সিংহাসনে উপবেশনের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে টেমস নদীতে ভাসল হাজার নৌকো। ৮৬ বছরের রানি স্বামীর সঙ্গে বজরায় ভাসলেন। লক্ষাধিক জনতা সহর্ষ উদ্বেল হয়ে তখন ধরেছেন, ‘লং লিভ দ্য কুুইন’ গান। লন্ডনের বিখ্যাত বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সেই সময় টেমসের দু’ধারে লক্ষাধিক জনতা। অত্যুৎসাহীরা নাকি আগের রাত থেকেই করছেন অধীর অপেক্ষা। পাছে স্বচক্ষে রানিকে দেখার সুযোগ হারিয়ে যায়। লন্ডনের এই ঐতিহাসিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ থেকে ছুটে এসেছেন তাঁরা। উৎসবের অঙ্গ হিসেবে ছিল পিকাডিলি সার্কাসের সামনে ‘জুবিলি লাঞ্চ’। জমাটি ভিড়ে সেখানে হয়েছিল সাময়িক ট্র্যাফিক জ্যাম।
৪ জুন আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতার ছবির শিরোনাম ‘রাজসিক উদযাপন’। লক্ষ লক্ষ বিদেশে না-যাওয়া বঙ্গসন্তানের মতো এই পত্রলেখকও গোগ্রাসে গিলেছে টেমসে ভাসমান হাজার নৌকোর ছবি। লন্ডন থেকে প্রেরিত শ্রাবণী বসুর প্রতিবেদন পড়ে রূপকথার গল্পের আমেজ পাওয়া গিয়েছে। ২০১২-তে পৌঁছেও রানি, ডিউক অব এডিনবরা, যুবরাজ, ডাচেস অব কর্নওয়াল... ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ রাজকন্যা, হিংসুটে দৈত্য, সুয়োরানি-দুয়োরানি, রাজপুত্র, রুপোর কাঠি-সোনার কাঠিকে মনে করিয়ে দিয়েছে। এক লহমায় মনে হয়েছে, হাইটেক প্রযুক্তি সাইবার জগৎ ফেসবুক ইন্টারনেট ছাপিয়েও ওই যে রানির উপর অপ্রতিরোধ্য ভরসা লন্ডনবাসীর এর পিছনে তবে কি লুকিয়ে ব্রিটিশ আভিজাত্য, যা এই উৎসব পালনের সমকক্ষ? |
নেপথ্যে উন্মোচিত হয়েছে আবালবৃদ্ধ-বনিতার এক আদি অকৃত্রিম জাগতিক ছবি। হুজুগেপনা কি তবে সর্বত্র এক রকমই? আই পি এল-জয়ী কলকাতা নাইট রাইডার্সকে রাজকীয় সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে হাজির জনতার উন্মাদনাই কি বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে টেমসের রাজকীয় উদ্যাপনে? রানি সিংহাসনে উপবেশনের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমজনতাকে দর্শন দেন। আমাদের কিং খান-জুহি চাওলার সরাসরি দর্শনে পাবলিক আনন্দে উন্মাদ। লন্ডনেশ্বরীকে দর্শনে সাধারণ মানুষের কতটুকু উপকার হয়েছে, তাঁরাই জানেন। ইডেনে হাজির হাজার হাজার জনতার ক্লান্তি ঘুচেছে বলিউডি রাজপুত্র-রাজকন্যা এবং নাইট রাইডার্সের প্লেয়ারদের দেখে। তাদের জন্য উপহার ছিল। আর্থিক প্রাপ্তির অফুরান ভাণ্ডার তো আছেই। আর তীব্র দাবদাহ স্বীকার করে, গাঁটের পয়সা যৎসামান্য হলেও খরচ করে, ইডেনে হাজির হয়ে সিন্ধুর মধ্যে বিন্দুবৎ অভীপ্সা পূরণে কতটুকু লাভ হল সাধারণের? প্রশ্ন উঠবে, এ হেন মোক্ষলাভ ক্ষতির প্রশ্নকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়। ... তবে তা-ই হোক। আমাদের দেশে যেমন সরকারি পয়সায় বিনোদন, সেই ‘হোপ-৮৬’ থেকেই বহমান। গবেষকরা দিতে পারবেন আরও বহু উপমা। বিদেশেও কি তাই? ... রানির বাগানে ১০ হাজার ফুল ফোটাতে ২০ জন মালি সাত মাস ধরে প্রাণাতিপাত পরিশ্রম করেছেন। সেই ফুলে সেজেছে রানির বজরা। বিখ্যাত ডিজাইনার এক বছর ধরে বাকিংহাম প্যালেসে গোপনে তৈরি করেছেন রানি এবং সঙ্গী-সাথিদের পোশাক। ... সত্যি, গল্পগাথাই বটে! বিপুল খরচও কি রাজকোষের? তাই হবে। ও দেশের বিপুল জনতা যখন এই মহোৎসবে মাতোয়ারা, তখন এ-সব প্রশ্ন অবশ্যই আহাম্মকের মতো। তবে ‘ভাবনার জন্যই ভাবনা’ হয় রবীন্দ্রনাথের এই প্রবাদপ্রতিম বাক্যকে মান্যতা দিয়ে বলতে ইচ্ছা করে, মোচ্ছবের জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে হবে জনগণকে। যাতে তারা বেশি না-ভাবে। ভাবলেই মুশকিল।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী। কলকাতা-১২৫
|
গলি-ক্রিকেট। বন্ধ-এর দিন খেলছেন কোয়েল মল্লিক। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ স্বাগত নন্দী লিখিত ‘ইমেজ খারাপ হয়ে যাবে’ (২৯-৫) গত অর্ধদশক যাবৎ লালিত হওয়া ভাবনা উস্কে দিল। স্বাধীনতার কিছু পরে কলকাতার উত্তর শহরতলির বাসিন্দা আমাদের কাছে ছোটলোক, ভদ্রলোক এই ফারাক ছিল না। সব রকম খেলাই খেলতাম। শ্রীনন্দী লেখেননি এমন অনেক খেলা ছিল। যেমন, দারিয়া বান্ধা। যদিও এটি প্রধানত মেয়েদের খেলা ছিল। ডাংগুলি খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ছোটলোকদের খেলা বলে নয়, ওই খেলা খেলতে গিয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই ছিল মায়ের ভয়। |
আমার মনে হত, ডাংগুলি বা ডান্ডাগুলি খেলাটা কিছুটা নিয়মকানুন বেঁধে দিয়ে ক্রিকেটের মতো করে নেওয়া যায় কি? ক্রিকেটও একদম প্রথম অবস্থায় ইংল্যান্ডে ‘নিম্নতর’ শ্রেণির ছেলেদেরই খেলা ছিল। একটা উইলো কাঠের ডান্ডা ছিল ব্যাট। উইকেট ছিল দুটো কাঠি (গাছের কাটা ডাল) আর বলও ছিল যে-কোনও জিনিসের। তা কাঠেরও হতে পারে। সেই খেলাটাকে যদি নিয়ম-কানুনে আবদ্ধ করে সুভদ্রজনোচিত করে এখনকার ওয়ান ডে বা আই পি এল করে তোলা যায়, তা হলে ডাংগুলিকেই বা পরিশীলিত করে তোলা যাবে না কেন?
সুবীরকুমার সেন। কলকাতা-৭৪ |