এক সময়ে সিপিআই কংগ্রেসকে সমর্থন করায় তাঁদের সংস্পর্শ ত্যাগ করেছিল সিপিএম। আর আজ একই অভিযোগ তুলে সিপিএমের সমালোচনায় মুখর হয়েছে সিপিআই। জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গাঁধীকে সমর্থনের ‘ঐতিহাসিক বোঝা’ ঘাড় থেকে নামাতে সিপিআই এখন এতটাই মরিয়া যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সিপিএমের সমর্থনের সিদ্ধান্তকে ‘বালখিল্য-সুলভ’ বলতেও ছাড়ছে না তারা।
সিপিআই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও, ইউপিএ প্রার্থী প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট যুক্তি দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে রাজ্য নেতৃত্বের সুবিধা করে দিতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। কারাটের এই সিদ্ধান্তকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি। তিনি বলেন, “জাতীয় স্তরের একটা নির্বাচনে শুধুমাত্র একটি রাজ্য-কেন্দ্রিক অবস্থান নেওয়াকে বালখিল্য-সুলভ বললেও কম বলা হয়।”
প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কারাট অবশ্য এর আগেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা প্রসেনজিৎ বসুই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে দল ছেড়েছেন। অস্বস্তিতে পড়ে দলীয় মুখপত্রে কলম ধতে হয়েছে কারাটকে। নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় তিনি যুক্তি দিয়েছেন, শাসক জোটের বুর্জোয়া দলগুলির মধ্যে এই বিরোধ ও বিভেদকে ব্যবহার করা প্রয়োজন। তৃণমূল কংগ্রেস যে হেতু এখনও প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই অবস্থায় সিপিএম প্রণবকে সমর্থন করলে দুই শিবিরের মধ্যে ফাটল আরও বাড়বে বলেই কারাট মনে করছেন। কিন্তু কারাটের মতকে খারিজ করে সুধাকরের প্রশ্ন, তা হলে তৃণমূল খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করছে বলে কি বামেরা তাকে সমর্থন করবে?
সিপিআইয়ের মতো সিপিএমও কেন ভোটদানে বিরত থাকার রাস্তায় হাঁটল না? এই প্রশ্নে কারাটের যুক্তি ছিল, ভোটদানে বিরত থাকলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতার পথ অনুসরণ করা হত। জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া হত। কারাটের নাম না করে সেই প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন সুধাকর। তাঁর বক্তব্য, “প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় ভোটদানে বিরত থাকাটাই একমাত্র বিকল্প।” যদিও সেটা ‘খুব একটা কাম্য নয়’ বলেই মনে করেন সুধাকর। তাঁর মতে সব থেকে ভাল হত যদি বামেরা অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির সমর্থন নিয়ে নিজেদের বিকল্প প্রার্থী খাড়া করত।
সিপিআই সূত্রের খবর, ফ্রন্টের বড় শরিকের থেকে পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখতে দলকে এখন পৃথক অবস্থান নিতে হচ্ছে। বাম, বিজেপি, এমনকী কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনকেও সঙ্গে নিয়ে মনমোহন সরকারের উদার নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ছে দলের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি। এই অবস্থায় প্রণববাবুকে যাতে সমর্থন না করা হয়, সে বিষয়ে এ বি বর্ধন-সুধাকর রেড্ডির উপরে চাপ তৈরি করেছিলেন এআইটিইউসি নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত।
অবশ্য এই ভিন্ন মতের ফলে বাম ঐক্যে ফাটল ধরবে না বলেই যুক্তি দিচ্ছেন সুধাকর রেড্ডি। তাঁর বক্তব্য, “সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়েও সিপিআইয়ের ভিন্ন মত ছিল। কিন্তু কখনওই তাকে বামফ্রন্ট ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা হয়নি।” |