মহাকরণ
অগ্নি-সুরক্ষায় নড়ে বসলেও শেষরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
বিস্তর প্রস্তুতি সত্ত্বেও মুম্বইয়ের সচিবালয়ে বিধ্বংসী আগুনের মোকাবিলায় পর্যুদস্ত হয়েছে মহারাষ্ট্র প্রশাসন। অথচ, এ রাজ্যের সচিবালয় তথা মহাকরণে আগুনের মোকাবিলায় এখনও সাবালক হয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন। এমনকী, এ নিয়ে চিন্তিত খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। এ কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তা থেকে মন্ত্রী, সকলেই। তবে তাঁদের দাবি, দু’তিন মাসের মধ্যেই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত হয়ে উঠবে মহাকরণে।
গত এক বছরে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র ঘর থেকে শুরু করে মহাকরণের বিভিন্ন দফতরে একাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তবে কোনওটিই খুব বড় আকার নেয়নি। নিলে কী হত, প্রশাসনের কর্তাদের কাছে তার সদুত্তর নেই। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থায় সত্যিই সাবালক হয়ে উঠতে পারিনি, এ কথা ঠিক। তবে কী কী কারণে বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তা চিহ্নিত করেছি। তা মোকাবিলায় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।”
কী কী কারণে ঘটে অগ্নিকাণ্ড?
তদন্তে নেমে বারবার প্রশাসনের চোখে মূল ‘ভিলেন’ হয়ে উঠেছে বাতানুকূল যন্ত্র বা এয়ারকন্ডিশন মেশিন। তার পরেই রয়েছে তারের জঙ্গল, কাঠের পার্টিশন আর যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে থাকা বিভিন্ন রকমের দাহ্য পদার্থ। মহাকরণের এক কর্তা বলছেন, “এর মধ্যে এসি মেশিনই সবচেয়ে আতঙ্কের। যে কোনও কারণে বাতানুকূল যন্ত্র অতিরিক্ত গরম হলেই ফেটে যাচ্ছে ভিতরের ক্যাপাসিটর। তার থেকেই লেগে যাচ্ছে আগুন।”
বৈদ্যুতিক তারের এমনই জালে এখনও জড়িয়ে রয়েছে প্রশাসনের সদর দফতর। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবাশিস রায়
মহাকরণের নিয়মানুযায়ী, কোনও দফতরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পরিবর্তন করার আগে অনুমতি নিতে হয় পূর্ত দফতরের। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মন্ত্রী-আমলা বা পুলিশকর্তারাই সে সব নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে এমনই একটি নোট দেওয়া হয় পূর্ত দফতরকে। তাতে বলা হয়েছে, ‘মন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দফতরে চারটি বাতানুকূল যন্ত্র বসানো হচ্ছে। আপনারা তা লাগানোর বন্দোবস্ত করুন।’ পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, গত কয়েক বছর ধরে কলকাতায় গরম যতই অসহ্য হয়ে উঠেছে, ততই বেড়েছে এসি-র চাহিদা। এ বছর বিভিন্ন দফতর থেকে ৪০টিরও বেশি এসি বসানোর অনুরোধ জমা পড়েছে। অনুরোধগুলি আটকে রেখে পূর্ত দফতর জানিয়েছে, এসি বসালে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় যে চাপ বাড়বে, তা নেওয়ার মতো ক্ষমতা বর্তমানে মহাকরণের নেই। এক কর্তার কথায়, “এসি-র থেকে অগ্নিকাণ্ড রোধের একমাত্র উপায় কেন্দ্রীয় বাতানুকূল ব্যবস্থা। কয়েক বছর আগে তার ভাবনা হয়েছিল। খরচ নির্ধারণ হয়েছিল প্রায় ৪৫ কোটি। কিন্তু জায়গার অভাবে তা করা যায়নি।”
পাশাপাশি, যত্রতত্র কাঠের পার্টিশন তৈরির অভ্যেস আরও জতুগৃহ করে তুলেছে মহাকরণকে। পূর্ত দফতর থেকে বারবার এ নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হলেও তা তোয়াক্কা করে না কেউই। একই ভাবে মহাকরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ পড়ে থাকা কাঠের আসবাব আর কাগজের স্তূপ। যদিও পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধনের দাবি, “আগের মতো এখন আর দিনের পর দিন মহাকরণে ফেলে দেওয়া আসবাব পড়ে থাকে না। কিছু দিন অন্তর তা সরানোর ব্যবস্থা হয়।”
আগুন মোকাবিলা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় নতুন সরকার অনেক বেশি সক্রিয় বলে দাবি করেছেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। তাঁর কথায়, “সব করে ফেলেছি, এমন বলব না। কিন্তু আগুন মোকাবিলায় যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” মন্ত্রী জানান, পুরো মহাকরণের বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে নতুন করে ‘ওয়্যারিং প্ল্যান’ তৈরি হচ্ছে। তার ভিত্তিতে ‘স্টিল ট্রে’ ব্যবস্থার মাধ্যমে মহাকরণের বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। বর্তমানে দেওয়ালের তারের জঙ্গল ‘স্টিল ট্রে’র মধ্যে দিয়ে চালান করে দেওয়া হবে। পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে মহাকরণের মেন ব্লক থেকে এই কাজ শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রতি দফতরে, বিশেষত যে সব জায়গায় প্রচুর বিদ্যুৎ-চালিত সরঞ্জাম রয়েছে, সেখানে ‘মাস্টার সুইচ’ লাগানো হচ্ছে। যা বন্ধ করে দিলে বিভাগের সব বিদ্যুৎ-চালিত সরঞ্জামই একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বসানো হচ্ছে স্মোক ডিটেক্টর এবং হিট ডিটেক্টরও। মন্ত্রী বলেন, “দু’তিন মাসেই এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।”
মন্ত্রীর দাবি, “প্রতি সপ্তাহে রাইটার্সের সব অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।” তিনি জানিয়েছেন, আগুন মোকাবিলায় এখন দমকলের একটি গাড়ি রাখা থাকে মহাকরণে। একই সঙ্গে কোনও আগুন লাগলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ ফায়ার কন্ট্রোল রুমও।
এত সব নতুন ব্যবস্থার জিনিসপত্র কেনা হচ্ছে কিন্তু পুরনো টেন্ডারের নিয়মেই। তাই প্রশ্ন উঠছে, সরকারি টেন্ডারের নিয়ম মেনে কম দামের জিনিস কিনতে গিয়ে মানের উপরে নজর দেওয়া হবে তো! এক কর্তার কথায়, “মানোন্নয়ন করতে গিয়ে দামি জিনিস কিনলে কোপের মুখে পড়তে হবে। তার ঠেলা কে সামলাবে!”
সর্ষের মধ্যে ভূতটা কিন্তু তাই রয়েই যাচ্ছে!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.