পরিবর্তনের হাওয়া বাজারে
চটজলদি ছকতে হবে লগ্নি পরিকল্পনা
বশেষে শেয়ার বাজারে সবুজ বিপ্লব। লাল হটিয়ে বেশির ভাগ শেয়ারই শুক্রবার ছিল সবুজ। অনেক দিন পর এই ঘটনা ঘটায় স্বভাবতই খুশি লগ্নিকারীরা।
শুক্রবার এক লাফে সেনসেক্স ওঠে ৪৩৯ অঙ্ক। পৌঁছে যায় প্রায় ১৭,৫০০ পয়েন্টের কাছাকাছি। আবার ৫৩০০ ছুঁইছুঁই নিফ্টিও। হঠাৎ কী এমন ঘটল, যাতে বুল-রা এতটা শক্তি ফিরে পেল এবং আত্মগোপন করল বেয়ার-রা?
বুল-দের জেগে ওঠার টনিক জুগিয়েছে দেশ ও বিদেশের কিছু ঘটনা। ইউরো কাপের ফাইনালে ওঠা স্পেন এবং ইতালি-সহ ইউরোপের কয়েকটি দেশের ঋণসঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। যার জেরে শুক্রবার সকাল থেকে তেতে ওঠে এশিয়ার বাজারগুলি। পরে ইউরোপীয় বাজারগুলিও শক্তি প্রদর্শন করায় সেনসেক্স ও নিফ্টিকে আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। মার্কিন বাজারও ওঠে একই গতিতে। শেয়ার বাজার বিশ্বময় তেজ প্রদর্শন করায় কিছুটা নেমে আসে সোনার দাম। কমে ডলারের বিনিময়মূল্যও। বেড়ে যায় ডলারের তুলনায় টাকার দর।
শুধু বিদেশি শক্তিই নয়, ভারতীয় শেয়ার বাজারকে ইন্ধন জুগিয়েছে কিছু স্থানীয় ঘটনাও। অর্থ দফতর খোদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে আসায় আশার আলো দেখছে কোনও কোনও মহল। সরকার নতুন করে আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটবে, এমন কথা বলা হয়েছে তাদের তরফে।
কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন বা কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন বা জেনারেল অ্যান্টি ট্যাক্স অ্যাভয়ডেন্স রুল (জি এ এ আর)-এর খসড়া বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়ায় কিছুটা আশঙ্কা দূর হয়েছে বড় মাপের লগ্নিকারীদের মন থেকে। কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার
বিলগ্নিকরণ। ভোডাফোনের কর সংক্রান্ত বিতর্কের পর বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সচেষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবারই ভারতে প্রবেশ করে মোটা অঙ্কের বিদেশি লগ্নি। ফলে, এক ঝটকায় ডলারে টাকার দাম বেড়ে ওঠে ১.১৯ টাকা। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম অনেকটা কমে আসাও শক্তি জোগাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। সব মিলিয়ে শেয়ার বাজারে তৈরি হচ্ছে একটি আশার বাতাবরণ।
এই পরিস্থিতিতে যে-সব সমস্যা বাজারকে মাঝেমধ্যেই বেগ দেবে, তা হল:
• উঁচু পণ্যমূল্য
• চড়া সুদের হার
• দেশের অনেক জায়গায় কম বৃষ্টিপাত
অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে বাজার একটানা ওঠার পথে বাধা পাবে। একটু উঠলে বিক্রিরও চাপ আসবে। বাজারের এই পরিবর্তনের মুখেই কিন্তু ছকে ফেলতে হবে লগ্নির ছক। এমন অনেক শেয়ার আছে, যা গত দু’বছরে আদৌ ওঠেনি, বরং পড়েছে। বেশ কিছু শেয়ার রয়েছে, যা থেকে ডিভিডেন্ডও পাওয়া যায় না এবং যাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা খুব কম সেই সব শেয়ার বাজার ওঠার সুযোগে বিক্রি করে বেরিয়ে আসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একই কথা প্রযোজ্য কিছু মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পের ক্ষেত্রে। বিক্রির টাকা অন্যান্য ভাল এবং সম্ভাবনাময় শেয়ারে লগ্নি করা যেতে পারে পতনের সুযোগ নিয়ে। অথবা রাখা যেতে পারে ব্যাঙ্কেও।
স্টেট ব্যাঙ্ক গত সপ্তাহে সুদ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে। ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে নতুন সুদের হার করা হয়েছে ৯ শতাংশ। যে-সব শেয়ার এবং মিউচুয়াল প্রকল্প থেকে কোনও আয় এবং বৃদ্ধি হচ্ছিল না, তা এই বেলা গুটিয়ে নিয়ে ব্যাঙ্কে রাখলে অন্ততপক্ষে ৯ শতাংশ আয় হতে পারে।
শেয়ার বাজার বাড়তে শুরু করলে সাধারণত নামতে শুরু করে সোনা এবং ডলারের দাম। এই ঘটনা শুক্রবারই দেখা গিয়েছে। সোনার তরী (২৪ ক্যারাট) নেমে এসেছে ৩০ হাজারের নীচে। ডলার পৌঁছেছে ৫৫.৬২ টাকায়। দাম যদি আরও কিছুটা নামে, সোনায় লগ্নি করার কথাও ভাবা যেতে পারে। চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত নজর রাখা প্রয়োজন নিজের শেয়ার ও মিউচুয়াল ইউনিটের দাম ও ন্যাভের গতিবিধির উপর। সুযোগ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে চটজলদি।
গত কাল থেকে শুরু হয়েছে নতুন পরিষেবা কর রাজ। ৩৮টি নির্দিষ্ট পরিষেবা বাদে বাকি সব পরিষেবার উপর দিতে হবে ১২ শতাংশ হারে কর। করের আওতা থেকে যে-সব পরিষেবাকে বাইরে রাখা হয়েছে তার মধ্যে থাকছে: ট্যাক্সি, অটো রিকশা, লটারি, প্রমোদ উদ্যান, পরিবহণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্র। নতুন নতুন ক্ষেত্রে পরিষেবা কর বসায় চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের উপর। চড়া দামের পণ্য পরিষেবার বাজারে বহু পরিষেবার উপর ১২ শতাংশ কর চাপায় বেশি ভুগবেন নীচের তলার মানুষেরা। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে আসায় এক দিকে আয় বৃদ্ধির পথ সঙ্কুচিত, অন্য দিকে নতুন পরিষেবা করও হয়ে উঠতে পারে গোদের ওপর বিষফোড়া!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.