|
|
|
|
ফের প্রতিরোধ কমিটি |
তৃণমূল ফিরে গেল সেই শুভেন্দু আর নন্দীগ্রামেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
এক দিকে হলদিয়া পুরভোটে হার, অন্য দিকে সিঙ্গুর নিয়ে আইনি জট রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জোড়া ‘ধাক্কা’ সামলাতে আবার নন্দীগ্রামেই ফিরছে তৃণমূল। ফিরছে ‘নন্দীগ্রামের নায়ক’ শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে।
বুধবার ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে এক সভা হয়েছে নন্দীগ্রামে। যে কমিটির পত্তন হয়েছিল নন্দীগ্রামে জমি-আন্দোলনের সময়। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে যে কমিটির ব্যানারে যৌথ আন্দোলনে নেমেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সিঙ্গুর-আইন আদালতের খারিজ হয়ে যাওয়ার পর যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার আন্দোলনের পথে ফিরে যেতে চেয়ে সাবেক সহযোদ্ধাদের এককাট্টা করছেন, ঠিক তেমনই শুভেন্দু একত্র করছেন তাঁর প্রাক্তন সহযোদ্ধাদের। নন্দীগ্রামের বিডিও অফিস সংলগ্ন কমিউনিটি হলে এদিনের সভায় শুভেন্দু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রতিরোধ কমিটির শরিক কংগ্রেস, এসইউসি, পিডিসিআইয়ের স্থানীয় নেতৃত্ব এবং নন্দীগ্রাম পর্বে নিহত ও আহতদের পরিজনেরা। |
|
নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভায় শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
হঠাৎ কেন এই কর্মসূচি? সভার আহ্বায়ক হিসেবে শুভেন্দুর স্বাক্ষরিত চিঠির বয়ান অনুসারে, ‘১৪ মার্চ, ২০০৭-এ নন্দীগ্রামে গণহত্যা ও অত্যাচারের বিষয়ে ১৬ নভেম্বর, ২০০৭-এ হাইকোর্টের রায়ের পরে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করতেই’। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত, এর পিছনে কাজ করছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। হলদিয়া পুর-নির্বাচনে পরাজয়ে নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই সিঙ্গুর মামলায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে হার হয়েছে রাজ্য সরকারের। সামনে সুপ্রিম কোর্টের পথ খোলা থাকলেও আপাতত সিঙ্গুরে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া থমকেই। এই পরিস্থিতিতে সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই সূত্রেই নতুন করে ‘গুরুত্ব’ পাচ্ছে রাজ্যে ভূমি আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’ নন্দীগ্রাম। তা ছাড়া, সম্প্রতি নন্দীগ্রামের দুই তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান ও আবু তাহেরের অনুগামীদের মধ্যে বারবার বিরোধ বেধেছে। প্রকাশ্য সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েছে দুই গোষ্ঠী। এ দিনের সভায় সুফিয়ান ও তাহের দু’জনেই হাজির ছিলেন। অর্থাৎ এই কর্মসূচির মাধ্যমে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতেও ‘তৎপর’ হয়েছে তৃণমূল।
সভায় শুভেন্দুই ছিলেন প্রধান বক্তা। প্রায় আধ ঘণ্টার বক্তৃতায় শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রাম গণহত্যায় জড়িত সব পুলিশ অফিসার ও সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও। কারণ, তাঁর নির্দেশেই ১৪ মার্চের ঘটনা ঘটে।” নন্দীগ্রামের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি নিয়েও ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “সিবিআই তদন্ত করে মাত্র তিন জন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। আরও অনেক পুলিশ অফিসার ও সিপিএম নেতা ওই ঘটনায় জড়িত থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। আমরা সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।” সভায় সিদ্ধান্ত হয় ১৪ মার্চের ঘটনায় ‘দোষী’ পুলিশ অফিসার ও সিপিএম নেতাদের শাস্তির দাবিতে ফের আন্দোলন হবে। পাশাপাশি নন্দীগ্রাম-পর্বে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সেই দাবি জানানো হবে সরকারের কাছে।
শুভেন্দু বলেন, “১৪ মার্চের ঘটনায় আহতদের অনেকেই এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি। তাঁরা যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পান, সেই আবেদন জানানো হবে সরকারকে।” তৃণমূল সাংসদ আরও জানান, নন্দীগ্রাম পর্বে যাঁদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সেগুলি প্রত্যাহারের জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যেই তার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|