করছি। আই ক্যাম্প করে অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনাও রয়েছে। কিন্তু কর্মীর বড্ড অভাব। সেটাই প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে।”
ন্যাশনালের চিকিৎসকদের একটি দল বাঘা যতীন পরিদর্শনে এসে স্ত্রী-রোগ বিভাগের পরিকাঠামো নিয়েই সব চেয়ে বেশি সরব হন। অবিলম্বে গাইনি আউটডোরটি অন্যত্র সরানোর কথা বলেছেন তাঁরা। এক চিকিৎসক বলেন, “কোনও সভ্য দেশে এমন বেআব্রু আউটডোর থাকতে পারে না। গাইনি বিভাগের উল্টো দিকে ডেন্টাল আউটডোর। আপাতত এই বিভাগটি আমরা ডেন্টাল আউটডোরের দিকে সরিয়ে দিতে বলেছি। যত দিন তা না সরবে, তত দিন পর্যন্ত গাইনি বিভাগের ঘরে সমস্ত জানলা বন্ধ থাকবে, যাতে পাশের বাড়ি থেকে ঘরের ভিতরে দৃষ্টি না পৌঁছতে পারে।” অসহ্য গরমে জানলা বন্ধ রেখে কাজ করতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা চিকিৎসকদের। নাজেহাল রোগিণীরাও।
মহিলা কর্মী না-রেখেই বা কী ভাবে দিনের পর দিন কাজ চলছে হাসপাতালে? সুপার রঞ্জন মজুমদার বলেন, “ইসিজি বিভাগে এক মহিলা টেকনিশিয়ান আছেন। আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সময়ে তাঁকে ডেকে নেওয়ার চেষ্টা হয়। তবে নিজের বিভাগের কাজ সামলে তাঁর আসাটাও সমস্যার। তাই মহিলা কর্মী না-রেখেই বহু ক্ষেত্রে পরীক্ষা চালাতে হয়।”
নিয়ম যে ভাঙা হচ্ছে, তা জানে স্বাস্থ্য দফতরও। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “আমরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি। তবে শুধু মহিলা কর্মী নয়, সামগ্রিক ভাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরই খুব অভাব বাঘা যতীনে। হেল্থ সার্ভিস নিয়োগ চালু হয়ে গেলে এই সমস্যাটা আর হয়তো থাকবে না।” কবে চালু হবে ওই বোর্ড? অধিকতার্র জবাব, “শীঘ্রই হবে হয়তো।”
তত দিন পর্যন্ত ‘নিয়ম ভাঙা’ই নিয়ম বাঘা যতীনে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.