|
|
|
|
তাড়াহুড়ো করে পাকা কথা দিতে চান না মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কম-বেশি প্রায় সব দলই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। শুধু জানা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান। তিনি কী করবেন, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। শাসক ও বিরোধী দুই জোটেই এখন দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে মমতাকে নিয়ে।
তবে মমতা এখনই কোনও পক্ষকে ‘পাকা কথা’ দিতে চান না বলেই তৃণমূলের অধিকাংশ নেতার মত। অবস্থান মোটের উপর কংগ্রেস-বিরোধী থাকলেও সাংমার পক্ষে ভোট দেবেন কি না, সে ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মনস্থির করেননি তৃণমূল নেত্রী। দলের এক সাংসদের কথা, “এখনও তো অনেক সময় আছে। দেখা যাক না, সাংমা কতটা সমর্থন জোগাড় করতে পারেন।” তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, কোনও রকম তাড়াহুড়ো মমতা করতে চাইছেন না। পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রাখছেন তিনি।
সিপিএম প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে বিজেপি-র অবশ্য আশা, মমতা সাংমার পক্ষেই ভোট দেবেন। মমতাকে পাশে পেলে এক দিকে যেমন নিজেদের ঘর ভাঙার ধাক্কা (এনডিএ-র দুই শরিক জেডিইউ এবং শিবসেনা জানিয়ে দিয়েছে, তারা প্রণবের পক্ষেই ভোট দেবে) খানিকটা সামলানো যাবে, তেমনই ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে বড় ধাক্কা দেওয়া যাবে কংগ্রেসকে। তবে কৌশলগত কারণেই সরাসরি মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বিজেপি। বিভিন্ন সূত্রের পাশাপাশি খোদ সাংমাকে দিয়েও বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে তাঁকে। সাংমা কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করবেন বলেও খবর। যদিও তাঁর আসার কোনও খবর আজ রাত পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের কাছে নেই। তবে সাংমা এলে মমতা দেখা করবেন বলেই তৃণমূল সূত্রের দাবি।
মমতার সঙ্গে দেখা করে সমর্থন চাওয়ার ভাবনা রয়েছে প্রণবেরও। কারণ, মমতা ইউপিএ ছেড়ে চলে যান, এটা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড মোটেই চান না। মুলায়ম সিংহ যাদব যে কংগ্রেসের কাছে ‘অপরিহার্য’ নন, তা নানা ভাবে বুঝিয়ে মমতার মন জয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রণবও মমতাকে ‘বোন’ বলে সম্বোধন করে ইতিবাচক
বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর মন এখনও বিরূপই। শুক্রবার রাতে কলকাতা যাবেন প্রণব। শনিবার মিরিটির বাড়িতে কাটিয়ে রবিবার তাঁর দিল্লি ফেরার কথা। কিন্তু এই সফরে প্রণবের সঙ্গে মমতার দেখা হওয়ার, এমনকী ফোনে কথা বলার সম্ভাবনাও ক্ষীণ বলেই তৃণমূল শিবিরের মত।
কংগ্রেস চাইছে, মমতা যদি প্রণবের পক্ষে ভোট না-ও দেন, তা হলে অন্তত ভোটদানে বিরত থাকুন। (বিশেষ করে সিপিএম প্রণবকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মমতার ভোট পাওয়ার আশা কংগ্রেস আর করছে না।) মমতা-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সাংমার পক্ষে কতটা সমর্থন এক জোট হচ্ছে, সেটা দেখে নিতে চান তিনি। সাংমা একেবারেই নগণ্য ভোট পাওয়ার অবস্থায় থাকলে মমতা হয়তো ভোটদানে বিরত থাকবেন। কিন্তু সেটা না হলে তৃণমূলের ভোট সাংমা পেয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মমতার লক্ষ্য হল, প্রণব জিতে গেলেও তাঁর জয়ের ব্যবধান যতটা সম্ভব কম রাখা। যা হলে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে কড়া বার্তা দেওয়া যাবে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।
পাশাপাশি, তৃণমূল সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে যে, প্রণবকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে সিপিএম বুঝিয়ে দিয়েছে তিনি তাদেরও প্রার্থী। বস্তুত, এই ঘটনায় কংগ্রেস-সিপিএম ‘জোট’ই স্পষ্ট হয়েছে। সেই জোটের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বার্তা দিতে গেলে সাংমার পক্ষে ভোট দেওয়াটা জরুরি।
কংগ্রেসের একটা মহল অবশ্য বলছে, মমতা যদি শেষ পর্যন্ত সাংমাকে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন, তা হলে তাঁর দলের সাংসদ-বিধায়কদের একটা অংশ সেই নির্দেশ অমান্য করে প্রণবকে ভোট দিতে পারেন। অতএব, ভোটদানে বিরত থাকাই তাঁর পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু তৃণমূল শিবিরে এমন আশঙ্কাকে আমল দিতে নারাজ। তাদের দাবি, দলের সবাই নেত্রীর নির্দেশ মেনেই চলবেন। উল্টে কংগ্রেসের ভিতরেই বিস্তর ক্রস ভোটিং হবে বলে দলে জানিয়েছেন মমতা।
রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি মমতা অবশ্য এই রাষ্ট্রপতি ভোটকে নীতিগত লড়াইয়ের জায়গাতেও নিয়ে গিয়েছেন। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে ‘মেকিয়াভেলির ধাঁচে কূট রাজনীতির’ বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আবেদনও জানিয়েছেন। আজ ইস্কনের রথযাত্রার সূচনা করে ফেসবুক পেজে যে পোস্ট মমতা করেছেন, তা-ও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি লিখেছেন, “প্রভু জগন্নাথ বাধা এবং অশুভ শক্তিকে জয় করে এগিয়ে চলার সাহস ও বিবেক বোধকে জাগ্রত করেন। এই সুন্দর পৃথিবীর জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি আর সেই জাগ্রত বিবেকই প্রভুর কাছে আমার প্রার্থনা।” |
|
|
|
|
|