রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম

মাহেশ, গুপ্তিপাড়া ও চন্দননগরে কড়া নজরদারি
রথযাত্রা উপলক্ষে আজ, বৃহস্পতিবার উত্তরপাড়া থেকে শুরু করে শ্রীরামপুরের মাহেশ, চন্দননগর থেকে গুপ্তিপাড়া সর্বত্রই কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। সর্বত্র সাজো সাজো রব।
শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ এ বছর ৬১৬ বছরে পড়ল। এই রথ দেখতে প্রতি বছরই জেলার নানা অঞ্চলের মানুষ তো বটেই, দূরের জেলা এবং কলকাতা থেকেও মানুষ আসেন। গত বছর রাস্তা খারাপ থাকার কারণে মাসির বাড়ি পৌঁছনোর আগেই বসে গিয়েছিল রথের চাকা। প্রশাসনের উদ্যোগে শেষ পর্য্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছয় রথ। এ বার অবশ্য আগে থেকেই রাস্তা সারিয়ে ফেলেছে পূর্ত (সড়ক) দফতর।
গুপ্তিপাড়ার রথ ২৫০ বছরের পুরনো। তবে, রথের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে গত কয়েক বছরে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পর্যন্ত সর্বত্রই রথ সংস্কারের আর্জি জানিয়েছেন রথ পরিচালন কমিটির সদস্যেরা। গুপ্তিপাড়া বৃন্দাবনচন্দ্র জিউর মঠ ও মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতি বছর নিজেদের তহবিল থেকে খরচ করে জোড়াতাপ্পি দিয়ে রথ সংস্কার করা আর বেশি দিন সম্ভব হবে না। তাঁদের আশা, রথ সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা খুব শীঘ্রই কার্যকর হবে। ভিড় হয় ২৩৮ বছরের পুরনো চন্দননগরের রথ দেখতেও। লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার থেকে জি টি রোড ধরে রথ যায় তালডাঙায় মাসির বাড়ি পর্যন্ত। গোটা রাস্তা জুড়ে বহু মানুষের সমাগম হয়। একই ভাবে উচ্ছ্বাস দেখা যায় উত্তরপাড়ার মুক্তকেশী কালীবাড়ির ১৫০ বছরের পুরনো রথকে ঘিরেও। ১৮ ফুট উঁচু রথে শুধু জগন্নাথ উপবিষ্ট থাকেন। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাচীন সব রথযাত্রাকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্য জেলা থেকেও পুলিশ আনা হচ্ছে। তা ছাড়া, গঙ্গাপথে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকছেন অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের জওয়ানেরাও। মাহেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল)-এর নেতৃত্বে ৩৫০ পুলিশ, গুপ্তিপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর)-এর নেতৃত্বে ২৫০ পুলিশ এবং চন্দননগরে সেখানকার এসডিপিও-র নেতৃত্বে ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী।

মদনমোহন, দামোদরকে নিয়ে মাতেন গ্রামবাসীরা
এক সময় ভাঙা রথ নিয়েই উৎসব পালিত হয়েছে। তবু রথের চাকা বন্ধ হয়নি। হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের জমিদার সাহা পরিবারের চারশো বছরের প্রাচীন রথযাত্রার এমনই ইতিহাস রয়েছে। সে সময় অতি আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হত রথযাত্রা। পরিবারে দুই শরিকের দু’টি রথ ছিল। একটি মদনমোহন ও অপরটি দামোদর। প্রায় ৩০ ফুট উঁচু প্রাচীন রথটি ১৩ চূড়া বিশিষ্ট কারুকার্য যুক্ত। কিন্তু সময়ের কোপে এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে এক সময় ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। শুধু চারটি চাকা বর্তমান ছিল। সাহা পরিবারের সেই ভাঙা নষ্ট হয়ে যাওয়া রথটির উপর কাপড় ঘিরে রথযাত্রা উৎসব পালন করা হত। রথযাত্রা উপলক্ষে মেলাও বসত বিশাল। কিন্তু ভাঙা রথ বলে কখনও বন্ধ হয়নি উৎসব। শেষ পর্যন্ত রথের এমন জীর্ণ দশা দেখে গ্রামবাসীরা মিলিত হয়ে ১৯৬০ সালে একটি কমিটি গঠন করে রথটির দেখভালের দায়িত্ব নেন। কমিটির বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক স্বপন মল্লিক বলেন, “দামোদর রথটিকে পুনর্নির্মাণ করার সময় জগৎবল্লভপুরের মানুষ ছাড়াও আশপাশের গ্রাম যেমন, ইছানগরী, ঝিংরা, গোহালপোতা প্রভৃতিদ গ্রামের মানুষও রথ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় নিম কাঠের জন্য নিম গাছ ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।”
কমিটির পক্ষ থেকে দামোদর রথটিকে পুনর্নির্মাণ করে আবার সাহা পরিবারের সেই রথের জৌলুস ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সুন্দর কারুকার্য বিশিষ্ট ২৫ ফুট উচ্চতার মদনমোহন রথটি ৯ চূড়ার। রথের দিন নির্ধারিত সময়ে দড়ি টানা হয়। তাতে বহু গ্রামবাসী অংশ নেন। জগৎবল্লভপুরে পাঁতিহাল গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস ঘোষ বলেন, “এই রথ দেখার জন্য হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর থেকে বহু মানুষ আসেন। রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। রথে পাঁচ জন ব্রাহ্মণ পুজো করেন। সেই সঙ্গে সানাইয়ের মধুর সুর, ঢাক, ঢোল-কাশির তালে তালে রথ ছুটতে থাকে মাসির বাড়ির দিকে। সেই সঙ্গে মাইকে ভেসে আসে সতর্কবাণী ‘রথের চাকা থেকে সাবধান’।

রথে থাকেন রাধাকৃষ্ণ
যদুরবেড়িয়ার বাহিরতফা গ্রামের জানা পরিবারের রথযাত্রা আজও জনপ্রিয়। রথের আয়োজন করা হয় রথতলায়। বহু দর্শনার্থী আসেন। রথের দড়িতে হাত লাগান তাঁরা। রথ উপলক্ষে মেলা বসে। জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরাম নন, এই রথের সওয়ারি হলেন রাধা এবং কৃষ্ণ। এটা রাধাকৃষ্ণের রথ। জানা পরিবারের দাবি, ছয় পুরুষ আগে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা প্রথম এই রথের আয়োজন করেন। প্রতিষ্ঠার বছর থেকে এখনও পর্যন্ত একই প্রথায় চলে আসছে রথযাত্রা। পরিবারের নিজস্ব কাঠের রাধাকৃষ্ণের মূর্তি, বাজনা এবং শোভাযাত্রা-সহ রথ পরিক্রমা করে। যাত্রা পরিচালনা করেন জানা পরিবারের কুল পুরোহিত। এই রথের উপরে থাকে গরুড় পাখি মাঝে রাধাকৃষ্ণ এবং নীচে সারথী ও কাঠের ঘোড়া। একইভাবে আয়োজন করা হয় উল্টোরথেরও।
নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.