সম্পাদকীয় ১...
পাক গণতন্ত্রের সঙ্কট
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির সাংসদ পদ খারিজ করিয়া কার্যত মন্ত্রিসভারই পতন ঘটাইয়াছে। গিলানির অপরাধ, প্রেসিডেন্ট জারদারির দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করিয়া তিনি আদালত অবমাননা করিয়াছেন। আদালত অবমাননার দায়ে এক জন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর চাকুরি যাওয়ার ঘটনা সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী নিজে যখন দুর্নীতি বা আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত নহেন। তেমন অভিযোগ অবশ্য প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে রহিয়াছে। একা জারদারি কেন, তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ সহ আরও আট হাজার পাকিস্তানি রাজনীতিক, আমলা, অসামরিক ও সেনা-অফিসারের বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়মে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ ছিল, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ এক অর্ডিন্যান্স বলে যাহা রদ করিয়া দিয়াছিলেন। সেই অর্ডিন্যান্সের জোরেই বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরিফরা তাঁহাদের নির্বাসন হইতে পাকিস্তানে ফিরিয়া নির্বাচনী রাজনীতিতে যোগ দিতে সক্ষম হন। কিন্তু নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের মধ্যেই ভুট্টো আততায়ীদের হামলায় নিহত হইলে তাঁহার স্বামী জারদারি দল ও দেশের সর্বময় কর্তা হইয়া বসেন।
দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে পর্যাপ্ত দুর্নামের অধিকারী জারদারির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইফতিকার মহম্মদ চৌধুরী প্রথমাবধি খড়্গহস্ত। প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে তিনি উপর্যুপরি নির্দেশে জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা শুরু করিতে চাপ দেন। কিন্তু নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার সামর্থ্য গিলানির ছিল না। তাহার মূল্যও তাঁহাকে দিতে হইল। পারভেজ মুশারফ কর্তৃক বরখাস্ত ইফতিকার চৌধুরী অবশ্য আইনজীবী ও বিচারপতিদের দেশব্যাপী আন্দোলনের মধ্য দিয়া আপনাকে পুনরভিষিক্ত করিয়া বেশ কিছু কাল যাবৎ পাকিস্তানে সরকারের সমান্তরাল একটি ক্ষমতাকেন্দ্র হইয়া উঠিয়াছিলেন। তাঁহার এই ক্ষমতা দেশের সামরিক বাহিনী, বিশেষত সেনাপ্রধান জেনারেল কিয়ানির সমর্থনে আরও নিরঙ্কুশ হইয়াছে। বিচারবিভাগ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ চাপে পড়িয়া পাকিস্তানের নবীন গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস উঠিতেছে কি না, সে প্রশ্নও উঠিতেছে।
প্রশ্ন ওঠার একটি কারণ, ইফতিকার চৌধুরীর ‘পাশে দাঁড়াইবার অঙ্গীকার’ করিয়া বিচারপতি ও আইনজীবীদের আত্মঘোষণা। এ কথা সত্য যে, পাকিস্তানে রাজনীতিক, আমলা ও সেনা-অফিসারদের দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার ঐতিহ্য মহম্মদ আলি জিন্নার মৃত্যুর পর হইতেই পুষ্ট হইয়াছে। কিন্তু এই ঐতিহ্য দেশের বিচারবিভাগকে স্পর্শ করে নাই, এ কথা মনে করার কারণ নাই। ইফতিকার চৌধুরীর পুত্রের ৩৭ লক্ষ ডলার ঘুষ লইয়া এক অর্বুদপতি পাক ব্যবসায়ীর অনুকূলে আদালতের রায় ঘুরাইয়া দেওয়ার যে রোমহর্ষক অভিযোগে পাক বিচারবিভাগ সরগরম, প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার চড়া-তারে-বাঁধা নাটক হয়তো তাহাকে স্তিমিত করিয়া দিবে। পাকিস্তান পিপল্স পার্টির প্রতিপক্ষ মুসলিম লিগের নওয়াজ শরিফ এই সুযোগ কাজে লাগাইয়া প্রেসিডেন্ট জারদারির ব্যর্থতার প্রতিকার রূপে দ্রুত নির্বাচনের দাবিও তুলিতেছেন। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে পাকিস্তানে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের প্রশ্নটি উহ্য থাকিয়া যাইতেছে। বিচারবিভাগ যদি নির্বাচিত আইনসভার সার্বভৌমত্বকে খারিজ করিতে পারে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি যদি পারেন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করিতে, সাংবিধানিক রক্ষাকবচ যদি কেবল বিচারবিভাগ ও সামরিক বাহিনীর ‘অবমাননা ও উপহাস’ ঠেকাইতেই প্রযুক্ত হয়, পার্লামেন্টের অনাক্রম্যতা প্রতিষ্ঠা করিতে নয়, তবে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র দুর্বল হইতে বাধ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.