বাইরের বড় সংস্থাকে ঠাঁই ওষুধের বরাত-তালিকায়
বাদ রাজ্যের ৫০, বিতর্ক
মান খারাপ, এই অভিযোগে সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহকারীর তালিকা থেকে পশ্চিমবঙ্গেরই পঞ্চাশটি সংস্থার নাম কেটে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। আর তা ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি অভিযোগটি অস্বীকার তো করেইছে, সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হয়েছে রাজ্যের শিল্পমহলও। এর জেরে লক্ষাধিক মানুষের রুজি হারানোর আশঙ্কার পাশাপাশি হাসপাতালে পরিষেবা-হানির অভিযোগও উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: সরকারি হাসপাতালে ওষুধ জোগানোর বরাত দেওয়ার জন্য এত দিন সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স (সিএমএস)-এর তালিকায় শ’আড়াই ওষুধ প্রস্তুতকারীর নাম নথিভুক্ত ছিল। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সংস্থা ছিল অন্তত ১১০টি। নতুন তালিকায় মোট ১৮২টি সংস্থাকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৬০টি। অর্থাৎ, এ রাজ্যের নথিভুক্ত সংস্থাগুলির প্রায় ৪৫% নতুন তালিকায় ঠাঁই পায়নি! তাদের জায়গায় ঢুকেছে মূলত মহারাষ্ট্র-গুজরাত-হরিয়ানা-হিমাচল-রাজস্থান-তামিলনাড়ুর বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি।
এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে রাজ্যের শিল্পমহলে। স্বাস্থ্য দফতরের এ হেন সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের ওষুধশিল্প মারাত্মক ঘা খাবে বলে অভিযোগ উঠেছে। বস্তুতই নাম-কাটা গিয়েছে যাদের, তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র সংস্থা। এনআই ফার্মাসিউটিক্যালস, ক্যাথলেট, ডায়মন্ড ড্রাগস, কেমিকোস, ফেনপ, ইস্ট ইন্ডিয়া কেমিক্যালসের মতো তেমন বেশ কিছু সংস্থার আশঙ্কা, সরকারি বরাত হাতছাড়া হওয়ায় রাজ্যের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। বিষয়টি নিয়ে তারা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। মন্ত্রী কী বলেন?
পার্থবাবু বিষয়টি “যথাসময়ে বলব’’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাদ যাওয়া বিভিন্ন সংস্থার তৈরি ওষুধের মান কি সত্যিই খারাপ?
সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির দাবি, অভিযোগটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তাদের তরফে রবীন্দ্রনাথ রায়-মিহির সরকার-সুব্রত পাল-শঙ্কর দাশগুপ্ত-অশোক সরকারদের বক্তব্য: গত যে দশ-পনেরো বছর ধরে তাঁরা সরকারি হাসপাতালে ওষুধ জুগিয়ে আসছেন, তার মধ্যে মান নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। এখন উঠছে কেন?
এ প্রসঙ্গে ওঁরা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের আঙুল তুলছেন স্বাস্থ্য দফতরের কিছু অফিসারের দিকে। “সম্প্রতি দফতরের প্রোকিওরমেন্ট বিভাগে নতুন কিছু অফিসার এসেই বলতে শুরু করেন যে, বেশি সংস্থার কাছ থেকে ওষুধ কেনা হবে না। উৎপাদন ক্ষমতা বেশি, এমন কয়েকটা বড় কোম্পানিকেই শুধু লিস্টে রাখা হবে।” জানাচ্ছেন বাদ পড়া সংস্থাগুলির মালিকদের একাংশ। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলেন, এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে বছরে শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেটই লাগে প্রায় ৭০ কোটি টাকার। পশ্চিমবঙ্গের কোনও সংস্থার পক্ষে একা অতটা জোগানোর ক্ষমতা নেই। তাই এত দিন এখানকার পঞ্চাশ-ষাটটা কোম্পানি মিলে পুরোটা সরবরাহ করত। এখন স্থানীয় ওই ছোট ছোট সংস্থাকে বাদ দিয়ে ভিন রাজ্যের কয়েকটি বহুজাতিকের নাম বরাত-তালিকায় ঢোকানো হয়েছে বলে ওঁদের অভিযোগ।
এ-ও অভিযোগ, নতুন ব্যবস্থার কুফল সরকারি স্বাস্থ্য-পরিষেবায় ইতিমধ্যেই প্রকট। কী রকম?
বরাত-বঞ্চিত কিছু সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, হাতে গোনা ক’টি সংস্থাকে ওষুধ সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ অনিয়মিত হতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের কাছেও এর সমর্থন মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রের কথায়, “শুধু জেলায় নয়, খাস কলকাতারও কিছু হাসপাতালে ওষুধ-গজ-ব্যান্ডেজ-তুলো-স্যালাইন ইত্যাদির অভাব দেখা দিয়েছে।” কর্তৃপক্ষ কতটা সজাগ?
দফতরের কর্তারা অবশ্য উদ্বেগের কিছু দেখছেন না। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “সমস্যা কিছু নেই।” সেই সঙ্গে বাদ পড়া সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগেরই পুনরাবৃত্তি করছেন তিনি “এত দিন এ রাজ্যের ছোট ছোট কিছু সংস্থা সরকারি তালিকায় নাম তোলার তাগিদে সস্তায় ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিত। দাম কম রাখতে গিয়ে দেওয়া হচ্ছিল অত্যন্ত খারাপ মানের ওষুধ। এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ, ওষুধের মানের সঙ্গে কোনও আপস করা যাবে না। তাই ওদের বাদ দেওয়া হয়েছে।”
সরকারি তালিকায় না হয় বাদ পড়ল। কিন্তু ওদের তৈরি সেই ‘নিম্নমানের’ ওষুধ তো বেসরকারি হাসপাতাল বা ফার্মাসিতে অবাধে বিক্রি হবে! সেটা আটকানো হচ্ছে না কেন? সব জেনেও সরকার কেন এ ব্যাপারে হাত গুটিয়ে?
গুরুতর প্রশ্নটা কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। তাঁদের ব্যাখ্যা, “নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি রুখতে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ রয়েছে। তারাই নজরদারি করবে।”
ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ইন্সপেক্টরের সংখ্যা না-বাড়ালে এবং পরিকাঠামোর উন্নতি না-হলে তাঁদের পক্ষে এই নজরদারি অসম্ভব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.