|
|
|
|
মোদীর পক্ষ নিয়ে নীতীশের সমালোচনায় সরব সুষমাও |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
নীতীশের আক্রমণের মুখে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত আগেই নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ নিয়েছিলেন। এ বার নীরবতা ভাঙলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। সাংমার প্রতি সমর্থন ঘোষণার সাংবাদিক বৈঠকে লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ জানালেন, মোদীর প্রতি নীতীশ কুমারের মন্তব্য ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ও ‘দুর্ভাগ্যজনক’। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র প্রশ্নে বেশ কিছু দিন ধরেই নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করার বিরোধিতা করছিলেন নীতীশ। কিন্তু তার পরেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নীতীশের বিরোধিতা করে মোদীর পক্ষ নিয়ে সরব হন মোহন ভাগবত। আরএসএস-প্রধানের বার্তা পাওয়ার পরেই আজ সুষমার মতো বিজেপির শীর্ষ নেতা নীতীশের সমালোচনায় নামলেন। পাশে বসে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিও সুষমার সুরে সুর মেলান।
মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পথে নীতীশ বাধা হয়ে ওঠায় এবং তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় খুশি বিজেপির অনেকেই। বিজেপির মধ্যে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান, তাঁদের অনেকেই নীতীশকে সামনে রেখে মোদীর পথ আটকাতে চান। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কৌশল রচনার মধ্যেই নীতীশ প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে বিতর্ক আচমকা উস্কে দেওয়ায় তাঁরা মোটেই খুশি নন। বিজেপির এই নেতারা মনে করেন, এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। বরং এখন এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি না করে নীতীশ যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ-র সঙ্গে থাকতেন, তা হলে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে আরও চাপে ফেলা যেত।
ঘনিষ্ঠ মহলে জেটলি বলেছেন, মোদীর প্রতি নীতীশের আপত্তির কারণ জানা। কিন্তু কী কারণে তিনি এনডিএ-সমর্থিত প্রার্থীকে ছেড়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করতে গেলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জেটলি জানান, তাঁর সঙ্গে নীতীশের প্রায় রোজই কথা হলেও এ ব্যাপারে খুব একটা গ্রহণযোগ্য যুক্তি পাওয়া যায়নি। তবে নীতীশ ও শিবসেনার মতো শরিকরা যাতে পূর্ণ সাংমাকেই সমর্থন করেন, সে জন্য তাঁরা যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেটলি। নীতীশ হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ায় তাঁর নিজের দল জেডি(ইউ)-এর মধ্যেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘনিষ্ঠ মহলে জেডি(ইউ) নেতারা বলেছেন, ‘তরবারি তখনই বের করতে হয়, যখন যুদ্ধ হচ্ছে। তা না হলে অসময়ে হুঙ্কার ছেড়ে কোনও লাভ নেই’। তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয় নিয়ে নীতীশ তাঁর অবস্থান অনেক আগে থাকতেই জানিয়ে দিলেন। ফলে যাঁর বিরোধিতা তিনি করছেন, তিনি নিজের ঘর গোছানোর বিস্তর সুযোগ পেয়ে যাবেন।
বিজেপি নেতারাও মনে করছেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে নীতীশ যে এনডিএ জোট ছাড়তে পারেন, সে ব্যাপারে এখন থেকেই এত কঠোর বার্তা দিয়ে লাভ কী হল? উল্টে মোহন ভাগবত সরাসরি মোদীর পাশে দাঁড়ালেন। মোদী বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকার কৌশলই নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর হয়ে মুখ খুললেন স্বয়ং সঙ্ঘপ্রধান। আর এক বার যদি সঙ্ঘপ্রধান প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান জানিয়ে দেন, তা হলে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে তার অন্যথা করারও উপায় নেই। অগত্যা সুষমাদের আজ নীতীশেরই সমালোচনার পথে হাঁটতে হল।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দলের মধ্যে মোদীর পক্ষে যেমন সমর্থন রয়েছে, তেমনই মোদী-বিরোধী শক্তিও নেহাৎ কম নয়।” তাঁর বক্তব্য, গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও মোদী-বিরোধী নেতা কেশুভাই পটেল এখনও দিল্লিতে একের পর এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করে চলেছেন। আগামিকাল মনমোহন-সরকারের পেট্রোলের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিজেপি দেশজুড়ে যে ‘জেল-ভরো’ আন্দোলন করছে, তাতে মোদী-বিরোধী সঞ্জয় জোশী নামছেন। সেই সঞ্জয় জোশী, যাঁকে মোদীর কোপে পড়ে প্রথমে কার্যসমিতি ও পরে বিজেপির সদস্যপদ থেকেই ইস্তফা দিতে হয়েছে। তিনি দেশের অন্য কোথাও নয়, রাজধানী দিল্লি ও তার উপকণ্ঠে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন। গডকড়ীর প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছাড়া এটি সম্ভব নয়। ফলে নীতীশ যদি আরও অপেক্ষা করে উপযুক্ত সময়ে বিষয়টি তুলতেন, তা হলে অনেক বেশি কাজ হত। |
|
|
|
|
|