ঝাড়গ্রামের পর ঘাটালে ভ্রাম্যমাণ লোক আদালত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম ও ঘাটাল
|
ঝাড়গ্রামের পর রবিবার ঘাটালে পৌঁছল ভ্রাম্যমাণ আদালত। যদিও ঝাড়গ্রাম থেকে ঘাটাল আসার পথে বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে গাড়িটির পৌঁছতে একটু দেরি হয়।
শনিবার সকালে ঝাড়গ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে রাজ্যের সর্বপ্রথম ভ্রাম্যমাণ আদালত-গাড়িটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপনকুমার দত্ত, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক পার্থপ্রতিম দাস, ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক পার্থসারথি চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রামের উপমুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) প্রিয়জিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। |
|
ঘাটালে ভ্রাম্যমাণ আদালত-গাড়ির উদ্বোধন |
এ দিন লোক আদালতে মোট ৮৪টি মামলার (দেওয়ানি ও মীমাংসা যোগ্য ফৌজদারি মামলা) নিষ্পত্তি করা হয়। ঘাটালেও কল্যাণবাবু, তপনবাবুরা এসেছিলেন। এ ছাড়াও জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী-সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা ছিলেন। শতাধিক মামলার নিষ্পত্তি হয়। পরে বিকালে ঘাটালের বীরসিং গ্রামে বিচারপতিরা আইনি সচেতনতা শিবির করে লোক আদালতের সুযোগ-সুবিধার কথা প্রচার করেন।
বছর খানেক আগে বেলিয়াবেড়া থানার পাতলাডিহা গ্রামের ভগীরথ মল্লিক তাঁর ছেলেকে মারধর করার অভিযোগে স্থানীয় চণ্ডীসাই গ্রামের প্রফুল্ল সিংহের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই সময় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান প্রফুল্ল সিংহ। এক বছর ধরে ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছিল বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষকে। শনিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত বাদী-বিবাদী দু’পক্ষকে লোক আদালতের গুরুত্ব বোঝালেন। বিচারপতি সেনগুপ্তের উপস্থিতিতে লোক-আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়ে গেল। লোক আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গণেশকে মারধর করার ক্ষতিপূরণ বাবদ ভগীরথবাবুকে দু’হাজার টাকা দিতে সম্মত হলেন প্রফুল্লবাবু। জুলাই মাসের মধ্যে দু’কিস্তিতে ওই টাকা ভগীরথবাবুকে দেবেন প্রফুল্লবাবু। এক বছরের তিক্ততার অবসানে খুশি দু’পক্ষই। |
|
ঝাড়গ্রামে লোক আদালতে হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
২০০৭ সালের মার্চে ঝাড়গ্রাম শহরে একটি রাস্তা অবরোধ তোলার সময় পুলিশকে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে দুই কংগ্রেস নেতা-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি নিখিল মাইতি, কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম মহকুমা সভাপতি প্রসূণ ষড়ঙ্গী ও তৎকালীন তৃণমূল নেতা গৌরাঙ্গ প্রধানকে গত পাঁচ বছর ধরে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছিল। শনিবার লোক-আদালতে পুলিশ অভিযোগ প্রত্যহার করে নেওয়ায় মামলাটির নিষ্পত্তি হয়ে গেল। নিখিলবাবুদের আইনজীবী সত্যজিৎ সিংহের বক্তব্য, “দীর্ঘদিনের হয়রানির হাত থেকে আমার মক্কেলরা রেহাই পেলেন।”
২০০৩ সালে সাঁকরাইল থানার রোহিণীর বিকাশচন্দ্র জানা পুকুরে মাছ চাষ করবেন বলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ঋণ নেন। সময় মতো বিকাশবাবু ঋণের টাকা শোধ না করায় সুদে আসলে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। মামলা করেন ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ। শনিবার লোক-আদালতে বিকাশবাবুর মতো অনেক খেলাপী গ্রাহকের বকেয়া ঋণ সংক্রান্ত মামলা গুলির নিষ্পত্তি হল। ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ ঋণের ফেরতযোগ্য টাকার পরিমাণ কমাতে সম্মত হওয়ায় স্বস্তি পেলেন ঋণ-খেলাপী গ্রাহকেরা। লোক-আদালতের মীমাংসায় আগামী এক বছরের মধ্যে বিকাশবাবুকে কেবলমাত্র ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা শোধ করতে হবে। আইনজীবী সুমন সেনের বক্তব্য, “শনিবার ব্যাঙ্কের বকেয়া ঋণ সংক্রান্ত বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় আমার মক্কেলরা ঋণের অঙ্কে বেশ কিছুটা ছাড় পেয়েছেন। লোক আদালতে এটাই প্রাপ্তি।”
যদিও ঝাড়গ্রাম আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী কৌশিক সিংহের দাবি, “শনিবার ঝাড়গ্রামে লোক-আদালতের বিষয়টি বহু বিচারপ্রার্থী সময়মতো জানতে পারেননি। উপযুক্ত প্রচার করা হলে আরও অনেক বিচারপ্রার্থী লোক আদালতে আসার সুযোগ পেতেন।” |
|