তিনি বিধানসভায় প্রশ্নের উত্তর দিতে ভয় পান না বলে সাফ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, তাঁর দফতর সংক্রান্ত যে কোনও প্রশ্নের জবাব নথিপত্র না-দেখেও তিনি দিতে প্রস্তুত বলে শুক্রবার জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন বিরোধী-শূন্য কক্ষে বিবৃতি দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “কেউ কেউ বাইরে বলছেন, আমি নাকি প্রশ্নের উত্তর দিতে ভয় পাই! পার্লামেন্টে রেল দফতর চালিয়ে এসেছি দেড় বছর করে মোট তিন বছর। লোকসভা, রাজ্যসভায় কোনওদিন প্রশ্নের উত্তর দিতে ভয় পাইনি! এখানে ভয় পাব কেন?”
এদিনের কার্যসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের প্রশ্নোত্তর নির্ধারিত ছিল। যদিও সময়াভাবে সেই প্রশ্ন ওঠার ঠিক আগেই প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীকে যাতে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে না-হয়, সে কারণেই ‘ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিত ভাবে’ তাঁর দফতরের প্রশ্ন তালিকায় পরের দিকে রাখা হয়েছিল। এমনকী, প্রথম সাতটির মধ্যে বামেদের একটিও প্রশ্ন তালিকায় রাখা হয়নি অভিযোগ তুলে প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই কক্ষত্যাগ করেন বিরোধীরা।
বিরোধী-শূন্য কক্ষে প্রশ্নোত্তর পবের্র সমাপ্তির পর বিরোধীদের ‘জবাব’ দিতেই (কক্ষে তখন ফিরে এসেছেন শুধু সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা) মুখ্যমন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেন, “পালিয়ে না গিয়ে, চলে না গিয়ে, ওয়াকআউট না করে আমায় প্রশ্ন করতে পারতেন ওঁরা। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি। প্রত্যেকটা দফতর নিয়েই সরকার চালাই। কাগজপত্র না দেখেও বিরোধীদের বিস্তারিত তথ্য দিতে পারি। কিন্তু দুঃখের যে আমায় প্রশ্ন না-করে তাঁরা চলে গেলেন।” সরাসরি তাঁকে প্রশ্ন না-করে কক্ষের বাইরে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগকে ‘দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর কক্ষে থেকে তাঁর বিবৃতি শোনার জন্য রেজ্জাককে ‘ধন্যবাদ’ জানান।
ততক্ষণে কক্ষের বাইরে বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেছেন, বিগত বছরের মতো এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্ব ‘এড়িয়ে’ গেলেন। সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সভায় থাকবেন বলেছিলেন। ভেবেছিলাম গত এক বছরের ঘটনাপ্রবাহের ব্যতিক্রম ঘটবে। কিন্তু তা হল না। এমন অবস্থা তৈরি করা হল, যাতে মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিতে না-হয়। বারবার উনি বিধানসভাকে এড়িয়ে যেতে চান। এত ভয় পাওয়ার কী আছে? দুর্বল অবস্থায় আছেন বলেই বিধানসভায় হাজির থেকে প্রশ্নের জবাব মুখে উচ্চারণ করার মতো নৈতিক জোর পাচ্ছেন না।”
সভার ভিতর মুখ্যমন্ত্রীর ‘জবাবে’র পাশাপাশি কক্ষের বাইরে বামেদের ‘কটাক্ষ’ করে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কাকে ভয় পাবেন মুখ্যমন্ত্রী? যাঁদের দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়? ভয় পেলে জঙ্গলমহলে যেতেন?” অভিযোগকারী সূর্যবাবু, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ বাম নেতারা জঙ্গলমহলে যেতে সাহস পাননি বলেও পাল্টা আক্রমণ করেন পার্থবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘পাহাড়ে যখন আগুন জ্বলছিল, তখন তো ওঁদের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। ওঁরা এখন অধিকার খর্ব করা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই কাণ্ড ওঁরা বিধানসভায় তুলতে দিতেন না।” মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের সবচেয়ে বেশি ‘সম্মান’ দেওয়া সত্ত্বেও এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বামেদের আচরণকে ‘নোংরামি, রাজনৈতিক দ্বিচারিতা ও নিন্দনীয়’ বলে মন্তব্য করেন পার্থবাবু।
প্রশ্ন-তালিকার প্রথমদিকে বামেদের প্রশ্ন না-রাখা নিয়ে গোলমালের সুত্রপাত এ দিন অধিবেশন শুরুর মুখেই। সূর্যবাবু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, “আগে যে তালিকা হয়েছিল, তাতে তিন নম্বরে তাজমুল হোসেনের প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এখন তা নেই।” কী ভাবে এমন হল, সূর্যবাবু তা স্পিকারকে খতিয়ে দেখার দাবি জানানোয় বিমানবাবু বলেন, “তালিকায় কোনও বৈষম্য হয়নি। বকেয়া প্রশ্ন অগ্রাধিকার পায়। আর তাজমুল হোসেনের প্রশ্নের জবাব দিতে সরকার কিছুটা সময় চেয়েছে। তাই রাখা হয়নি।” এর পরেই প্রশ্নতালিকা ছিঁড়ে ফেলে কক্ষত্যাগ করেন বামেরা।
পরে সূর্যবাবু বলেন, “প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রথম দিকে সংখ্যালঘু দফতর নিয়ে তাজমুল হোসেনের প্রশ্ন থাকার কথা ছিল। গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্নও থাকবে জানতাম। দু’টোই রাখা হয়নি।
ঈদ মহম্মদের প্রশ্ন ছিল একেবারে শেষে। সবক’টা প্রশ্নই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের। সেই কারণেই ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিত ভাবে এটা করা হয়েছে। যাতে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে না-হয়।” |