মহেশ ভূপতির কি অলিম্পিকে দেশের স্বার্থে লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গী হয়ে ডাব্লস খেলতে রাজি হওয়া উচিত?
(কিছুক্ষণ ভেবে) অ্যাবসোলিউটলি। দেশের স্বার্থ যেখানে জড়িয়ে, সেখানে সব ইগো সল্ভ করা উচিত। সল্ভ না হলেও একসঙ্গে একশো পারসেন্ট পারফরমেন্স দেওয়া উচিত।
তেমনই ভূমির স্বার্থে কি সৌমিত্র রায় আর সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের একসঙ্গে কাজ করা উচিত নয়?
(বিরক্ত) এটা কেন বলছেন আমি জানি না। এটা কোথা থেকে স্থাপিত হল, তাও জানি না। গত শুক্রবার আমার নতুন ব্যান্ড রবি ও নবীন-এর প্রথম অনুষ্ঠানেও সুরজিতের আসার কথা ছিল। আসতে পারেনি একটা ব্যক্তিগত কারণে। কিন্তু আমায় ফোন করে বেস্ট অফ লাক বলেছিল। এই জিনিসটা লিয়েন্ডার-ভূপতির মধ্যে হয় কি না, আমি জানি না, কিন্তু সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর সৌমিত্র রায়ের মধ্যে এটা আছে।
কিন্তু সারা শহরে এত হোর্ডিংনতুন ব্যান্ড। সেখানে আপনার আর রবিন লাইয়ের মুখ। যাঁরা কিনা আসলে ভূমির সদস্য। ফ্যানেদের মনে তো বিভ্রান্তি তৈরি হবেই।
হ্যাঁ, তাতে হয়েছেটা কী? ভূমির সদস্য বলে কি তার অন্য স্বপ্ন থাকতে পারে না? আমি তো কোনও কন্ট্র্যাক্ট সই করিনি যে এর বাইরে আমি কিছু করিব না। একজনের একটা বাড়ি থাকলে কি সে আরেকটা বাড়ি কিনতে পারে না? একজনের একটা রেস্তোরাঁ থাকলে সে কি আরেকটা চেন তৈরি করতে পারে না?
তার মানে কি রবি ও নবীন আসলে ভূমির চেন?
না। কখনওই নয়। এই তো মুখে কথা বসিয়ে দিচ্ছেন। ওটা উদাহরণ মাত্র। আমার একটা অন্য স্টেজ দরকার ছিল। এমন অনেক গান আছে যেগুলো ভূমির স্টেজে আমি কখনওই গাইতে পারব না। কারণ ভূমির স্টক ভীষণ রিচ। কিন্তু তার বাইরেও অনেক গান আছেইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, যেগুলো আমার গাইতে ইচ্ছে করে। আজকাল আরও করছে। আমি বুঝতে পারছি না, তার জন্য এত প্রশ্ন উঠছে কেনভূমি ভেঙে যাওয়া, হোর্ডিং! আরে, একটা কনসার্ট হলে তো হোর্ডিং পড়বেই। না হলে লোকে জানবে কী করে যে সেটা হচ্ছে? |
কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করছেন, সৌমিত্র রায় কি তা হলে ভূমি ছেড়ে দিলেন?
(ভীষণ উত্তেজিত) সে যে ভাবছে ভাবুক। ঠিক আছে, তা হলে আপনাদের মাধ্যমেই বলি, আমার ভূমি ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমি ভূমির জন্ম দিয়েছি। আই ওয়াজ রেসপনসিব্ল ফর ভূমি-জ বার্থ। আর আজ আমার বড় ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে আমি আমার ছোট ছেলেকে দেখব? সেটা তো হয় না!
হচ্ছে তো?
(প্রায় ফেটেই পড়বেন) ভূমির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি কেউ থেকে থাকে, সেটা আমি! আমার বাবা মারা যাবার পরদিন আমি ভূমির অনুষ্ঠান করেছি। আমার মা মারা যাবার পরদিন আমি ভূমির হয়ে পারফর্ম করেছি। দশ বছর আগের কথা। আমার ইসিজি-র রেজাল্ট খুব খারাপ এসেছিল। হল ভর্তি। নজরুল মঞ্চ। ভূমি আর চন্দ্রবিন্দুর প্রোগ্রাম ছিল। রটে গেছে ভূমি আসবে না। সেদিন আমি আমার শরীরকে ত্যাগ করে ভূমির জন্য স্টেজে উঠেছি। আমার বাবা, দাদা সবাই বারণ করেছে। আমি মানিনি।
কাজেই আমার কমিটমেন্ট নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন করে, সে কিন্তু খুব ভুল করছে।
কিন্তু এটা তো ঘটনা যে আপনি নতুন ব্যান্ড করছেন, সুরজিৎও ভূমির বাইরে আলাদা অনুষ্ঠান করছেন...
সুরজিৎ তো আমার অনেক আগে থেকেই শুরু করেছে। আমি তো এই সেদিন শুরু করলাম।
ভূমির দুই স্তম্ভই তো আলাদা পরিচয় খুঁজছে।
দাঁড়ান, দাঁড়ান। আমার যখন ছুটি নেওয়ার কথা হয়েছিল, তখন সুরজিৎ ভেবেছিল আলাদা প্রোগ্রাম করতে হবে। কিন্তু তারপর আমাদের যখন মিটিং হল, তখন ও বলল, ‘সোমু, তুই ছুটিটা নে।’ কারণ ও তখন বুঝেছিল কেন আমি ছুটিটা চাইছি। সেই মিটিংয়ে ঠিক হয়েছিল কেউ যদি লম্বা ছুটি নিতে চায়, সে যেন অনেক আগে থেকে জানিয়ে দেয় দলকে। এই জিনিসগুলো তো বাইরে আসে না। আজও আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি কিন্তু ভূমি।
রবি ও নবীন-এর কোনও অনুষ্ঠান যদি ভূমির সঙ্গে ক্ল্যাশ করে, তা হলে কী করবেন?
বললাম তো, ভূমি ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আজ যদি রবি ও নবীন-এর কোনও প্রোগ্রাম আসে, আমি আগে দেখব সেদিন ভূমির কোনও এনগেজমেন্ট আছে কি না। যদি ভূমির কোনও প্রোগ্রাম না থাকে, তা হলেই আমি রবি ও নবীন-এর প্রোগ্রাম নেব।
এটা আমরা মিটিং করে ঠিক করেছি। সেই মিটিংয়ে সবাই ছিল।
গত ডিসেম্বরে যখন ভূমিতে ফাটল বলে আপনি লিখলেন আমাদের অনেক শুভানুধ্যায়ীই ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই একজন সেই মিটিংয়ে মিডিয়েট করেছিলেন। এবং আমি এটাও বলতে চাই যে ব্যাপারটা সুরজিৎ আর আমি বসে মিটিয়ে নিতে পারতাম। তার জন্য মিডিয়ায় যাওয়ার দরকার ছিল না।
নিলেন না কেন? সেটা মিডিয়া পর্যন্ত পৌঁছল কেন?
তা আমি কী করে জানব। আমি তো বলিনি আপনাকে (হাসি)। আরে একটা সংসারের মধ্যে মনোমালিন্য তো হতেই পারে। এক দাদা তার ভাইকে বকতেই পারে। বা ভাই দাদাকে উপদেশ দিতেই পারে। আমাকে যদি সুরজিৎ একবার বলত হ্যাঁ রে, তুই এ সময়ে ছুটিটা নিস না, তা হলেই ব্যাপারটা মিটে যেত। কিন্তু সংসারের কথাটা বাইরে কেন যাবে! সংসারে তো ভালবাসা, মমত্ব এসব থাকবে!
সেই ভালবাসা, মমত্বয় তার মানে চিড় ধরেছিল?
দুঃখ পেয়েছিলাম খুব। এ তো নয় যে ১২ বছর ধরে আমাদের মধ্যে সব কিছু স্মুদ ছিল। কিন্তু সেটা তো আমরা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিয়েছিলাম। সেটা পাবলিক হয়নি। সেই প্রথম বার ব্যাপারটা হল। মনে হল বুকে যেন কে একটা তির বিঁধিয়ে দিল। দেখুন, ভূমির পেছনে আমি যত ঘাম ঝরিয়েছি, আমার মনে হয় না আর কেউ সেটা করেছে।
কিন্তু সে দুঃখটা যে এড়ানো গেল না, সেটা কি সুরজিতের ইগোর জন্য?
এ উত্তরটা সুরজিৎ আরও ভাল দিতে পারবে।
কিন্তু ভূমির সব সদস্যেরই যে ছুটি নেওয়া উচিত, তারা গান লিখতে পারছেন না, এই বলে ফেসবুকে তো আপনিই প্রথম পোস্ট করেছিলেন।
সেটা তো আমার নিজস্ব মতামত ছিল। তবে হ্যাঁ, এখন দাঁড়িয়ে মনে হয় আমার ওই পোস্টটা করা উচিত হয় নি।
তা হলে সোজাসুজি একটা প্রশ্ন করিআপনাদের দু’জনের মধ্যে কি ইগোর সমস্যা হচ্ছে?
একেবারেই হচ্ছে না। বরং এটা বলব, যে ওই সমস্যাটা হওয়াতে আমাদের বোঝাপড়াটা আরও ভাল হয়ে গেল। সুরজিৎ ইন ফ্যাক্ট আমায় বলেছে যে ‘সোমু, তুই আর আমি ছাড়া কিন্তু ভূমি হবে না।’ আমি তার উত্তরে বলেছি, ‘ইউ আর অ্যাবসোলিউটলি রাইট ব্রাদার।’
এই যে রবি ও নবীন-এর একটা ইউএস ট্যুর আছে, এটা কিন্তু আমি মার্চ মাস নাগাদ সুরজিৎকে জানিয়ে দিয়েছি। ও আর হেমন্ত, ওরাও যাওয়ার চেষ্টা করছে। তো হোয়াই নট? ভূমি হচ্ছে আমাদের ফার্স্ট চাইল্ড। রবি ও নবীন আমার সেকেন্ড চাইল্ড। আর এটা বলুন তো নিজের সন্তানের সঙ্গে একই স্টেজে পারফর্ম করাটা কি পাপ? এটা তো যে কোনও পিতার স্বপ্ন। আমায় তার জন্য এত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে কেন? আজ যদি সুরজিৎ ওর মেয়ের সঙ্গে স্টেজ নেয়, আই উইল বি দ্য ফার্স্ট পার্সন টু অ্যাকম্পানি দেম অন ড্রামস। কেউ আমায় আটকাতে পারবে না।
তার মানে কোথাও সেই ডিসেম্বর মাসের ক্ষতটা এখনও আছে?
আমার শিক্ষা হয়েছে। ভেতরের জিনিস যেন বাইরে না যায়। আমি যদি একটা বিষাক্ত যক্ষ্মার রুগি হই, তা হলে আমি কিন্তু আপনার সঙ্গে মিশব না। কারণ সেই বিষটা আপনার মধ্যে ঢুকে যাবে।
ভূমির মধ্যে কি সে রকম বিষ ঢুকেছে?
নাহ! ঢুকে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই ভুল বোঝাবুঝির পর মিটিং-এ সব সমস্যা পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম। এখন আমাদের একসঙ্গে দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না যে আমাদের মধ্যে কখনও কোনও সমস্যা হয়েছিল।
‘রবি ও নবীন’ যখন তৈরি করেন তখন সুরজিৎকে জানিয়েছিলেন?
অবশ্যই। আমি কোনও কাজ লুকিয়ে করি না। অনেকে আছে, যারা করে।
তারা কারা? তারা কি ভূমিরই সদস্য?
সে কথা আমি বলব না। তবে আমি অন্তত ‘একলা চলো রে’-তে বিশ্বাস করি না।
তাই? তা আপনি আর সুরজিৎ শেষ কবে একসঙ্গে বসে গান বেঁধেছেন?
বহু দিন আগে। ‘লালে লালেশ্বরী’র সময়ে।
তা হলে?
তা হলে কী? আমরা এই ভাবেই কাজ করি। কোনও অ্যালবাম করার আগে বসি একসঙ্গে। অ্যালবাম নেই তাই হচ্ছে না।
এ বছর ভূমির কি কোনও অ্যালবাম বেরোবে?
বেরোতেই পারে। ভাল অফার পেলে কেন নয়?
ইন্ডাস্ট্রির খবর ভাল অফার রয়েছে, কিন্তু আপনি বলছেন নতুন মৌলিক গান নেই?
ইন্ডাস্ট্রির খবরটা আপনার কাছেই প্রথম পেলাম। আমায় যদি কেউ বলত ভূমির জন্য আমি অবশ্যই কিছু একটা করতাম।
আপনি নতুন গান লিখছেন?
কিছু তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো ভূমির জন্য, না কি অন্য কিছুমানে থিয়েটার বা কোনও সিনেমার জন্য, সেটা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। বাকিদের সে গান শুনিয়ে তবেই নিশ্চিত হতে পারব।
‘নজেন এক্সপ্রেস’ তা হলে বেলাইন হয় নি?
একেবারেই না। পুরোদমে চলছে। |