প্রায় তিন দশক আগে রাস্তা পাকা করার অনুমোদন মিললেও কাজ হয়নি। গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, জেলাশাসক থেকে মহকুমাশাসক কোনও স্তরেই আবেদন করতে বাদ রাখেননি। সুরাহা না হওয়ায় রবিবার থেকে তাঁরা সরাসরি আন্দোলনে নেমেছেন।
১৯৮৫ সালের ৮ অগস্ট কালনার বাঘনা পঞ্চায়েতের মাজিদা থেকে আকন্দপুর পর্যন্ত ৪.৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার অনুমোদন দিয়েছিল পূর্ত দফতর। কিন্তু এখনও তা তৈরি হয়নি। ফলে এলাকার সাতটি গ্রাম ফড়িংগাছি, সলগড়া, মাজিদা, কেশবপুর, খাসপাড়া, আকন্দপুকুর ও জেলেপাড়ার বাসিন্দারা রবিবার সকাল থেকে অনশনে বসেছেন।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ১৯৮৫ সালে প্রথমে ২ কিলোমিটার, তার পরে এক কিলোমিটার, তার পরে ফের ১.৩ কিলোমিটার এই তিন ধাপে পাকাপাকি রাস্তা তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। |
শেষ দুটি ধাপের অধিগ্রহণ হয়ে গেলেও প্রথম ধাপের অধিগ্রহণ এখনও হয়নি। ১৯৯৪ সালে রাস্তাটি পাকা করার জন্য ৩১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। একটি ঠিকাদার সংস্থা কাজে হাত দেয়। কিন্তু সবিতা প্রামাণিক নামে এক মহিলা অধিগ্রহণে বাধা দিলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পূর্ত দফতরের কালনা শাখা ফের রাস্তা পাকা করার জন্য প্রায় ১ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা জমা দেয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
গ্রামবাসীরা জানান, কালনা-মেমারি ও কালনা-বর্ধমান রোডের সঙ্গে সংযোগকারী ওই রাস্তা পাকা না হওয়ায় ফড়িংগাছি গ্রামের নান্টুরঞ্জন পালের উদ্যোগে প্রায় তিন হাজার সই সংবলিত স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল থেকে শুরু করে প্রশাসনের নানা মহলে। ফল হয়নি। |
২০০৪ সালে তাঁরা অনশন আন্দোলনের পরিকল্পনা নেন। সে বছর ডিসেম্বরে তৎকালীন জেলাশাসক নান্টুবাবুকে কার্যালয়ে ডেকে রাস্তা তৈরির আশ্বাস দেন। নান্টুবাবু বলেন, “জেলাশাসকের কথায় নিরস্ত হয়েছিলাম। তার পরে ৮ বছর কেটে গিয়েছে। জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, জেলা সভাপতির কার্যালয়ে অনেক বার আবেদন করেছি। কয়েক দিন আগে শেষ বার কালনা মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাই। তিনি রাজি হননি।”
এলাকাবাসীর বক্তব্য, রাস্তার পাশের গ্রামগুলি কৃষিপ্রধান। রাস্তা পাকা হলে কৃষিপণ্য নিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে সুবিধা হবে। গ্রামবাসী অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়, গদাধর সেন, কাঞ্চন কোলেদের বক্তব্য, “এ বার আর মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে আন্দোলন ভাঙব না। কত দিনের মধ্যে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হবে, সেই ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি পেলে তবেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে।” কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলা হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা লিখিত প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন। তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ওঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে।”
|