ফাইনাল নিয়ে লিখতে বসে প্রথমেই নিজের ভুলটা স্বীকার করে নিচ্ছি। ইউরোর শুরুতেই আমি লিখেছিলাম, জার্মানি এ বারের চ্যাম্পিয়ন। সেমিফাইনালে আমার মতো অনেক ফুটবল-বিশেষজ্ঞকেই দেখেছি জার্মানির হয়ে বাজি ধরতে। অন্তত নব্বই শতাংশ ফুটবলবোদ্ধা সে দিন বুঝিয়েছিলেন, কেন ম্যাচটা জার্মানি জিতবে। কিন্তু আমরা যে কত বড় ভুল করেছি, সেটা বুঝলাম ইতালির ফুটবলে। আসলে প্রান্দেলির মন্তব্যকে আমরা পাত্তাই দিইনি। উনি কিন্তু বলেছিলেন, “জার্মানির ডিফেন্স ভাল নয়। ওরা ভুগতে পারে।” ম্যাচে সেটা অক্ষরে-অক্ষরে মিলে গেল।
রবিবারের ফাইনাল নিয়েও যে বিশেষজ্ঞদের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু ফুটবল-বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয়ই এ বার অনেক সতর্ক থাকবেন। হুটহাট কিছু বলে বসলে, কে বলতে পারে বিশেষজ্ঞদের পাশে ‘মূর্খ’ বিশেষণটা ফের বসবে না? পাশা উল্টোনোর ভয় তো আবার থাকছে। অনেকে স্পেনকে কিছুটা এগিয়ে রাখছেন দেখছি। কিন্তু ইতালি যদি হিসেব উল্টে ইউরোপ সেরা হয়ে যায়, আমি অন্তত অবাক হব না।
কেন বলছি?
আসলে ইতালিকে আমরা কেউই ধর্তব্যের মধ্যে আনিনি ইউরোর শুরুতে। প্রান্দেলি যে ধীরে ধীরে ইতালির চিরাচরিত ‘কাতানেচিও’ সিস্টেমকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলছেন, কেউই বুঝিনি। গ্রুপের একেবারে প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিরুদ্ধে যে ইতালিকে দেখেছিলাম, সেখানেও আহামরি কিছু খুঁজে পাইনি। তা ছাড়া তখন জার্মানদের ফুটবল নিয়ে তুমুল হইচই চলছে। যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে তখন দাঁড়িয়ে গোমেজ-সোয়াইনস্টাইগাররা। কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। জার্মানিকে চুপ করিয়ে দিয়েছে ইতালি। আমরাও দেখছি, কী ভাবে বদলে গিয়েছে ইতালি ফুটবল। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণের চেনা ছক আর নেই। বদলে আছে শুরু থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা। |
দুই কিপার, দুই অধিনায়ক: গ্রুপ ম্যাচের পরের হাসি। ফাইনালের পর কার মুখে হাসি থাকবে? |
আর সেটা সম্ভব হচ্ছে তিন জনের জন্য। প্রথম জন অবশ্যই আন্দ্রে পির্লো। ম্যাচে একাই একশোর উপর পাস খেলছে। প্রথম মিনিট থেকে মাঝমঠের দখল নিয়ে ফেলছে পির্লো। সেট পিসে ওর মতো দক্ষতাও ইউরোপের আর কোনও ফুটবলারের মধ্যে দেখলাম না। ফ্রি-কিক নেওয়ার কী অদ্ভুত ক্ষমতা! বাকি দু’জন বালোতেলি আর কাসানো। একজন স্ট্রাইকারের পায়ে কতটা শক্তি লুকিয়ে থাকতে পারে, সেটা জার্মানির বিরুদ্ধে বালোতেলির দ্বিতীয় গোলটার সময় দেখেছে ফুটবল দুনিয়া। কাসানোর হেডটা আবার অসম্ভব ভাল।
তা বলে স্পেনকে কি আমি ধর্তব্যের মধ্যে রাখছি না? তা নয়। বরং বলব, স্পেনের বিরুদ্ধে দু’টো ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত প্রান্দেলির। মনে রাখা ভাল, বাকিদের বিরুদ্ধে যে ফাঁকা জায়গাটা পির্লো পেয়ে থাকে, দেল বস্কির টিমের বিরুদ্ধে সে সব হবে না। জাবি-ইনিয়েস্তা-বুসকেতস-জাভি হার্নান্ডেজকে নিয়ে তৈরি স্পেনের মিডফিল্ড সর্বশ্রেষ্ঠ। বলের দখল ওরা ছাড়তে পছন্দ করে না। অসংখ্য পাস খেলে উঠে আসতে চায় বিপক্ষের বক্সে। মুশকিলে পড়তে পারে বালোতেলিও। মনে করে দেখুন, জার্মানির বিরুদ্ধে দু’টো গোলই ও কিন্তু ফাঁকায় করে গিয়েছে। বাডস্টুবারের মতো অনভিজ্ঞ ডিপ ডিফেন্ডার স্পেনে নেই। ওকে সামলানোর জন্য কিন্তু থাকবে জেরার পিকে। সের্জিও রামোস। তা ছাড়া পরপর দু’ম্যাচে বিধ্বংসী ফুটবল খেলা বালোতেলির পক্ষে একটু কঠিন।
কিন্তু এটাও সত্যি যে, স্পেনে একটা ‘বালোতেলি’ নেই। তোরেসের অফ ফর্ম, ভিয়া ইউরোয় নেই। তার উপর লড়তে হবে বুফোঁর মতো কিপারের বিরুদ্ধে। যে এই মধ্য তিরিশেও দুনিয়ার এক নম্বর কিপার। নেতৃত্বেও কাসিয়াসের চেয়ে এগিয়ে বুফোঁ। কাকতালীয় মনে হতে পারে। কিন্তু আরও একটা তথ্য দিই। যখনই গড়াপেটার কেলেঙ্কারি আছড়ে পড়ে ইতালি ফুটবলে, তখনই কিন্তু ওরা কিছু না কিছু করে দেখায়। উদাহরণ১৯৮২ বিশ্বকাপ। যেখানে ইতালি চ্যাম্পিয়ন। উদাহরণ২০০৬ বিশ্বকাপ। ইতালি আবার চ্যাম্পিয়ন। উদাহরণ২০১২ ইউরো। আপাতত ফাইনালিস্ট।
তাই বলছি, যাঁরা ফাইনালে স্পেনের দিকে বাজি রাখছেন ৫৫-৪৫, তাঁদের বলি ওটা মোটেও তা নয়। ম্যাচটা ৫০-৫০।
|
ইউরো ফাইনাল
স্পেন বনাম ইতালি
(১২-১৫) |
মার্কশিট |
স্পেন |
ইতালি |
• কাসিয়াস ৭
•আলবা ৮
• রামোস ৮
• পিকে ৮
• আর্বেলোয়া ৭
• আলন্সো ৮
• বুস্কেতস ৭
• জাভি ৮
• ইনিয়েস্তা ৯
• সিলভা ৭
• ফাব্রেগাস ৮ |
• বুফোঁ ৮
• চেলিনি ৮
• বোনুচ্চি ৭
• বার্জাগ্লি ৭
• বালজারেত্তি ৭
• পির্লো ৯
• দে রোসি ৭
• মন্তোলিভো ৭
• মার্চিসিও ৭
• কাসানো ৭
• বালোতেলি ৯ |
মোট |
|
৮৫ |
৮৩ |
|
|
• পরীক্ষক আর্মান্দো কোলাসো |
|