আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১৮ মাসে সব থেকে নীচে নেমে এসেছে অশোধিত তেলের দাম। কিন্তু সেই সুবিধা নিয়ে দেশে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকার বিরামহীন পতন। শুক্রবার এই গতি ত্বরান্বিত হল আরও। ডলারের সাপেক্ষে আরও ৮৫ পয়সা পড়ে টাকা নেমে গেল ৫৭ টাকারও নীচে। দিনের শেষে ডলারের দাম দাঁড়াল ৫৭.১৫ টাকা। অনেকেরই আশঙ্কা, খুব শীঘ্রই তা ছুঁয়ে ফেলতে পারে ৫৮ টাকার তলানি।
বাজারে এই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে টাকার আজকের পতন দেখার পর। এ দিন এক সময়ে ডলারের দাম দাঁড়িয়েছিল ৫৭.৩৭ টাকা। আগের দিনের তুলনায় যা ১.০৭ টাকা বেশি। পরে ইতিহাসের সর্বনিম্ন এই অবস্থান থেকে টাকার দাম কিছুটা উঠলেও, ভারতীয় মুদ্রার শক্তি সম্পর্কে বাজারের আস্থা এখন তলানিতে। বিশেষত, এ দিন এই আস্থা আরও টলিয়ে দিয়েছে এক দিনে ডলারের এক টাকারও বেশি দাম বৃদ্ধি। উল্লেখ্য, গত ১ বছরে টাকার মূল্য হ্রাস হয়েছে ২০%। চলতি সপ্তাহে ৩%।
টাকার এই বেনজির পতনই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পেট্রোলের দাম কমানোর ক্ষেত্রে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমে এখন ৯০ ডলারের আশেপাশে। সেই অনুযায়ী দেশে পেট্রোলের দাম লিটারে ২.২০-২.৩০ টাকা কমাতে পারত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। কিন্তু পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি জানান, টাকার দাম দ্রুত কমায় এখনই সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল কিনতে হয় ডলারে। এখন তার দাম বেড়ে যাওয়ায় একই অঙ্কের ডলারের জন্য গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানি করা অশোধিত তেল ও পেট্রোলের দামের মধ্যে ব্যারেল-পিছু ফারাক ৩ ডলার। তাই এখনই পেট্রোলের দাম দাম কমালে অদূর ভবিষ্যতে তা ফের বাড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন তেল সংস্থার কর্তারা। তবে অশোধিত তেলের দাম কমার পরেও দেশের তেল সংস্থাগুলি যে ভাবে ‘একজোট হয়ে’ দাম অপরিবর্তিত রেখেছে, তার উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশন।
তা ছাড়া, অশোধিত তেলের কম দামও দেশের মূল্যবৃদ্ধির হার কমাতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কে সি চক্রবর্তী। তাঁর যুক্তি, অশোধিত তেলের দাম কমার সুবিধা কেড়ে নিচ্ছে ডলারের চড়া দর। যা মূল্যবৃদ্ধি কমার পথে অন্যতম বাধা।
কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, টাকার দামের পতন রুখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। পদক্ষেপ করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। এ দিনই যেমন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ৩ রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে, তেল আমদানি করতে প্রয়োজনীয় ডলারের ৫০% একাধিক ব্যাঙ্কের পরিবর্তে একটিই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে কেনার। যদিও এতে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী। পাশাপাশি, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমায় আমদানিকারী সংস্থাগুলির ডলারের চাহিদা বেড়েছে প্রভূত পরিমাণে। তাই এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাওয়াই কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। |