কোন জুটি জিতল? ‘জয়-রাধা’র ছেলের বিয়ে পাঁচ বছর আগে দেখেছিল মুম্বই। মেয়ের বিয়েতে ‘বীরু-বসন্তী’ তাঁদের টেক্কা দেবেন কি? আরব সাগরের পারে আজকের রাতটা এই হিসেব কষতেই কাটবে।
তবে আয়োজনের সম্ভারে ‘বসন্তী’ হেমা সম্ভবত এগিয়েই যাবেন। অভি-অ্যাশের বিয়েতে এত এলাহি আয়োজন ছিল না বলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের মত! এক সপ্তাহ ধরে ‘সঙ্গীত’-‘মেহন্দি’ তার পর ইস্কন মন্দিরে বিয়ে। আর, আজ ভোজসভা! গোটা মুম্বই মাতিয়ে রেখেছে দেওল পরিবার। আমন্ত্রিতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। দিলীপ কুমার থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অমিতাভ থেকে রেখা, রানি-কাজল থেকে বিদ্যা বালান, আমজাদ আলি থেকে সলমন খান, জিতেন্দ্র থেকে জিনাত আমন কে নেই সেখানে? এক আসরে উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরে, সুশীল শিন্ডে এবং নারায়ণ রানে, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ থেকে অমর সিংহ, নিতিন গডকড়ী থেকে সুরেশ কলমডী, কোকিলাবেন থেকে বেণুগোপাল ধুত এমন মহাসমাগম সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে কি?
বচ্চনরা ছেলের বিয়েটা মূলত একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানেই বেঁধে রাখতে চেয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল নিয়ন্ত্রিত। বলিউড থেকে আমন্ত্রণও পেয়েছিলেন বাছাই কয়েক জনই। |
বিয়ের আসরে ভরত-এষা। ফাইল চিত্র |
এষার বিয়েতে কিন্তু হেমা এক সপ্তাহ ধরে ঢালাও উৎসবের মেজাজে মুড়ে রেখেছেন বি-টাউনকে। না, কারও সঙ্গে টক্কর দেওয়ার অভিপ্রায়ে নয়। এ আসলে ‘স্বপ্নসুন্দরী’র স্বপ্ন পূরণ! মেয়ের বিয়ে নিয়ে তিরিশ বছর ধরে একটা স্বপ্ন লালন করে এসেছেন হেমা। আর সেই স্বপ্নের পিছনে রয়েছে তাঁর বড় গোপন ব্যথা! “আমার সে ভাবে ধুমধাম করে বিয়ে হয়নি তো! যখন আমাদের বিয়ে হল, তখন বেশি বন্ধুবান্ধবও ছিল না। চেয়েছিলাম, এষার বিয়েতে সেরার সেরাটা দিতে।”
সত্তরের দশকে বলিউডে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন হেমা মালিনী! সঞ্জীব কুমার থেকে জিতেন্দ্র, সকলেই তাঁর প্রেমে পাগল। ‘তুম হসীন ম্যায় জওয়ান’ ছবির শু্যটিং থেকেই ধর্মেন্দ্রও তাঁর প্রতি অনুরক্ত। তিনি অবশ্য তখন বিবাহিত পুরুষ। সেই কারণে হেমা প্রথম দিকে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধান্বিত ছিলেন। ‘শোলে’র শু্যটিং চলাকালীন তিনি অবশেষে মনস্থির করেন। কিন্তু ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদে রাজি ছিলেন না। শোনা যায়, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে দু’জনে বিয়ে করেন ১৯৮০ সালে। প্রিয়জনেরা অনেকেই পাশে থাকেননি, তেমন জাঁকজমকও হয়নি। সেই আক্ষেপ হেমার থেকে গিয়েছে গোটা জীবন।
হীরে ব্যবসায়ী ভরত তাখতানির সঙ্গে এষার বিয়ে হয়ে গিয়েছে গত কাল। আজ মায়ানগরীর পাঁচতারা হোটেল নীল আর সাদায় সেজে উঠেছে ‘দশক-সেরা’ ভোজসভার নজির হয়ে থাকতে। কাল বিয়েতেই ছিলেন সপুত্র অমিতাভ বচ্চন, কোকিলাবেন, নীতা অম্বানী, রানি মুখোপাধ্যায়রা, বৈজয়ন্তীমালা, মনোজ কুমাররা। আজ রেড কার্পেট ধরে হেঁটে এলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, ধর্মগুরু রবিশঙ্কর, বেণুগোপাল ধুত, অরুণ জেটলি, সকন্যা সুুষমা স্বরাজ, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, ছগন ভুজবল, রাজ ঠাকরেরা। হেমা-ধর্মেন্দ্র দুজনেই বিজেপি শিবিরের। ফলে বিজেপি বা শিবসেনার হেভিওয়েট নেতারা আসবেন, সেটা জানা কথাই। এ দিন কিন্তু মুখ ফিরিয়ে থাকেনি কংগ্রেস, এনসিপি, এমএনএস শিবিরও। ‘মেয়ের মা’ হেমার জাদু এমনই!
এলেন দিলীপকুমার-সায়রা বানু, কাজল-তনুজা, বিদ্যা বালান, সুভাষ ঘাই, আমজাদ আলি খান, সস্ত্রীক অনুপম খের, জিনাত আমন। সপরিবার জিতেন্দ্রও এলেন। ভোজসভায় নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন সলমন খানের লোকজন। রাত সোয়া দশটা নাগাদ সলমন নিজেও এলেন। সলমনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়ানোর জন্যই শাহরুখ খান আসবেন না বলে খবর। অমিতাভ বিয়েতেই এসেছিলেন, এ দিন রেখা এলেন। অল্প ক্ষণ থাকলেন।
আরও এক জন আসেন কি না, সে দিকেও সকলের নজর ছিল। তিনি ধর্মেন্দ্রর প্রথম পক্ষের বড় ছেলে সানি দেওল। বিদেশে থাকায় ববি আসবেন না, জানাই ছিল। ‘সঙ্গীত’ থেকে ‘মেহন্দি’, দেখা যায়নি ধর্মেন্দ্রকে। গত কাল ইস্কন মন্দিরে বিয়েতে অবশ্য সকলের সামনে আসেন ধরমজি। এ দিনও তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। ফলে পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের ছাপ পুরোটা এড়ানো গেল না। হেমা নিজে যদিও পরিবারের এই কূটকচালি নিয়ে চিন্তিত নন। বললেন, “আমার তো ভরতকে গোড়া থেকেই পছন্দ। কিন্তু বিয়ের অনুমতি দিলেন এষার বাবাই। বিয়েতে কী পরবে, কী সাজবে, আমার থেকে ওর বাবার উৎসাহ কম নয়।”
কাল বিয়ের পর সন্ধ্যায় কন্যাবিদায় হয়েছে। আজ মেয়ে-জামাইকে আর এক বার কাছে পাওয়ার সুযোগ। তার পরেই হনিমুনে পাড়ি দেবেন নতুন দম্পতি। চার দিকে উচ্ছ্বাসের মধ্যেও একটু যেন থম মেরে আছেন হেমা। জিজ্ঞেস করলেই বলছেন, “শি ইজ মাই বেবি। মায়ের কোল থেকে মেয়েরা দূরে গেলে তো কষ্ট হয়ই!” চোখ ভরে আসে মায়ের, “স্বস্তি একটাই। পাশেই বান্দ্রায় থাকছে। ইচ্ছা হলেই দেখা করতে ছুটে যাব...।” চোখের কোণে এ বারে অশ্রুবিন্দু ঝিলিক দিয়ে ওঠে এ বার।
বাইরে তখন অঝোর বৃষ্টি। |