ফের সন্দেহভাজন মাওবাদীদের হামলা বিহারের রেল স্টেশনে। অপহরণ, ভাঙচুরের জেরে বিপর্যস্ত হল রেল পরিষেবাও।
বুধবার সকালে জামুই জেলার ঘোড়পারন স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়ে স্টেশন ম্যানেজার-সহ ৩ রেলকর্মীকে তুলে নিয়ে যায় সন্দেহভাজন মাওবাদীরা। পরে অবশ্য অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার জেরে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের মধুপুর-ঝাঁঝাঁ সেকশনে সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিঘ্নিত হয় হাওড়া-নয়াদিল্লি শাখার ট্রেন চলাচলও। বিকেলের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
রেল সূত্রের খবর, ঘোড়পারন স্টেশনে এ দিন ঘটনার সময় পুলিশ বা কোনও আরপিএফ ছিল না। শিমুলতলা, লাহাবাঁধ, ঘোড়পারন, নরগঞ্জ পুরোপুরি মাওবাদী অধ্যুষিত। এখানে বিক্ষিপ্তভাবে কোনও স্টেশনে নিরাপত্তাবাহিনী থাকে না। ঝাঁঝাঁ স্টেশনে একটি আরপিএফ পোস্ট তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকেই বাহিনী পাঠানো হয়। এ দিন তাণ্ডবের পরেই ঘোড়পারনের পাহাড়, জঙ্গলে যৌথবাহিনী তল্লাশি শুরু করে। মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলেও বিহারের ডিজিপি অভয়ানন্দ জানিয়েছেন। |
রেল ও জামুই পুলিশ সূত্রের খবর, আজ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘোড়পারন স্টেশনে নিজের ঘরে বসে কাজ করছিলেন স্টেশন ম্যানেজার বিজয় কুমার। হঠাৎই প্রায় কুড়ি জনের সশস্ত্র দল সেখানে ঢুকে ভাঙচুর করে, টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে বিজয় কুমারকে। স্টেশনের পোর্টার দুখন মাহাতো ও মুন্না রাম ঘটনাস্থলে থাকায় তাদেরও তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী আঁধেরি জঙ্গলের দিকে চলে যায় নিজেদের ক্রান্তিকারী সেনা বলে দাবি করা ওই দুষ্কৃতীরা। যাওয়ার সময় রেললাইনে কর্মরত ঠিকা কর্মীদের তারা মারধর করে। ওই কর্মীরা যাতে হামলার খবর দিকে না পারেন, তার জন্য তাদেরও জঙ্গল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। জঙ্গলে ঢোকার আগে জঙ্গিরা ওই ঠিকা কর্মীদের ছেড়ে দিয়ে বলে, রেললাইনে মাইন পোঁতা আছে। ট্রেন চালালেই বিস্ফোরণ হবে।
এর পরেই খবর যায় রাজ্য পুলিশ ও রেল কর্তাদের কাছে। জামুইয়ের পুলিশ সুপার উপেন্দ্র শর্মার নেতৃত্বে পুলিশ ও সিআরপি-র বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়। ঝাঁঝাঁ থেকে আরপিএফও আসে ঘোড়পারনে। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। ছিল কোবরা কম্যান্ডোরাও। সংলগ্ন আঁধেরির জঙ্গল থেকেই বিকেল নাগাদ অপহৃত তিন জনকে উদ্ধার করা হয়। দুষ্কৃতীরা একটা সময় পর তাঁদের ছেড়ে দিয়ে গভীর জঙ্গলে চলে যায়। স্টেশনে হামলা চালিয়ে মূলত ওই ৩ জনকে জামিন হিসেবে ব্যবহার করেই তারা পালিয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
ঝাঁঝাঁর এসডিপিও কুন্দন কুমারের কথায়, “এখানে মাওবাদী আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য রেল। ঘটনা দেখে বোঝা যাচ্ছে, এই কাজ ওদেরই। ক্রান্তিকারী সেনা ওদের শাখা সংগঠন হতে পারে।” বিহারের ডিজিপি অভয়ানন্দও বলেন, “মাওবাদীদের কাজ বলেই মনে হচ্ছে। স্টেশন মাস্টারকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা ৬ ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ রাখার কথা মাইকে ঘোষণা করতে বলে। এর পরই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” মাওবাদীরাই ঘটনার পিছনে আছে কি না জানতে চাওয়া হলে রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “এটা দুষ্কৃতীদের কাজ। রেল নিরাপত্তাবাহিনী পাঠিয়েছে। বিহারের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে। তারাই বিষয়টি দেখছে।”
মাইনের হুমকির জেরে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করানো হয়। নরগঞ্জে দানাপুর-টাটা, আসানসোলে অকাল তখত, জশিডিতে ধানবাদ-পটনা ইন্টারসিটি, মধুপুরে আসানসোল-ঝাঁঝাঁ লোকাল, ছাড়াও বহু ট্রেন দাঁড় করানো হয়। আসানসোলের ডিআরএম জগদানন্দ ঝা জানান, বিস্ফোরক আছে কি না দেখতে বিশেষ পাইলট ট্রেন চালানো হয়। এর পরে দুপুর নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হয়। |