|
|
|
|
ছাত্রদের চাপে মিজোরামে ইস্তফা বাঙালি উপদেষ্টার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
ছাব্বিশ বছর ধরে মিজোরাম সরকারের আইন বিভাগে নানা উচ্চপদের দায়িত্ব সামলানোর পরে মিজো একটি ছাত্র সংগঠনের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন এক বঙ্গসন্তান। মিজোরাম সরকারের প্রধান আইনি উপদেষ্টা পৃথ্বীপতি চক্রবর্তীর ‘অপরাধ’, তিনি মিজোরামের ভূমিপুত্র নন। কাল মিজোরামের ছাত্র সংগঠন ‘জিরলাই পল’-এর জনা পঞ্চাশ নেতা ও সদস্য মারমুখী ভঙ্গিতে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে মিজোরাম সচিবালয়ে পৃথ্বীবাবুর ঘরে। ওই ছাত্রদের হাতে নিগৃহীত হতে হয় তাঁকে। এতেই শেষ হয়নি লাঞ্ছনার পালা। জোরজবরদস্তি করে পৃথ্বীবাবুকে দিয়ে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেয় তারা। মারমুখী ছাত্রদের দাপটে দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল নিরাপত্তারক্ষীরা।
|
পৃথ্বীপতি চক্রবর্তী |
আদতে মেদিনীপুরের লোক পৃথ্বীপতি চক্রবর্তী মিজোরাম সরকারের আইন সচিব ছিলেন। অর্থনীতির এমএ ও এলএলবি পৃথ্বীবাবু ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে কাজে যোগ দেন। পরে আইজলের এডিজি (আইন) পদে আসীন হন। ২০০৮-এ পৃথ্বীবাবু মিজোরামের আইন সচিব ও কমিশনার হন। গত বছর অবসর নেন পৃথ্বীবাবু। কিন্তু প্রায় তিন দশকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং সুদক্ষ এই আইনজ্ঞকে ছাড়তে চায়নি মিজোরাম সরকার। রাজ্যের প্রধান আইনি উপদেষ্টার পদ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় তাঁকে। মিজোরামের সঙ্গে সূদীর্ঘ বন্ধনের সূত্রে সেই অনুরোধ ফেরাননি তিনি। কার্যত, পৃথ্বীপতিবাবুর জন্যই মিজোরামে প্রথমবার এই পদটি সৃষ্টি করা হয়।
প্রথমে ছয় মাসের জন্য ওই দায়িত্ব সামলান পৃথ্বীবাবু। তাঁর দ্বিতীয় দফার মেয়াদকাল এপ্রিল মাসে শেষ হয়। কিন্তু, পৃথ্বীপতিবাবুর অপরিহার্যতায় মিজোরাম সরকার ফের তাঁর কার্যকালের মেয়াদ বাড়ায়। একজন অ-মিজোকে এইভাবে ‘প্রশ্রয়’ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মিজোরামের সব থেকে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন মিজো ‘জিরলাই পল’।
সচিবালয় সূত্রে খবর, বেশ কয়েকবার পৃথ্বীপতিবাবুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে লাভ না হওয়ায়, গত কাল ওই ছাত্র সংগঠনের জনা পঞ্চাশ নেতা ও সদস্য সচিবালয়ের ভিতরে তাঁর ঘরে জোর করে ঢুকে পৃথ্বীপতিবাবুকে সাফ জানিয়ে দেন, যে হেতু তিনি ‘বহিরাগত’, তাই রাজ্যের প্রধান আইনি উপদেষ্টার পদে তাঁর থাকা চলবে না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান,পৃথ্বীবাবু ওই ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটি সরকারি সিদ্ধান্ত। তিনি স্বেচ্ছায় পদ আঁকড়ে নেই। কিন্তু, ছাত্র নেতারা কোনও যুক্তি শুনতে চাননি। পৃথ্বীবাবুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে ছাত্ররা, চলতে থাকে ধর্না। অফিসের আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়। ওই ছাত্রদের হুমকিতে পৃথ্বীপতিবাবু পদত্যাগপত্র লিখে মুখ্যসচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে বিরাট পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামালায়।
পৃথ্বীবাবু অবশ্য ফোনে বলেন, “যা হয়েছে, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে আমি মুখ খুলতে চাই না।” কিন্তু, তাঁর অসম্মানেবিভাগের অন্যান্য সহকর্মী ও অধস্তনরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ। তাঁদেরই একজন ফোনে বলেন, “পৃথ্বীপতিবাবু রাজ্য সরকারের স্বার্থে অবসরের পরেও স্বভূমিতে না ফিরে কাজ চালিয়ে যান। মিজোরামে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জেরে হাইকোর্টের বিচাপতি হওয়ার সুযোগও তাঁর হাতছাড়া হয়। কিন্তু, কর্মজীবনের শেষে মিজোরাম সরকার এমন লাঞ্ছনা থেকে তাঁকে বাঁচাতে পারল না।” |
|
|
|
|
|