সম্পাদক সমীপেষু...
সরকারি নির্দেশ মানতে সরকারি কর্তাদের অনীহা কেন
স্বাতী ভট্টাচার্যর নির্মল বিদ্যালয় অভিযানের প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ক (১৫-৫) নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আমার নিজের বিদ্যালয়ের একটা টুকরো অভিজ্ঞতার কথা পাঠকদের জানাতে চাই। আমি মথুরাপুর ১ নং ব্লকের অন্তর্গত দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ৭ থেকে ১৩ এপ্রিল ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’ পালনের উদ্দেশ্যে প্রতি বিদ্যালয়ে জেলা প্রকল্প আধিকারিকের দফতর থেকে একটি সরকারি নির্দেশিকা (মেমো নং-ssm./S. 24 pgs/ped/1547(3), তারিখ: ২৭-৩-২০১২) জারি হয়েছিল। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী ৭ থেকে ১৩ এপ্রিলের কোন দিন, স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন কর্মসূচি পালন করতে হবে, তারও একটা সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল। ছিল আর একটি বিষয়। বিদ্যালয় সন্নিহিত অঞ্চলে দারিদ্রসীমার নিম্নবর্তী (বি পি এল) যে সব পরিবারে এখনও শৌচাগার নেই, তাদের শৌচাগার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝিয়ে তাদের শৌচাগার নির্মাণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং শৌচাগারের চাহিদা তৈরিও এই কর্মসূচির একটি অন্যতম বিষয় ছিল। নির্দেশিকার ৫ নং পাতায় শৌচাগারহীন বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য সরকার প্রদত্ত ৩২০০ টাকা সাবসিডি-র কথা এবং তা পাওয়ার জন্য পূর্বে বিদ্যালয়ে ৩০০ টাকা (ফেরতযোগ্য) জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের কথাও ওই পাতায় বিশদে জানানো হয়। এটাও জানানো হয় যে, শৌচাগার নির্মাণ হলে পঞ্চায়েত সমিতি ও স্যানিটারি মার্ট যৌথ ভাবে বিদ্যালয়কে উৎসাহ দানের জন্য পরিবার পিছু ৫০ টাকা হিসাবে ইনসেনটিভ দেবে।
উদ্দেশ্য সাধু। এ বিষয়ে গ্রাম শিক্ষা এবং মাতা-শিক্ষক কমিটির মিটিংয়ে বোঝানোর পর বহু অভিভাবক-অভিভাবিকা স্বীকার করেন যে, তাঁরাও বাড়িতে শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তাঁরা নিজের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করতে পারেননি। সরকারের সাবসিডি-র কথা জানানো হলে তাঁরা এ বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখান এবং পনেরো জন দারিদ্রসীমার নিম্নবর্তী অভিভাবক বি পি এল নং-সহ প্রত্যেকে দু’দিনের মধ্যে ৩০০ টাকা করে বিদ্যালয়ে জমা করেন। সেই তালিকার নির্দেশ মতো ২০ এপ্রিলের ভিতর সংশ্লিষ্ট মথুরাপুর উত্তর চক্র অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের করণে জমা করা হয়। এবং সংগৃহীত অর্থ বিদ্যালয়ে জমা রাখা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে অগ্রগতির বিষয়ে যখন স্থানীয় ব্লক অফিসে যোগাযোগ করা হয়, জানা যায় যে, যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ‘নির্মল গ্রাম পুরস্কার’ পেয়েছে, সেই সব পঞ্চায়েতের কোনও গ্রামেই এই শৌচাগারের সুবিধা দেওয়া যাবে না। প্রসঙ্গত, দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এই পুরস্কার পেয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ওই অভিভাবকদের ডেকে তাঁদের জমাকৃত টাকা পুনরায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। টাকা ফেরত নেওয়ার সময় তাঁদের সব আহত চোখেই প্রশ্ন ছিল, কেন তাঁরা এই সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেন।
ওই অঞ্চলে ৬ বছরেরও বেশি সময় শিক্ষকতার সূত্রে আমি জানি যে, ওই গ্রামে বেশির ভাগ লোকই দারিদ্রসীমার নিম্নবর্তী তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ। বেশির ভাগেরই স্থায়ী আয়ের উৎস নেই এবং বহু পরিবারেই শৌচাগার নেই। বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী বহু মানুষ এখনও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন। তবে, কীসের ভিত্তিতে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চল ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ পুরস্কার পেল জানা নেই। আরও জানা নেই, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী চলতে সরকারি আধিকারিকদের এত অনীহা কেন? আর, এটাও জানা নেই, ওই সব শৌচাগারহীন পরিবারের মানুষ, তাঁদের অপরাধ কী ছিল, যার জন্য তাঁদের এই সরকারি সুবিধায় বঞ্চিত করা হল?
পরিশেষে জানাই, এই সব নির্দেশিকা বিদ্যালয়গুলিতে পাঠানোর পূর্বে স্পষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন, কোনটা মানতে হবে, আর কোনটা না-মানলেও চলবে। তা হলে একটি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসাবে অস্বস্তিতে পড়তে হয় না। আর শৌচাগারহীন মানুষদের করুণ চোখের দিকে তাকাতেও হয় না। এই ঘটনা থেকে এটাও বোঝা গেল, কেন এই সব কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.