পূর্ব কলকাতা
পরিবর্তন
রং বদলে যায়
কেউ বলতেন বিধাননগরের ‘হোয়াইট হাউস’। কারও কাছে বিধাননগরের মহাকরণ।
১৭ বছর ধরে এ বাড়ির এমনই পরিচিতি। এ বার সাদা-নীলে সেজে উঠছে সেই বাড়ি, বিধাননগর পুরভবন। তবে শুধু পুরভবনই নয়, গোটা বিধাননগরই সাদা-নীলে সেজে উঠছে। এর পাশাপাশি ফুটপাথ এবং আইল্যান্ড সংস্কার, দৃশ্যদূষণ কমাতে নতুন ভ্যাটের পরিকল্পনা, বুলেভাডের্র সৌন্দর্যায়ন এবং বাহারি ত্রি-ফলা আলো বসানোর কাজও চলছে।
পুর-কর্তৃপক্ষের মতে, আর্থিক বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পর্যায়ক্রমে সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ ও পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। সব মিলিয়ে এই খাতে কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। এই প্রকল্পে প্রাথমিক ভাবে ফুটপাথের সংস্কার করা হচ্ছে। ফুটপাথ জুড়ে রং-বেরঙের পেভার বসানো হয়েছে। চলছে আইল্যান্ডগুলির সংস্কারের কাজ। সুদৃশ্য রেলিং, ভাস্কর্য, বাহারি গাছে সেজে উঠছে বিধাননগরের বিভিন্ন আইল্যান্ড। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, “ধীরে ধীরে সব আইল্যান্ডেরই সংস্কার করা হবে।” পুরসভা সূত্রে খবর, একটি আইল্যান্ড সংস্কারে খরচ হচ্ছে আড়াই লক্ষ টাকার কিছু বেশি।
এই প্রচেষ্টা নিয়ে বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। কেউ খুশি। কারও মতে, আগে জরুরি পরিষেবার সমস্যা মিটিয়ে পরে এই কাজে হাত দেওয়া উচিত ছিল। আবার কারও মতে, এতে বিধাননগরের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ঢাকা পড়ছে। কর্মসূত্রে বিধাননগরে দীর্ঘদিনের যাতায়াত হাতিবাগানের গোবিন্দ সরকারের। তিনি বলেন, “আগে আইল্যান্ডগুলি এক রকম দেখতে ছিল। এখন দেখতে ভালই লাগছে। তবে বিজ্ঞাপন বসালে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।” আর এক নিত্যযাত্রী আশিস রায়ের কথায়: “আইল্যান্ডগুলি একই ভাবে সাজালে চেনার অসুবিধা হবে।”
ফুটপাথ কিংবা আইল্যান্ড সংস্কারের পাশাপাশি বুলেভার্ডে ত্রি-ফলা আলো লাগানো, ছোট-বড় গাছ বসানো, বুলেভার্ডের নীচের অংশে সাদা-নীল রং করা হচ্ছে। গাড়িচালকদের একাংশের মতে, সাদা-নীল রং বেশ চোখে পড়ছে। আবার গাড়িচালকদের আর এক অংশের মতে, সাদা-কালো বা হলুদ-কালো হলে ভাল হত। পুরভবনের রং নীল-সাদা হলেও অফিসপাড়া বা অন্য্যান্য সরকারি ভবনে আপাতত নতুন রং হচ্ছে না। বাসিন্দাদের দাবি, সামঞ্জস্য বজায় রেখে সৌন্দর্যায়ন হোক। সিএ ব্লকের বাসিন্দা অমিতাভ মজুমদার বলেন, “প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সব ক’টি ওয়ার্ডে সমতা মেনে কাজ না হলে পরিকল্পনা বিফলে যাবে।”
সৌন্দর্যায়নের আর একটি সমস্যা হল, আবর্জনাপূর্ণ ভ্যাট এবং যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার প্রবণতা। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, “জঞ্জাল সাফাই এবং সৌন্দর্যায়ন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। দৃশ্যদূষণ কমাতে ভ্যাটগুলিকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়েছে।” বাসিন্দাদের একটি সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বললেন, “ভাল চেষ্টা। তবে শহরকে সুন্দর রাখতে বাসিন্দাদেরও পুরসভাকে সাহায্য করতে হবে।”
এই প্রকল্পের পাশাপাশি, এফই ব্লকে একটি পাঁচ তলা ভবন তৈরি করা হচ্ছে বলে পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। সেখানে একটি এক হাজার এবং একটি আড়াইশো আসনের প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হবে। এ ছাড়া একটি রবীন্দ্র-সংগ্রহশালা এবং একটি মুক্তমঞ্চও গড়ে তোলা হবে। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “বিধাননগরের যেহেতু আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাই এখানে একটু অন্য রকম সৌন্দর্যায়ন করার প্রয়োজন ছিল। তবে টাকার অভাব রয়েছে বলে এক বারে সব কাজ না করে ভাগে ভাগে সারা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্র সংগ্রহশালা-সহ ওই ভবনটির নাম রেখেছেন ‘রবীন্দ্রঅঙ্গন’।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.