এ বারও রাজ্যের ৩১টি দফতরের বাজেট শেষ পর্যন্ত বিধানসভায় কোনও আলোচনা ছাড়াই গিলোটিনে যাচ্ছে। বিধানসভার দফাওয়াড়ি অধিবেশনের মেয়াদও কমিয়ে তা শেষ করা হচ্ছে আগামী ৫ জুলাই। যে বিভাগগুলির বাজেট কোনও আলোচনা ছাড়াই পাশ করিয়ে নেওয়া হবে ঠিক হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীন চারটি দফতর সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা, পার্বত্য বিষয়, ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং তথ্য-সংস্কৃতি। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রত্যাশিত ভাবেই সরব বিরোধী বামফ্রন্ট। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার ১৩ মাস পরেও সরকারের ‘ভয়-ভীতি’ কাটছে না!
প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, বিধানসভার দফাওয়াড়ি বাজেট অধিবেশন চলবে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত। কিন্তু শুক্রবার বিধানসভায় কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়, অধিবেশনের মেয়াদ কমিয়ে আনা হবে ৫ তারিখ (আগামী বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত। তার মধ্যে ৩ তারিখ পর্যন্ত চলবে দফতর ভিত্তিক বাজেট-বিতর্ক, ৪ তারিখে বাজেটের অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিল। ৫ তারিখ রাখা হয়েছে নতুন বিল আনার জন্য। সময়াভাবের জন্যই ৩ তারিখ এক ঘণ্টার মধ্যে ৩১টি দফতরের বাজেট আলোচনা ছাড়াই পাশ করিয়ে (যাকে পরিভাষায় ‘গিলোটিন’ বলে) নেওয়া হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছু সময় বার করার জন্য আজ, শনিবার অধিবেশন চালু রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেই দুই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন বিরোধীরা। পরে বিধানসভায় এই নিয়ে ভোটাভুটি দাবি করেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। সূর্যবাবুদের বক্তব্য, শনিবার বিধানসভার অধিবেশন আগেও হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে সে কথা জানালে সমস্যা হয়। কারণ অনেক বিধায়কেরই নিজেদের এলাকায় ফেরার ব্যবস্থা করা থাকে। তাদের যুক্তি না-মানার প্রতিবাদে আজ, শনিবার অধিবেশনে অংশ নেবে না বিরোধী বামফ্রন্ট।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছরই বেশ কিছু দফতরের বাজেট গিলোটিনে তোলায় বিতর্ক বেধেছিল। সে বার ওই তালিকায় পুলিশ এবং স্বাস্থ্যের মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (দু’টিই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে) দফতরও ছিল। এ বার অবশ্য পুলিশ বাজেট হয়ে গিয়েছে এ দিনই। স্বাস্থ্য বাজেট নির্ধারিত ৩ তারিখ। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অধীনস্থ সংখ্যালঘু, পার্বত্য বিষয়ক, ভূমি দফতর ছাড়াও পরিবহণ, আবাসন, শ্রম, দমকল, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, সমবায়, তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের বাজেট নিয়ে বিতর্ক হবে না। বিধানসভার অধিবেশন কেন ছোট করে আনা হল? সরকারি ভাবে কোনও কারণ দেখানো হয়নি। তবে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর জন্য সমর্থন চাইতে বিধানসভায় এসে বাম ও কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বৈঠক করার কথা ৯ জুলাই। তার আগেই বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ করে কৌশলে প্রণববাবুর সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কদের ‘আচমকা মোলাকাতে’র সম্ভাবনাও রদ করে দেওয়া হল!
কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সভায় জানিয়ে স্পিকার বিরোধীদের দাবি খারিজ করে বলেন, এই ব্যাপারে ভোটাভুটির কোনও নজির নেই। পরে সূর্যবাবু বিধানসভার কার্য বিবরণী দেখিয়ে পাল্টা দাবি করেন, ১৯৭৮ সালের ৪ মে কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না! আমাদের বক্তব্য মানবেন না বলে ওঁরা অদ্ভুত সব যুক্তি দেখাচ্ছেন। আবার এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের বাজেট গিলোটিনে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ভয়-ভীতি আর কাটছে না!”
অধিবেশনের প্রথমার্ধে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য পূর্বনির্দিষ্ট পুলিশ, পার্বত্য বিষয়ক ও স্বাস্থ্য দফতরের বেশ কিছু প্রশ্ন বাতিল হওয়ার প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা। সূর্যবাবু ফের অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ‘ভয়’ পাচ্ছেন! পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “যিনি সিপিএমের মোকাবিলা করেছেন, মানুষের রায় পেয়েছেন, তাঁর আবার ভয় কীসের? বিরোধীরাই মুখ্যমন্ত্রীর মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছেন!” |