কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) চার পাঁচ জন জঙ্গি সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তারাই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গোপন ডেরায় বৈঠক করে নাশকতার ছক কষছে বলে খবর পেয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা পুলিশ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলে বন্দি ছিল ওই জঙ্গিরা। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, আগের মতোই দ্বিমুখী ছকে কাজ হাসিল করতে চাইছে কেএলও। এক দিকে, জঙ্গি সংগঠনে তরুণ-তরুণীদের টেনে নাশকতা চালিয়ে আতঙ্ক তৈরির ছক কষা হচ্ছে। পাশাপাশি, নানা সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে প্রকাশ্যে আন্দোলন জোরদার করার কাজে ‘সাহায্য’ করতেও তৎপর কেএলও।
পুলিশ সূত্রের খবর, মাস খানেক আগে দার্জিলিঙের খড়িবাড়িতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সুজিত সরকার নামে দক্ষিণ দিনাজপুরের এক বাসিন্দা। তার সঙ্গে ছিল আরও এক যুবক। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ওই যুবক জানিয়েছে, মাসে পাঁচ হাজার টাকার ‘বেতনে’ সে কেএলও-তে যোগ দিতে রাজি হয়েছিল। নতুন লোক জোগাড় করাই ছিল তাঁর দায়িত্ব। গত সাত-আট মাসে জনা তিনেক নতুন ছেলেকে সে সংগঠনের নেতাদের হাতে তুলেও দিয়েছে বলে দাবি।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরে পাহাড়ে জিটিএ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কেএলও ফের সংগঠন জোরদার করতে আসরে নেমেছে। মহাকরণ সূত্রেই জানা গিয়েছে, কেএলও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করতেই পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিদারদের মধ্যে গত ক’বছরে যাঁরা নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিলেন, তাঁরা ফের সক্রিয় হচ্ছেন। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার পুলিশ সুপারেরাও বিষয়টি জানিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে। এক পুলিশকর্তা জানান, নতুন পরিস্থিতিতে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর পুরনো নেতাদের বর্তমান জীবনযাপন সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। ওই সংগঠনের কারা জেলে আছে, কারা-ই বা জামিন পেয়ে আগের জীবনে ফিরে গিয়েছে, সে সব খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মহাকরণ সূত্রের খবর, পুলিশ সুপারদের পাঠানো রিপোর্ট নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন পুলিশকর্তারা। সেখানে অবিলম্বে কেএলও-র বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সেই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা পুলিশ রাজ্যকে জানিয়েছে, অসমের ন্যাশনাল ডোমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড (এনডিএফবি) জঙ্গি গোষ্ঠীটির সঙ্গে নতুন করে গাঁটছড়াও বেঁধেছে কেএলও। মালদা জেল থেকে সম্প্রতি যে তিন বন্দি ছাড়া পেয়েছে তাদের এক জনের বাড়ি অসমে। সে-ই মূলত এনডিএফবি-র সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “এক সময় আলফা-র কাছ থেকে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য পেয়েছিল কেএলও। কিন্তু ভাঁড়ারে বেশি টাকা না থাকায় বর্তমানে তারা নওগাঁও, কোকড়াঝাড়, বঙ্গাইগাঁও ও ধুবুড়ির সক্রিয় ছোট জঙ্গি গোষ্ঠীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে।” রাজ্যকে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা পুলিশ বলেছে, ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মোটা টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে কেএলও। প্রাণভয়ে তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাংলাদেশে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেখান থেকে পালিয়ে অসমে ডেরা বেঁধেছেন কেএলও-র সর্বোচ্চ নেতা জীবন সিংহ। তাদের মোবাইল ‘মনিটর’ করে রাজ্যের গোয়েন্দা পুলিশও নিশ্চিত হয়েছে, উত্তরবঙ্গে নতুন করে ‘জঙ্গি নিয়োগ’ নিয়ে জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির কিছু কেএলও নেতা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মন্ত্রকের পাঠানো সূত্র ধরে অসম পুলিশও জানিয়েছে, কিষেণজির মৃত্যুর বদলা নিতে জঙ্গলমহলে দখলদারি ফিরে পেতে চাইছে মাওবাদীরা। ওই কাজে কেএলও-র সাহায্য চেয়েছে তারা। |