|
|
|
|
খরচই হয়নি লোধা উন্নয়নে বরাদ্দ টাকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
লোধাদের সার্বিক উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘লোধা সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে গত মার্চে। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। কেবলমাত্র একটি খাতে একশো শতাংশ কাজ হয়েছে। তা হল, সচেতনতা বৃদ্ধির অনুষ্ঠান। অভিযোগ, এই অনুষ্ঠান যেহেতু স্থায়ী কাজ নয়, তাই ওই খাতে সব টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাড়ি-বাগান তৈরি, পানীয় জল প্রকল্প এ সব কাজ হয়নি।
কাজ না হওয়ায় প্রকল্পের সম্পূর্ণ টাকাও পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭-’০৮ আর্থিক বছর থেকে ২০১১-’১২ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৩৭ কোটি ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ১২ কোটি ৪ লক্ষ টাকা দিয়েও দিয়েছিল। ২০১১-১২ আর্থিক বছর শেষে হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, হাতে পাওয়া ১২ কোটি ৪ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র ৬ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা খরচ করা গিয়েছে। পাওনা টাকারই ৫০ শতাংশ অর্থ খরচ করতে না পারায় বাকি টাকা চাওয়া যায়নি। ফলে, উন্নয়নের কয়েক কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হল জেলা প্রশাসন। কেন এমন হল? সদুত্তর নেই প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাদ্দ ১২ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৬ কোটি টাকা ছিল জেলা পরিষদের কাছে। জেলা পরিষদ লোধাদের বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি বললেই চলে। এ বার সেই টাকা ফেরত নিয়েছে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। দফতরের আধিকারিক শান্তনু দাস বলেন, “আমরা এখন দ্রুত গতিতে বাড়ি তৈরির চেষ্টা করছি। যাতে বরাদ্দ টাকার পুরোটাই খরচ করা যায়, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
প্রশাসনের কাজে অবশ্য একেবারেই সন্তুষ্ট নন লোধা সম্প্রদায়ের মানুষজন। প্রশাসনিক উদাসীনতার প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা লোধা শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েক বলেন, “অর্থ থাকা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। প্রশাসনিক কর্তা বা সরকার, কারওরই লোধা সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সদিচ্ছা নেই। কেবল বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নেতারা কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করছেন। তাই ৯ অগস্ট কলকাতার মহাজাতি সদনে ধর্নায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” লোধা শবর উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক সীতেশ প্রামানিকেরও বক্তব্য, “বারবার উন্নয়নের দাবি জানিয়েও সুফল মেলেনি। তাই কোটি কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। আর লোধারা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আমরাও এর প্রতিবাদ জানাতে আন্দোলন গড়ে তুলব।” লোধা সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহ নির্মাণ, গৃহ সংস্কার, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বাচ্চাদের রাখার জন্য ক্রেস তৈরি, সচেতনতা শিবির করা, বাগান তৈরি, সেচের ব্যবস্থা, বিদ্যুদয়ন, লোধাদের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-সহ গুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ৭৮১টি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও ৫ বছরে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫২০টি বাড়ি তৈরি করা গিয়েছে এই প্রকল্পে। ৪২টি বাড়ি সংস্কারের পরিকল্পনা নিলেও একটি বাড়িও সংস্কার হয়নি। ৬০টি পানীয় জলের উৎস সংস্কারের পরিবর্তে হয়েছে মাত্র ১২টি। ২০টি লোধা অধ্যুষিত ব্লকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০০টি পানীয় জলের প্রকল্প তৈরির কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৪৮টি! একশো শতাংশ কাজ হয়েছে বলতে সচেতনতা শিবির। ১১০টি করার কথা ছিল। প্রতিটিই হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই ৫ বছরেও টাকা খরচ করা যায়নি। আবারও একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। যেখানে ৫ বছরে ১৪৩ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে। পানীয় জল প্রকল্প, লোধা আশ্রম, ক্রেস তৈরি-সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। কোনও বছরে ২৮ কোটি তো কোনও বছর ২৯ কোটি টাকার কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সরকার অর্থ দিলেও কাজ হবে তো? নাকি বিগত ৫ বছরের মতোই ফের টাকা পড়েই থেকে যাবে! সময়েই এর জবাব মিলবে। |
|
|
|
|
|