সিটু কর্মী-সমর্থকদের উপরে দফায় দফায় হামলার অভিযোগ উঠল আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে। বুধবার দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডে (ডিপিএল) এই ঘটনায় তাদের মোট আট জন জখম হন বলে সিটুর দাবি। সাত জন আইএনটিটিইউসি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে সিটু এবং সিপিএম নেতৃত্ব।
সিটু নেতৃত্ব জানান, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ঠিকা শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ডিপিএলের জেনারেল ম্যানেজার (পাওয়ার প্ল্যান্ট) বন্ধুকমল যশের সঙ্গে কথা বলতে যান তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। ওই আধিকারিক জানান, বিকেলে দেখা করবেন। ফেরার পথে তাঁদের উপরে লাঠি, ভোজালি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আইএনটিটিইউসি কর্মীরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তাতে কারখানার সিটু নেতা তারক বাগ, প্রসেনজিৎ দাস, দিলীপ কর্মকার ও দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় জখম হন। তাঁদের ডিপিএল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রথম দু’জনের পরে দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে ডিপিএলের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় সিটু। অভিযোগ, ফের আইএনটিটিইউসি-র লোকজন সিটুর উপরে চড়াও হয়। জখম হন স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ শ্যামাপ্রসাস কুণ্ডু, বীরেন মণ্ডল, যোগেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীরোদ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্যামাপ্রসাদবাবুকে প্রথমে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল, পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। |
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরখানেক ধরেই ডিপিএলে আইএনটিটিইউসি-র দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ছোটখাটো অশান্তি লেগে রয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তা প্রকাশ্যে চলে আসে। দুই আইএনটিটিইউসি নেতা কেশব মণ্ডল ও দেবদাস মজুমদারের অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েক জন জখম হন। এর কিছুদিন পরে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর লোকজনের হাতে দেবদাসবাবুর ছেলে মৈনাক মজুমদার প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে গ্যামন ব্রিজে রাস্তা অবরোধ করেন দেবদাসবাবুর অনুগামীরা।
বুধবার সিটু কর্মীদের উপরে হামলায় অভিযোগের তির দেবদাসবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। পুলিশের কাছে যে সাত জন আইএনটিটিইউসি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম দেবদাসবাবু ও মৈনাকবাবু। বাকিরা হলেন অনুপ ঘোষ, সৌরভ মুখোপাধ্যায়, নয়ন মালাকার, তপন রুইদাস ও নুর আলম। দেবদাসবাবু অবশ্য ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি জানান, সিটুর কর্মী-সমর্থকরা তৃণমূল নেত্রী ও তাঁদের দল সম্পর্কে কটূক্তি করছিলেন। উপস্থিত ঠিকা শ্রমিকেরা তার প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমি স্থায়ী কর্মীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করি। এ দিনের ঘটনা ছিল ঠিকা শ্রমিক সম্পর্কিত। সেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার নাম জড়িয়ে দিয়েছে সিটু।”
সিটু নেতা সুখেন সরকারের অবশ্য অভিযোগ, “বিনা প্ররোচনায় আইএনটিটিইউসি আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা চালায়। তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েও আক্রান্ত হতে হল আমাদের।” জখমদের দেখতে ডিপিএল হাসপাতালে যান সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা শহরের বিদায়ী মেয়র রথীন রায় ও প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। বিপ্রেন্দুবাবুর অভিযোগ, “পুরভোটে যে ভাবে সন্ত্রাস কায়েম করা হয়েছিল, তার রেশ যে এখনও চলছে তা আজকের ঘটনায় প্রমাণিত।” পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় টহল চলছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। |