হুল দিবস উপলক্ষে বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। শনি ও রবিবার বাঁকুড়ার তালড্যাংরা থানার শালদহ গ্রামে দু-দিনের অনুষ্ঠানে তির নিক্ষেপ-সহ ছিল আদিবাসী নৃত্যের বর্ণময় উপস্থাপনা। সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই অনুষ্ঠানে ভিড় জমিয়েছিলেন। অন্য দিকে, বাঁকুড়া শহরে রবীন্দ্রভবনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘বাঁকুড়া খেরওয়াল মার্শাল গাঁওতা’। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা। উদ্যোক্তা সংগঠনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সনগিরি হেমব্রম জানান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সিদো-কানহুর বিদ্রোহ নিয়ে আলোচনাচক্র, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ৬০শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশকরা প্রায় ২০জন সাঁওতাল ছাত্রছাত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
বাঁকুড়ার মতো পুরুলিয়াতেও হুল দিবস পালন হয়েছে। ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার উদ্যোগে শনিবার হুল দিবসে শেষ হল দ্বিতীয় দফার শ্রমিক সচেতনতা অভিযান। মোর্চার নেতা অজিত মাহাতো জানিয়েছেন, শহিদ বীরসা মুন্ডার আত্মবলিদান দিবসের দিনে জেলা জুড়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। হুল দিবসে তা শেষ হল। জেলার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি। তাঁর কথায়, “আমরা দেখেছি, নির্মাণ শ্রমিক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরিও পান না। তাই এই কর্মসূচি আমরা নিয়েছিলাম।”
অন্য দিকে, হুল দিবসে বলরামপুর কলেজ ময়দানে নানা অনুষ্ঠান হয়। শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ। আদিবাসী নৃত্য, সঙ্গীত-সহ নানা অনুষ্ঠান ছিল। বরাবাজার, বান্দোয়ান, হুড়া-সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়েছে।
|
বিধানচন্দ্র রায়ের ১৩০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাঁকুড়ার বড়জোড়া চৌমাথা মোড়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রভাতফেরির আয়োজন করে বিধানচন্দ্র রায় স্মৃতিরক্ষা সমিতি। অনুষ্ঠানে কয়েকশ দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের ছাতা দেওয়া হয়। উদ্যোক্তা সমিতির সম্পাদক বিবেকানন্দ কেওড়া জানান, অনুষ্ঠানে নাচ, গান ও আবৃত্তির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাও ছিল। |
সিউড়িতে দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে হুল উৎসব পালিত হচ্ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন এ বারে একেবারে নতুন আস্বাদে হুল উৎসব পালন করলেন। শনি ও রবিবার দু’দিন ধরে সিউড়ির সিধো-কানো মঞ্চে উৎসব দেখতে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়েছিল। আদিবাসী লোকসংস্কৃতি নির্ভর এই উৎসব, বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্র (বর্তমানে জেলা স্কুলের অঙ্কন বিভাগের শিক্ষক) সারথি দাসের মঞ্চসজ্জায় তা অন্যমাত্রায় পৌঁছেছিল। সহযোগী শিল্পীদের নিয়ে তিনি গ্রামাঞ্চলের আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত নানান অদ্ভুত অদ্ভুত সাজসরঞ্জাম (মাছ ধরার জন্য বাঁশে বোনা সামগ্রী, ধামা, জলসেচের দোন, গরুর গাড়ির চাকা, লাঙল, গুড় তৈরির সরঞ্জাম প্রভৃতি) দিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। যা আলাদা করে দর্শকদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। অনুষ্ঠানে জেলার শিল্পীদের পাশাপাশি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও মেদিনীপুরের লোকসংস্কৃতি শিল্পীরা যোগ দিয়েছিলেন। |
আজকের বিশ্বায়নের যুগে লোকায়ত ক্ষেত্রের বাইরেও বাউল গানের কদর ক্রমশ বাড়ছে। বাউল গান এখন তাই শুধুমাত্র বিশেষ লোকায়ত সংস্কৃতি হয়েই থাকছে না। দর্শক মনোরঞ্জনের বাণিজ্যিক মোড়কে তা ছড়িয়ে পড়ছে দুনিয়ার দরবারে। এক সময় পূর্ণদাস বাউলের হাত ধরে বিশ্ব একরকম ভাবে চিনছিল বাংলার বাউলকে। আর আজ লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, রোমের মতো আন্তর্জাতিক শহরে অনুষ্ঠানের দৌলতে বাংলার অসংখ্য খ্যাত-অখ্যাত বাউলের হাত ধরে সেই চেনা আরও নানান মাত্রা পাচ্ছে।
মেঠো বাংলার বাউল শিল্পীদের এই জয়যাত্রার নতুন নক্ষত্র জেলার বিশিষ্ট বাউলশিল্পী লক্ষ্মণ দাস বাউল। আগামী ৬-৮ জুলাই আমেরিকার লাস ভেগাস শহরে আয়োজিত হতে চলেছে বঙ্গ সম্মেলন। আর সেখানে বাউল গানের আসর জমাতে চলেছেন সম্মেলনে জেলার একমাত্র প্রতিনিধি লক্ষ্মণ দাস বাউল। বোলপুর শুঁড়ি পাড়ার এই বাউল জেলার শ্রেষ্ঠ বাউলদের অন্যতম। তাঁর গুরু বাবা প্রখ্যাত প্রবীণ বাউল দেবদাস ও মা রাধারানি। লক্ষ্মণ দাস বাউলের গায়কী ও গানের সঙ্গে নৃত্যের নানা মুদ্রা দর্শকদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। এর আগেও তিনি ইংল্যান্ড, জামার্নি, সুইজারল্যান্ড, ইতালির বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান করেছেন। ইউরোপের পর এ বার চললেন ওবামার দেশে। তাঁর সঙ্গে সম্মেলনের অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্রে সহযোগিতা করবে কলকাতার ‘রূপ ঝঙ্কার সঙ্গীত গ্রুপ’। |
শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন
‘...এ কথা খুব সহজ, কিন্তু কে না জানে
সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়।’
কথাটা যেন খেটে যায় তপন গোস্বামীর কবিতা সম্বন্ধেও। হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের এই শিক্ষক কবিতা লিখে চলেন সহজ, সাবলীল ঢঙে। তাঁর কবিতায় সহজ শব্দভঙ্গির আড়ালে লুকিয়ে থাকে গভীর ব্যঞ্জনা। তপনবাবু বর্তমানে সিউড়ির বাসিন্দা। জীবনানন্দ দাশ, শঙ্খ ঘোষের কবিতার এই ভক্তের এখনও পর্যন্ত ৭টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি সম্পাদনা করেন ‘সৃজনী’ নামে একটি গবেষণামূলক লিটল ম্যাগাজিনও।
এমন কবির লেখনী থেকেই বেরোতে পারে এই পঙ্ক্তি
‘মৌমাছি জমেছে খুব আমাদের শান্তিনিকেতনে।
দেখে যাননি রবীন্দ্রনাথ
শুনে যাননি নন্দলাল বসু।
মৌমাছিরা কবিতা লিখছে, ছবি আঁকছে
প্রত্যেক ছুটিতে রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।
কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে
ফাইল খুলে দেখাচ্ছে ছুটির দিনেও
ফ্রেস্কো আঁকছে কলাভবনের দেওয়ালে।’ |
তথ্য: অরুণ মুখোপাধ্যায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়,
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
|
|
সিউড়িতে সিদো-কানহু মঞ্চে ভুয়াং নৃত্য ও
বোলপুরে বাহা নৃত্য পরিবেশন করছেন আদিবাসীরা। |
|
বিষ্ণুপুরে আদিবাসী নৃত্যের ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র। |
|