উত্তর কলকাতা
পাখি-বাজার
খাঁচায় আইন
পাহাড়ি ময়না। দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। চন্দনা বারোশো টাকা জোড়া। টিয়া ছ’শো থেকে শুরু করে আটশো টাকা পিস। পাওয়া যায় আরও নানা ভারতীয় পাখি। রয়েছে টিয়ার সমগোত্রীয় মদনা, বাবুই, বুলবুলি, বসন্ত বউরি, বেনে বউ, লাল মুনিয়া, নীলকণ্ঠ, বাজ, হুতোম প্যাঁচা, লক্ষ্মী প্যাঁচা। অথচ, ১৯৭২ সালের ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ভারতীয় সমস্ত পাখি বিক্রিই নিষিদ্ধ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেই দফতরের অফিসার এবং পুলিশি নজরদারির ফাঁকে অভিনব কায়দায় ভারতীয় পাখি বিক্রি হচ্ছে উত্তর কলকাতার গ্যালিফ স্ট্রিটের পাখি-বাজারে।
এক সময় এই বাজারে ভারতীয় পাখি ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে এসে বিক্রি করতেন বিক্রেতারা। কিন্তু, এখন পাল্টে গিয়েছে সেই কৌশল। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দফতরেরই সচেতনতা বাড়ানোর পোস্টারে আঁকা ভারতীয় পাখির ছবি দেখিয়ে এক শ্রেণির বিক্রেতা ক্রেতাদের কাছ থেকে জেনে নেন কোন পাখি চাই। আর তার পরই পুলিশের চোখ এড়িয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছে যায় পছন্দমতো পাখি।
প্রতি রবিবার সকাল থেকেই গ্যালিফ স্ট্রিটে বসে নানা পাখি-সহ বিদেশি কুকুর, খরগোশ নিয়ে পাখি বাজার বা সুখের বাজার। গ্যালিফ স্ট্রিটের রাস্তার দু’ধারে বাজারটি বসে। পাখির বাজারে খুব সকাল থেকে বিভিন্ন পাখির সম্ভার নিয়ে যেমন বিক্রেতারা হাজির হন, তেমনই কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাখি বা কুকুর, খরগোশ কিনতেও এখানে জড়ো হন প্রচুর মানুষ। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ দফতরের পদস্থ আধিকারিকের কথায়, কেউ কেউ রংবাহারি পাখির রূপ দেখে পাখি কেনেন পুষবেন বলে। কেউ বা আবার কথা বলা পাখি, চন্দনা বা ময়না রাখতে চান বাড়িতে। তাই ভারতীয় কথা বলা পাখির চাহিদা থাকায় বিক্রেতারাও চোরাপথে জোগাড় করেন এ সব পাখি। খাঁচায় ভারতীয় পাখি রাখা নিষিদ্ধ হলেও এই সব পাখির বোল শুনতে চাহিদা রয়েই গিয়েছে। রয়ে গিয়েছে লুকিয়ে বিক্রি করার মানসিকতাও।
গত কয়েক মাস ধরেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দফতর প্রতি রবিবার এই বাজারে নজরদারি জোরদার করেছে বলে জানা গিয়েছে। তাই বিক্রেতারাও অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু তাই বলে ভারতীয় পাখি বিক্রি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যান্য পাখি বিক্রেতার সঙ্গেই থাকেন ভারতীয় পাখির বিক্রেতারাও। বাজারে তাঁরা সাধারণত খাঁচা বিক্রি করেন। কিন্তু অন্য পাখি বিক্রেতাদের কাছে টিয়া, চন্দনা, বুলবুলি বা ময়না জাতীয় পাখির কথা জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা এই বিক্রেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এর পর বিভিন্ন ভারতীয় পাখির ছবি দেখিয়ে ক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কী পাখি কিনতে চান তাঁরা। শুরু হয় দরাদরি। পাখি নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানালে পুলিশি নজরদারি এড়াতে বিক্রেতারা সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে নিয়ে যান কাছাকাছি অন্য জায়গায়। সেখানেই চলে কেনাবেচা।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায় জানা গেল, ভারতীয় পাখি বিক্রির সময় ধরা পড়লে সাত বছর পর্যন্ত জেল এবং পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। একই আইন প্রযোজ্য ক্রেতাদের ক্ষেত্রেও। ওই আধিকারিক স্বীকার করেন, গ্যালিফ স্ট্রিটের এই পাখি বাজারে গত কয়েক মাস ধরে নজরদারি চালানো হলেও এই সব পাখির বিক্রি বন্ধ হয়নি।
ওই দফতরের বিভাগীয় বনাধিকারিক (সদর) শুভময় চন্দ বলেন, “বন দফতরের সচেতনতা বাড়ানোর কাগজ নিয়ে কিছু লোক যে বেআইনি ভাবে পাখি বিক্রি করছে তা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা পাখি রাখার অন্য জায়গা থেকে বেশ কয়েক বার পাখি উদ্ধারও করেছি।” তিনি জানান, বন দফতর কাগজগুলি পরিবর্তন করে দেবে যাতে এ উপায়ে বিক্রি বন্ধ হয়।
শ্যামপুকুর থানা সূত্রে বলা হয়, প্রতি রবিবারই এই বাজারে পুলিশি টহলদারি চলে। নিষিদ্ধ পাখি বিক্রি হলে পুলিশের কাছেও অভিযোগ আসে। তবে সম্প্রতি কোনও অভিযোগ আসেনি।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.