সম্পাদকীয় ১...
অহেতুক তরজা
বিরোধী দলনেতা স্বপ্রবৃত্ত হইয়া প্রধানমন্ত্রীর সহিত কোনও একটি বিষয়ে আলোচনা করিতে চাহিতেছেন, এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করিবার সৌভাগ্য ভারতবাসীর সাম্প্রতিক কালে হয় নাই। শাসক ও বিরোধী এই দেশে সর্বার্থেই প্রতিপক্ষ। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিপঙ্গুত্বের ইহা নিঃসন্দেহে একটি বড় কারণ। এই অবস্থায় বিরোধী দলনেতা যখন বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহিত একটি বিষয়ে আলোচনা করিতে ইচ্ছুক, তখন অনুমান করা যাইতে পারে, বিষয়টি নিশ্চয়ই দেশের অর্থনীতির গতিভঙ্গ, লোকপাল বিল, প্রশাসনিক দুর্নীতি বা এই গোত্রের আর সব বিষয় অপেক্ষা অধিক জরুরি। কিন্তু হায়! অলিম্পিকসে লিয়েন্ডার পেজ যেন তাঁহার পছন্দের খেলোয়াড়ের সহিত জোড় বাঁধিতে পারেন, তাহা নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে লালকৃষ্ণ আডবাণী মনমোহন সিংহ-সমীপে দরবার করিবেন। ভারতীয় টেনিস লইয়া অহেতুক তরজাটি গত কয়েক দিনে এমনই জমিয়া উঠিয়াছে যে তাহার সমাধানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরস্পরের সহিত বৈঠকে বসিলেও বুঝি অবাক হইবার কারণ থাকিবে না!
যাঁহারা এই কুনাট্যের মূল কুশীলব, অর্থাৎ যাঁহারা পরস্পরের সহিত খেলিতে চাহিয়া বা না-চাহিয়া স্বর ক্রমেই উচ্চগ্রামে চড়াইতেছেন, টেনিসের আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তাঁহারা অকিঞ্চিৎকর চরিত্রমাত্র। কারণ, তাঁহারা যে খেলাটিতে দক্ষতা অর্জন করিয়াছেন, টেনিসের আধুনিক দুনিয়ায় সেই ‘ডাবলস’-এর কোনও কদর নাই। এই খেলায় যাঁহারা ভুবনবিখ্যাত, তাঁহারা প্রত্যেকেই ‘সিঙ্গলস’-এ দক্ষতার কারণেই খ্যাত। সিঙ্গলস-এই অর্থ, তাহাতেই যশ। ইতিহাসকে সম্পূর্ণ কুলার বাতাস দেওয়া যায় নাই বলিয়া ডাবলস এখনও বিলুপ্ত হয় নাই। ভারতের আকাশে যাঁহারা টেনিসের মহাতারকা, তাঁহারা সিঙ্গলস-এর দুনিয়ায় কার্যত অস্তিত্বহীন। অবশ্য, ডেভিস কাপ নামক প্রতিযোগিতায় তাঁহারা পরিচিত নাম। তাহার প্রধান কারণ, বিশ্বের তাবড় খেলোয়াড়রা এই প্রতিযোগিতাটিকে গুরুত্ব দেন না। হয় তাঁহারা খেলেন না, আর খেলিলেও রাখিয়া-ঢাকিয়া, অর্থাৎ যথেষ্ট শ্রমশক্তি ব্যয় না করিয়া এবং, আক্ষরিক অর্থেই, গা বাঁচাইয়া। ফলে, ডেভিস কাপের মাপকাঠিতে কোনও খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিচার করা অর্থহীন। প্রশ্ন হইল, এমন অকিঞ্চিৎকর এই খেলা লহিয়া সকলে মাতিয়া উঠিলেন কেন? যাঁহারা খেলিবেন, তাঁহারাই না হয় আলোচনার মাধ্যমে বা ঝগড়া-বিবাদ করিয়া দল স্থির করিয়া লহিতেন। দেশের টেনিস অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত করিত। তাহাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দেখা যাইতেছে, নেতা-মন্ত্রী হইতে শিল্পপতি, সকলেরই নষ্ট করিবার মতো সময় এবং শক্তি, উভয়ই আছে। এই সময় এবং শক্তি দেশের স্বার্থে ব্যয় করিলে এই অভাগা দেশটির কিছু উন্নতি হইতে পারিত।
অনেকেই হয়তো বলিবেন, দেশের স্বার্থেই টেনিস দল বিষয়ক এই বিতর্কের সুষ্ঠু মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। সেরা দলটিই যাহাতে অলিম্পিকসে যায়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। যে দলটি অলিম্পিকসে যাইতেছে, তাহার সহিত দেশের, জাতির, জাতীয়তার কী সম্পর্ক? দলটি ভারতের অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন প্রেরিত। সেই দল পদক জিতিয়া আনিলেই বা জাতির কী লাভ, হারিয়া ফিরিলেই বা ক্ষতি কী? অস্কারে ভারতীয় ছবির মনোনয়ন হইতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয় সব কিছুর সহিত জাতীয়তার প্রশ্নটিকে জুড়িয়া দেওয়া একটি কু-অভ্যাস। সাধারণ মানুষ গর্বিত হইতে চাহে, ফলে যে কোনও বিজয়কেই ‘জাতির গর্ব’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়া তাহাকে আত্মীভূত করিবার চেষ্টা করে। নেতারা এই কথাটি বিলক্ষণ জানেন। ফলে, প্রকৃত অর্থে যে প্রশ্নগুলি জরুরি, সেগুলিকে চাপা দেওয়ার ধামা হিসাবে এই আরোপিত জাতীয়তাবাদের ব্যবহার বর্তমানে বহুল। অভ্যাসটি বর্জনীয়। দেশের প্রকৃত সমস্যার সংখ্যা বড় কম নহে। তাঁহারা সেইগুলির সমাধানে যত্নশীল হউন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.