|
|
|
|
|
কৃষ্ণকলি আর জোছনাকুমারী
সৌন্দর্য গায়ের রঙে নেই, ঠিক কথা। কিন্তু ফরসা হন বা কালো, নিজের
গাত্রবর্ণটিকে ব্যবহার করতেও তো জানতে হবে। ত্বকের রং বুঝে
মেক-আপ করবেন কী ভাবে? শেখাচ্ছেন মাস্টারমশাই অনিরুদ্ধ চাকলাদার |
|
|
ঘটি-বাঙাল,
মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, ফরসা-কালো এই ধরনের বিষয় নিয়ে গত এক দশক যাবৎ তর্ক চলে আসছে। কিন্তু আজ অবধি এর কোনও মীমাংসা হয়নি। এই তর্কের হার জিত নির্ভর করে কোন পক্ষে কত জন সদস্য আছে, তার ওপর। প্রথম দিকে তর্ক কিছুটা যুক্তিনির্ভর থাকে। কিন্তু শেষে জেতার জন্য চিৎকার শুরু হয়ে যায়। সুতরাং যে পক্ষে গলার জোর বেশি তারাই জিতবে। একই ভাবে ফরসা-কালোর তর্কও চলছিল। এ ক্ষেত্রে তর্কটি একটু অন্য রকম মাত্রা পায়। দীর্ঘ দিন যাবৎ ফরসা মেয়ের মায়েরা একটু বেশি গর্ব বোধ করতেন। মেয়ে ফেল করলেও জানতেন, ভাল পাত্র তো পাবই। কিন্তু কালিদাসের থিয়োরি মাঝ পথ থেকে সব কিছু ওলট-পালট করে দিল। কারণ তাঁর মতে, শ্যামবর্ণা মেয়ের রূপই জগৎশ্রেষ্ঠ। এই বার ব্যালান্স করা খুবই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। ‘সর্ব দোষ হরে গোরা/ কালো জগতের আলো’ এই ভাবেই তর্ক চলতেই লাগল।
কিন্তু মেক-আপ-এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে, দু’টি গাত্রবর্ণেরই কিছু সুবিধা, কিছু অসুবিধা আছে।
মডেল: অরিত্রী
ছবি: সোমনাথ রায় |
ফরসা রঙের ভাল-মন্দ
ফরসা রঙের একটা বিশেষ সুবিধা হল, আপনার চোখ, নাক, ঠোঁটের কিছু খুঁত থাকলে, সহজে তা রঙের আড়ালে চলে যায়। বেশি প্রকট হয়ে ওঠে না। ত্বক খসখসে হলেও বোঝা যায় না। ফরসা রঙে মেক-আপ করতে অসুবিধাও হয় না। খুব সুন্দর রঙের সঙ্গে মিশে যায়। কিন্তু মুখে যে শেডের মেক-আপ ব্যবহার করবেন, সেটি নিয়ে সতর্ক থাকবেন। কারণ ভুল শেডের মেক-আপ লাগালে ভীষণ প্রকট হয়ে ওঠে, অত্যন্ত দৃষ্টিকটু লাগে। ফরসা রঙের আর একটি অসুবিধা হল, মুখে দাগ-ক্ষত থাকলে খুব বেশি প্রকট ভাবে বোঝা যায়। আবার মেক-আপ যদি বেশি হয়, খুব রুক্ষ ও খসখসে দেখায়। সুতরাং ভেবেচিন্তে মেক-আপ করুন।
চাপা রঙের ভাল-মন্দ
যারা শ্যামবর্ণা তাদের মুখের ত্বকে মেক-আপ খুব সুন্দর বসে যায়, মেক-আপ-এর রংটিও ঠিকঠাকই মিলিয়ে যায়। আবার আপনি যদি মেক-আপ ঠিকঠাক মেলাতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে মেক-আপটি প্রকট হয়েও ওঠে না। অর্থাৎ খুব একটা বোঝা যায় না। শ্যামবর্ণাদের ক্ষেত্রে পিগমেন্টেশন, ফ্রেকলস এগুলি বোঝা যায় না। সুতরাং মুখের ছোটখাটো খুঁত নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
এ ক্ষেত্রে অসুবিধাও থাকে। যেমন মেক-আপ-এর শেড বাছা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ যথাযথ স্কিনটোন বুঝে মেক-আপ-এর শেড কেনা আপনার পক্ষে চিন্তার বিষয় হতেই পারে। সুতরাং দু’টি ক্ষেত্রেই (ফরসা এবং কালো) কী ভাবে মেক-আপকে ঠিক ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব, সেটি আলোচনা করা যাক।
ফরসা রঙের মেক-আপ
ফরসা রঙের জন্য প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, ঠিকঠাক শেড-এর একটি ফাউন্ডেশন খুঁজে বার করা। বেস যদি ঠিক হয়, তা হলে মেক-আপ-এর অন্যান্য রঙের দিকগুলিও মানানসই হবে। ফরসা রঙের মেক-আপ ঠিক মতো করা হলে, ফরসাদের ভারী সুন্দর লাগে। এর পর হালকা এবং নরম শেড-এর আইশ্যাডো, লিপস্টিক, ব্লাশ-অন বাছাইয়ের পালা। ফরসা রঙে সর্বদাই হালকা রঙের শেডগুলি বেশি ভাল লাগে। চোখের মেক-আপ-এর ক্ষেত্রে একদম ধারে গাঢ় শেড ব্যবহার করুন। এতে হালকা শেড-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকবে। ফরসা রং হলে আইলাইনার গাঢ় ভাবে লাগাবেন না। এতে বেশি প্রকট হয়ে উঠবে। চোখ যদি সুন্দর হয়, তবে গাঢ় মাসকারা লাগান, আইলাইনার একদমই ব্যবহার করবেন না। হালকা ব্লাশ অন লাগাতে পারেন, যেমন পিচ বা গোলাপি। ঠোঁটে গাঢ় রং ব্যবহার করুন। ফরসাদের গাঢ় রঙের লিপস্টিক খুব সুন্দর লাগে। অল্প লিপগ্লস লাগাতে পারেন।
শ্যামবর্ণার মেক-আপ
মডেল: বীথিকা,
ছবি: আশিস সাহা |
শ্যামবর্ণাদের ক্ষেত্রে মেক-আপ-এর উপযুক্ত শেড বাছাই করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ শেড ঠিকঠাক না হলে পুরো মেক-আপটাই বৃথা হয়ে যাবে। আপনি মনে রাখবেন, ফরসা হওয়ার জন্য মেক-আপ কখনও ঠিক রাস্তা নয়। ফরসা হওয়ার চেষ্টা করলে বরং বেশি বাজে লাগবে। চেষ্টা করবেন, যেন উজ্জ্বল লাগে। সুতরাং উপযুক্ত শেড বাছাই আপনার মেক-আপকে সুন্দর করে তুলবে। চোখে সব সময় গাঢ় মেক-আপ করবেন। প্রাণহীন চোখ শ্যামবর্ণাদের মেক-আপ-এর সঙ্গে মানানসই হয় না। মাথায় রাখবেন, চোখ যেন সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, চোখের মেক-আপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোল পেনসিল দিয়ে গাঢ় লাইন টানবেন। ঘন মাসকারা লাগাবেন। ম্যাট রঙের ব্লাশ অন ব্যবহার করুন। এতে আপনার মেক-আপ, রং দুই-ই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ম্যাট রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করুন। লিপগ্লস একেবারেই ব্যবহার করবেন না।
এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আশা করা যায়, ফরসা এবং শ্যামবর্ণা উভয়েই ঠিকঠাক মেক-আপ করবেন, এবং দু’জনেই দু’দিক থেকে সবচেয়ে সুন্দর এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন।
|
সাক্ষাৎকার:
কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
|
|
|