দেওয়ালে বড় বড় ফাটল। ভেঙে গিয়েছে দরজা-জানালার কাঠ। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে স্কুলে পৌঁছেও রেহাই নেই পড়ুয়াদের। কারণ, ছাদ ফুটো হয়ে বৃষ্টির জল পড়ে ক্লাসরুমে। দুর্দশার এই চিত্র মঙ্গলকোটের যবগ্রামের মহারানি কাশীশ্বরী ইনস্টিটিউশনের। সম্প্রতি স্কুলে এসে প্রাক্তন ছাত্র তথা বাংলাদেশের সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক এই পরিস্থিতি দেখে বলেই ফেলেন, “আমাদের সময়ে যা পরিকাঠামো ছিল, পঞ্চাশ বছর পরেও তা-ই রয়ে গিয়েছে দেখছি।”
স্কুলের এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর, শিক্ষা দফতরকে বারবার চিঠি দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকায় দু’টি ঘর তৈরি হলেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত মজুমদার বলেন, “বৃষ্টির সময়ে আশঙ্কা হয়, ছাদটা পড়ুয়াদের মাথায় না ভেঙে পড়ে! বৃষ্টি পড়লে তাই বাধ্য হয়ে ছুটি দিয়ে দিই। ঘরগুলির অবস্থা ভাল হলে এই সমস্যা হত না।” |
স্কুল সূত্রে জানা যায়, মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী ১৯১৬ সালে তাঁর স্ত্রী-র নামে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। মহারানি কাশীশ্বরী দেবীর বাপের বাড়ি ছিল মঙ্গলকোটের যবগ্রামে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, মহারাজার তৈরি করা স্কুলে কার্যত আর কোনও উন্নয়ন হয়নি। সেই সময়ের দরজা জানালার কাঠই এখন ভেঙে পড়ছে। প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের কাছে লিখিত ভাবে স্কুল কতৃর্পক্ষ এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ন’টি শ্রেণি কক্ষের মধ্যে ছ’টিই অনুপযুক্ত। শীঘ্র ক্লাসরুমের পুননির্মাণ প্রয়োজন। নাহলে যে কোনও সময়েই শিক্ষক ও পড়ুয়াদের দুর্ঘটনার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ওই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা বর্তমান জেলা পরিষদের সভাপতি নিখিলানন্দ সর। তাঁর কাছেও একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে কিন্তু স্কুলের কোনও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি।
তবে সুযোগ সুবিধা না থাকলেও পড়ুয়ার কমতি নেই স্কুলে। স্কুল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়া রয়েছে ৭৪০ জন। প্রধান শিক্ষক সুদীপ্তবাবরু আক্ষেপ, “এই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক ছিলেন কুমুদরঞ্জন মল্লিক, পড়ুয়া ছিলেন হাসান আজিজুল হক ও তাঁর দিদি জাহানারা বেগম। অথচ ঐতিহ্যের এই স্কুলের অবস্থায় এত বেহাল।” স্কুল কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ, প্রতিবছর নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বিভিন্ন জায়গায় আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হয়। অথচ অন্যান্য স্কুল পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য তাঁরা কোনও সাহায্য পাননা। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র হাসান আজিজুল হক বলেন, “স্কুলের একটা সুনাম রয়েছে। নিগন-ক্ষীরগ্রামে স্কুল থাকলেও এখানে পড়তে আসত ছাত্ররা। অথচ এই স্কুলের উন্নতি না হওয়া আমার কাছে অত্যন্ত দুঃখের।” অভিভাবক চৌধুরী ইসলাম মোল্লা, সান্তনা দাসদেরও অভিযোগ, স্কুলটাকে দেখলে মনে হয় যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়বে। প্রশাসনের সাহায্যেই একমাত্র উন্নতি হতে পারে।
মঙ্গলকোটের বিডিও প্রদীপ মজুমদার বলেন, “অতিরিক্ত একটি ক্লাসরুমের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। আরও চারটি ঘরের অনুমোদন পাওয়া গেলে স্কুলের হাল ফিরবে।”
কবে মিলবে এই অনুমোদন? জবাব অজানা। |