|
|
|
|
এ বার ফাটল বাম শিবিরেও |
প্রণব-প্রশ্নে জেদাজেদিতে গেলেন না কারাট |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
ইউপিএ এবং এনডিএ শাসক-বিরোধী দুই জোটে ভাঙনের পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে এ বার ফাটল বাম শিবিরেও। চার বাম দলের মধ্যে দু’টি সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক আজ জানিয়ে দিল, ইউপিএ-র প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই সমর্থন করবে তারা। ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিআই এবং আরএসপি।
আজ বিকেলে চার বাম দলের বৈঠকের আগে সকালে সিপিএমের নিজস্ব অবস্থান ঠিক করতে পলিটব্যুরোর বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে প্রণববাবুকে সমর্থন করা নিয়ে ভোটাভুটি না হলেও যথেষ্ট তর্কবিতর্ক হয়েছে। প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামীদের বক্তব্য ছিল, ব্যক্তিগত ভাবে প্রণববাবু সম্পর্কে তাঁদের কোনও নেতিবাচক মনোভাব নেই। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি কখনওই ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনও অবস্থান নেয় না। প্রণবের নেতৃত্বে যে উদার আর্থিক নীতি ইউপিএ সরকার গ্রহণ করছে, দল সেই নীতির বিরোধিতা করে। আর সেই কারণেই কংগ্রেসের প্রার্থীকে নীতিগত ভাবে সমর্থন করতে রাজি ছিলেন না তাঁরা।
অন্য দিকে বাংলার নেতাদের যুক্তি ছিল, মমতা যে হেতু প্রণবের কড়া সমালোচক, এই অবস্থায় প্রণবের পাশে দাঁড়ালে রাজ্যে তাঁদের রাজনৈতিক সুবিধা হবে। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব আরও বাড়ানো যাবে। তা ছাড়া, এক জন বাঙালির রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ায় রাজ্যের আমজনতার আবেগের প্রসঙ্গও ওঠে।
শেষ পর্যন্ত প্রণবকে সমর্থনের সিদ্ধান্তই গৃহীত হয়। যা এক অর্থে আলিমুদ্দিনের জয় হলেও কারাটের পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না বলেই সিপিএমের অন্দরমহলের মত। কারাট-ঘনিষ্ঠ নেতাদের যুক্তি, প্রণবকে সমর্থনের বিষয়টিকে পরমাণু চুক্তির মতো নীতিগত প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করেননি সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। আর সেই কারণেই বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটি করাতে চাননি। ভোটাভুটি হলে কারাটের জয় সুনিশ্চিত ছিল। আবার চাইলে বিষয়টি অনায়াসে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে যেতে পারতেন তিনি। সেখানে কারাট-পন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত।
সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, রাজ্য নেতৃত্ব কারাটের কাছে আবেদন করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে মতাদর্শ বা নীতির প্রশ্ন না করতে। রাষ্ট্রপতি যদিও দলীয় প্রার্থী, কিন্তু রাষ্ট্রপতির পদটি মূলত দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের পাশাপাশি সীতারাম ইয়েচুরি ও অন্য রাজ্যের নেতৃত্বের একাংশও প্রণবকে সমর্থনের পক্ষেই মত দেন। কারাটও সে যুক্তি মেনে নেন। পরে বলেন, “দেবগৌড়া, চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গেও আলোচনা করেছি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
প্রণবকে সমর্থনে সায় দিলেও কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যে যুক্তি বিমান বসুরা দেখিয়েছেন তা কারাট মানেননি বলেই সিপিএম সূত্রের মত। নেতাদের বক্তব্য, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি করা কারাটের দীর্ঘমেয়াদি রণনীতির অঙ্গ নয়। তা স্বল্পমেয়াদি কৌশল হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তিনি দলীয় সংগঠনের সংস্কারেরই পক্ষপাতী।
তবে বাংলার আবেগের যে কথা বৈঠকে উঠেছিল, তা মেনে নিয়েছেন কারাট। এক জন বাঙালিকে ভোট না দেওয়াটা বাংলার মানুষ ভাল চোখে দেখবে না, নীতিগত প্রশ্ন তুলে এই যুক্তি খণ্ডন করেননি তিনি।
বাম শরিক সিপিআই ভোটদানে বিরত থাকবে বললেও তারা যে প্রণবের বিপক্ষে, তা নয়। সিপিআই সূত্রের বক্তব্য, “আমরা এমন কোনও কাজ করতে পারি না, যাতে লোকে আমাদের কংগ্রেসের বি-টিম বলে।” আজ সকালে সিপিআইয়ের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে তাই ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত যদিও বলছেন, “এটা রাজনৈতিক নির্বাচন। ইউপিএ প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়া মানে তাদের নীতিকে সমর্থন করা।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের আবার জাতীয়তাবাদের দিকে ঝোঁক বেশি। তাই তারা সিপিএমের মতোই অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতা দেবব্রত বিশ্বাসের যুক্তি হল, প্রণবের পক্ষেই সব থেকে বেশি সহমত তৈরি হয়েছে। তাই তাঁরাও সে দিকেই সমর্থন দিচ্ছেন। কিন্তু ট্রটস্কিপন্থী আরএসপি, স্থায়ী বিপ্লবের নীতিতে বিশ্বাসী। ফলে তারাও ভোটে বিরত থাকতে চলেছে। অন্য বাম দলের নেতারা আবার বলছেন, আরএসপি-র শক্তি কম এবং তাদের ভোটের উপর খুব বেশি কিছু নির্ভরও করছে না। তাই তাদের বিপ্লবিয়ানা দেখাবার সুযোগটাও বেশি। |
|
|
|
|
|