মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎপর হওয়া মাত্রই মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র অনুমোদন পেয়ে গেল উত্তর ২৪ পরগনার সাগর দত্ত এবং মালদহ মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন পেল না।
এক যাত্রায় এই পৃথক ফল কেন, তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা!
ওই তিনটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল হওয়ায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে কম মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। তাই আগামী যোজনায় রাজ্যে ডাক্তারি পাঠ্যক্রমে আসন বাড়াতে তৎপর হয়েছে সরকার। চিঠিতে তিনি আশ্বাস দেন, ওই কলেজগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ এবং অন্য সব ক্ষেত্রে সাহায্যের বিষয়টি তাঁর সরকারের সর্বাধিক অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে।
দিল্লিতে তৃণমূলের তরফে বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাজ্যের তরফে তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এমসিআই-এর চেয়ারম্যান কে কে তলোয়ারের সঙ্গে। তার পরেই রাতে এমসিআই-এর ছাড়পত্র নিয়ে বার্তা পৌঁছে যায় সাগর দত্ত এবং মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। একই সঙ্গে অনুমোদনের চিঠি যায় কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজেও। সেখানে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ভর্তির অনুমোদন এর আগে বাতিল করে দিয়েছিল এমসিআই।
কিন্তু বহরমপুর মেডিক্যালের কাছে
বুধবার রাত পর্যন্ত ছাড়পত্র পৌঁছয়নি। কেন? আটকাল কোথায়?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, বহরমপুর যে-হেতু কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর খাসতালুক, তাই রাজনৈতিক কারণেই মমতা বহরমপুরের অনুমোদন আদায়ে সে-ভাবে উদ্যোগী হননি। মমতাকে কটাক্ষ করে অধীরবাবু নিজেও এ দিন বলেন, “কার অঙ্গুলিহেলনে এই অনুমোদন পাওয়া গেল না, সেটা আমরা জানি। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর কার হাতে, বাংলার মানুষ দয়া করে সেটা দেখে নিন। প্রতিহিংসার রাজনীতির সঙ্গে বাংলার মানুষ পরিচিত হোন।” এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, “এটা যদি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকত, গুলাম নবি আজাদকে দিয়ে আমি অনুমতি আদায় করে আনতাম।” বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য এক সময়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন অধীরবাবু। এ দিন তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রয়োজনে আবার আন্দোলনে নামবেন।
অধীরবাবুর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, বহরমপুর মেডিক্যালের অনুমোদনও পাওয়া যাবে বলে তিনি ‘আশাবাদী’। অধীরবাবুর বক্তব্যের ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। নিছকই রাজনীতি করার জন্য এই ধরনের কথা বলা হচ্ছে। তা ছাড়া উনি এমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতা নন যে, ওঁকে জব্দ করার জন্য আমাদের মাথা ঘামাতে হবে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের স্বার্থের কথা এবং বহরমপুরের সাধারণ মানুষের কথা সব সময়েই মনে রাখে।”
সাগর দত্ত এবং মালদহ মেডিক্যাল কলেজকে কিছু শর্তের ভিত্তিতেই ছাড়পত্র দিয়েছে এমসিআই। প্রধান শর্ত, এক বছরের মধ্যে দু’টি কলেজকেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিষয়টি এমসিআই-কে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিতেও বলা হয়েছে। বস্তুত, পরিকাঠামো না-থাকার কারণ দেখিয়ে চলতি মাসেই ওই দুই কলেজের অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।
এ দিন এমসিআই-এর অনুমোদন পৌঁছনো মাত্র তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে গিয়েছে সাগর দত্ত এবং মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। নিয়ম অনুযায়ী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাউন্সেলিং শেষ হওয়ার কথা। অনুমোদন পাওয়া যাবে কি না, সেই টানাপোড়েনেই কেটে গিয়েছে বেশ কিছু দিন। এই পরিস্থিতিতে এখন তড়িঘড়ি করেই যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে হবে বলে দুই কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এ রাজ্যে এমবিবিএসে ভর্তির জন্য আগামী ১৭ থেকে ১৯ জুলাই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কাউন্সেলিং হবে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে এমবিবিএসের আসন-সংখ্যা ১৭৫০। আর জি করে আরও ৫০টি আসনের জন্য এমসিআই-এর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। তার ছাড়পত্র এবং বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি আসনের অনুমোদন পাওয়া গেলে মোট আসন দাঁড়াবে ১৯০০। |