পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
আশ্বাস
দুঃস্থ কেন্দ্র
হু দিন বন্ধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। দরজা, জানলা ভেঙে পড়েছে। খসে পড়ছে চাঙড়ও। এমনই অবস্থা দমদম পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মতিঝিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোয়ার্টার্সের মধ্যে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের দমদম আদর্শ শ্রমিকমঙ্গল কেন্দ্রটির।
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় ৪০ বছর আগে রাজ্য আবাসন দফতরের জমিতে কেন্দ্রটি তৈরি হয়। দায়িত্বে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ দফতর। এই কেন্দ্রে নাচ, গান, ব্যায়াম, সেলাই, ইনডোর গেম শেখানো হত। মতিঝিল হাউজিং এস্টেট-সহ দমদম এলাকার শ্রমিক পরিবারের ছোটরা শিখতে আসত। শ’চারেক দর্শক আসনের প্রেক্ষাগৃহে বছরে দু’এক বার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৩-৪ বছর আগেও এখানে ব্যায়াম শেখানো হত। তার পরে পর্ষদ হঠাৎ এই ভবনটিকে বিবাহ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া শুরু করে। গভীর রাত পর্যন্ত মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান চলত। আবাসিকদের শৌচাগারগুলিও ব্যবহার করা হত। এর পরে মতিঝিল হাউজিং এস্টেটের টেনান্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন পর্ষদে অভিযোগ করলে এ সব বন্ধ হয়। এর পরে অ্যাসোসিয়েশন ভবনটিকে বাণিজ্যিক ভাবে লিজ নিতে চাইলেও পর্ষদ রাজি হয়নি।
অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কেন্দ্রটির এখন বেহাল দশা। বেহাল অবস্থা প্রেক্ষাগৃহটিরও। অভিযোগ, কয়েক বছর আগে পর্ষদের পক্ষ থেকে ভবন মেরামতির জন্য পিলার নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু পুরসভার অনুমোদন ছিল না বলে অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করলে নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কেন্দ্রটির জানালা, দরজা ভেঙে পড়েছে। চাঙড় খসে পড়ছে। প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে জল ঢুকে যাচ্ছে। ভবনটি দেখাশোনার দায়িত্বে এক জন আবাসিক কেয়ারটেকার রয়েছেন। রয়েছেন এক জন ইনচার্জও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কেন্দ্রটি এখন ভুতুড়ে বাড়ির মতো। কেয়ারটেকার রঞ্জিত নস্কর বলেন, ‘‘ভবনটির দীর্ঘ দিন মেরামতি হয়নি। চারপাশ ভেঙে পড়ছে। বর্ষায় খুব খারাপ অবস্থা হয়।’’ মতিঝিল হাউজিং এস্টেট টেনান্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কল্লোল ভঞ্জ বলেন, “উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই ভবনটির বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার শুরু হয়। ফলে, আবাসিকদের নানা সমস্যা হতে থাকে। আমরা পর্ষদকে উপযুক্ত পরিকাঠামো না গড়ে বাণিজ্যিক কাজে ভবনটিকে ভাড়া না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। পর্ষদ মেনে নেয়। পাশাপাশি পর্ষদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ভবনটিকে ব্যবহারের জন্যও মৌখিক ভাবে অনুরোধ করেছিলাম। এতে সরকারের রাজস্ব আসত। আমাদেরও সমস্যা হত না। কিন্তু পর্ষদ রাজি হয়নি।”
স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের সুস্মিতা বিশ্বাস বলেন, “হাউজিং বিভাগের জমিতে নির্মিত এই ভবনটি শ্রম দফতরের। তাই শ্রম দফতরের অনুমতি ছাড়া পুরসভা ওই ভবনের কোনও মেরামতি করতে পারে না। ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। মেরামতি করে এটিকে আবার সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রে পরিণত করা যায়।” রাজ্য আবাসন দফতরের কনস্ট্রাকশন ডিভিশন ৭-এর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পার্থ শিকদারের বক্তব্য: “শ্রমিকমঙ্গল কেন্দ্রটি বহু পুরনো। আমাদের কাছে কোনও সরকারি নির্দেশ নেই। জমি আবাসন দফতরের হলেও বাড়িটি আবাসন দফতরের নয়।”
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “ওই কেন্দ্রটি সম্পর্কে খুব সম্প্রতি জানতে পেরেছি। আমি পরিদর্শনে যাব। তার পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব।”

ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.