অবশেষে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মেনে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর ভোটে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। শনিবার দার্জিলিঙের পাতলেবাসে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। মোর্চার অন্দরের খবর, বৈঠকে দলীয় সতীর্থদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে গুরুঙ্গ নিজেও জিটিএ ভোটে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। গুরুঙ্গদের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন তিনি ফেসবুক-এ লিখেছেন, “আজ আমাদের খুবই খুশির দিন। আগামী মাসে দার্জিলিঙে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, আমার ভাই-বোনেরা তাতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দার্জিলিং আজ সত্যিই হাসছে। শান্তি ও উন্নয়নের নতুন যুগ শুরু হচ্ছে সেখানে।”
বিধানসভা ভোটে জেতার পরে মমতার চ্যালেঞ্জ ছিল, পাহাড়-জঙ্গলমহলে শান্তিস্থাপন। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কিষেণজির মৃত্যু, জাগরী বাস্কে-সুচিত্রা মাহাতোর আত্মসমর্পণের পরে জঙ্গলমহল তুলনায় অনেকটাই শান্ত বলে দাবি প্রশাসনের। মমতা নিজেও এ দিন ফেসবুক-এ লিখেছেন, “আজ আমার জঙ্গলমহল হাসছে।” মোর্চা পাহাড়ের ভোটে যোগ দিতে রাজি হওয়ায় সেটা মুখ্যমন্ত্রীর আর এক সাফল্য বলে ব্যাখ্যা করছেন অনেকেই। বিশেষ করে বিচারপতি শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরে মোর্চা যে আন্দোলনের কথা বলছিল, তা থেকে শনিবার তারা সরে আসার কথা ঘোষণা করেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলেছে। সেই ‘সাফল্যে’ মুখ্যমন্ত্রীও যে খুশি, সেটা তাঁর ফেসবুক-বার্তা থেকেই স্পষ্ট। |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
আজ আমাদের খুবই খুশির দিন। আগামী
মাসে দার্জিলিঙে যে গণতান্দ্রিক প্রক্রিয়া শুরু
হচ্ছে, আমার ভাই-বোনেরা তাতে অংশ
নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দার্জিলিং আজ সত্যিই
হাসছে। শান্তি ও উন্নয়নের নতুন যুগ শুরু হচ্ছে সেখানে।
|
বিমল গুরুঙ্গ |
|
জিটিএ ভোটে বড় চমক হতে চলেছে গুরুঙ্গের নিজের অংশ নেওয়া-না নেওয়া। শেষ মুহূর্তে কোনও অঘটন না হলে গুরুঙ্গ তাঁর পুরনো নির্বাচনী কেন্দ্র দার্জিলিঙের তাকভর এলাকা থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে মোর্চা সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ভোটে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৭ জন নেতার মধ্যে রোশন গিরি, বিনয় তামাং-সহ অন্তত ১৬ জনের দাঁড়ানোর ব্যাপারেও প্রাথমিক কথাবার্তা এ দিনের বৈঠকে হয়েছে। আজ, রবিবার থেকে পাহাড়ে ভোটের প্রচার শুরু করবে মোর্চা। পাশাপাশি, তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে মোর্চা নেতৃত্ব জানান।
এ দিন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, “সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পরে জিটিএ ভোটে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয় প্রতীক হবে সূর্য।” ওই বৈঠকে উপস্থিত আদিবাসী নেতা জন বার্লা ও তাঁর অনুগামীরা অবশ্য তিন দিন আগেই গরুবাথানে বৈঠক করে ভোটে সহযোগিতা করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
বস্তুত, মোর্চা যে ভোটে যোগ দিতে চলেছে তা গুরুঙ্গদের সাম্প্রতিক নয়াদিল্লি ও কলকাতা সফরের সময়েই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, গুরুঙ্গ ভোটে দাঁড়াবেন কি না, সেই প্রশ্নেই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কারণ, ২০০৮ সালে সুবাস ঘিসিংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পরে গুরুঙ্গ বারেবারেই ঘোষণা করেছেন, পাহাড়ে ক্ষমতার শীর্ষে বসার জন্য তিনি আন্দোলনে নামেননি। এমনকী, ত্রিপাক্ষিক চুক্তির সময়ে তিনি উপস্থিত থাকলেও সই করিয়েছেন রোশন গিরিকে দিয়ে। চুক্তির পরেও পাহাড়ে ফিরে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, জিটিএ-র শীর্ষ পদে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য ভোটে দাঁড়াতে তিনি আগ্রহী নন।
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রের খবর, বৈঠকে গুরুঙ্গের সতীর্থরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার সারাংশ হল, মোর্চা জিটিএ গঠন করতে পারলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুঙ্গকে খুবই দরকার। কিন্তু, গুরুঙ্গ নির্বাচিত না-হলে জিটিএ-র ব্যাপারে সরকারি ভাবে মাথা গলাতে পারবেন না। পক্ষান্তরে, কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক জন নেতা বৈঠকে উল্লেখ করেন, ভোটে না দাঁড়ালেও রাজ্যপালের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে জিটিএ সদস্য হওয়ার অবকাশ রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার দাবি, তখনই গুরুঙ্গ জানান, মনোনীত হিসেবে নয়, তিনি নিজেই ভোটে দাঁড়িয়ে জিততে আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে গুরুঙ্গের প্রাক্তন সতীর্থ তথা জিএনএলএফের এক প্রবীণ নেতার কটাক্ষ, ‘‘দলের অন্য নেতারা অনুরোধ করে গুরুঙ্গের রাজনৈতিক ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।”
সিপিএমের দার্জিলিং কমিটির নেতা তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানান, তাঁরা প্রথম থেকেই পাহাড়ে শান্তি বজায় রেখে ভোট করানোর পক্ষপাতী। তাঁর কথায়, “আমরা গুরুঙ্গদের অনেক বেশি ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলাম। ওঁরা রাজি হননি। এখন রাজি হয়েছেন। এটা ভাল ব্যাপার। পাহাড়ে অবাধ ভোট হলে আমরাও লড়ব।” |