ভাঙনের আশঙ্কা সত্ত্বেও সমর্থনে তৈরি বিজেপি, মমতার দিকে নজর সকলের
দল ছেড়ে এনডিএ-র দিকে তাকিয়ে সাংমা
রাষ্ট্রপতি ভোটকে কেন্দ্র করে ভাঙনের মুখে শাসক এবং বিরোধী দুই জোটই। এই পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতে জোটগুলির নতুন বিন্যাসের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়ার জন্য লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা আজ এনসিপি থেকে ইস্তফা দিলেন। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারও তাঁর ইস্তফা মঞ্জুর করেছেন। ফলে সামান্য হলেও নতুন করে চিড় ধরল ইউপিএ-তে। প্রণববাবুকে সমর্থনের প্রশ্নে শাসক জোটে বড় ভাঙন আগেই ধরেছিল। জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক
ক্যাবিনেট বৈঠকের পরে।
বুধবার।—নিজস্ব চিত্র
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত প্রণব-বিরোধী অবস্থানেই অনড়।
এনডিএ জোটের অবস্থা আরও সঙ্গীন। জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা প্রণববাবুর পক্ষে। একই কথা বলছে বাল ঠাকরের শিবসেনা। অকালি দলও দ্বিধায়। তবু, এই অবস্থাতেও বিজেপি সাংমাকে সমর্থনেরই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা নীতীশ-শিবসেনাকে খোয়ানোর আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও (আজ সন্ধ্যায় লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়ির বৈঠকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ছাড়া আর কোনও শরিক নেতা ছিলেন না)। কারণ, তাদের বক্তব্য, নবীন পট্টনায়ক এবং জয়ললিতার মতো দু’জন অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী যখন সাংমার নামে অনড়, তখন কংগ্রেস-বিরোধিতায় টিকে থাকতে হলে বিজেপি-র কাছে প্রাক্তন স্পিকারকে সমর্থন করা ছাড়া পথ থাকছে না।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, নবীন কিছু দিন আগেও ছিলেন এনডিএ জোটে। আবার জয়ললিতার সঙ্গে বিজেপির সখ্যও নতুন কিছু নয়। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, সাংমাকে সমর্থনের পরে যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁরা হেরেও যান, সে ক্ষেত্রেও ২০১৪ সালে তাঁদের পক্ষে নবীন-জয়াকে কাছে টানার সুযোগ থাকছে। অরুণ জেটলি তাই দলের বর্তমান নীতি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “একাধিক অ-কংগ্রেসি দল যখন সাংমাকে সমর্থন করছেন, তখন বিরোধী দলের চরিত্র বজায় রাখার জন্য বিজেপি-কে একটি অবস্থান নিতেই হবে। সেখানে পছন্দ বা অপছন্দটি বড় কথা নয়।”
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রণবের নাম ঘোষণার আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেনি কংগ্রেস। আগামী লোকসভা নির্বাচনে যে কংগ্রেসের দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে দলকে লড়তে হবে, এ বার তার প্রার্থীকে তা হলে কী ভাবে সমর্থন করবে বিজেপি? সাংমাকে সমর্থনের ব্যাপারে নিতিন গডকড়ীরও প্রথমে আপত্তি ছিল। কিন্তু এখন জেটলির মাধ্যমে আডবাণী তাঁকেও রাজি করিয়েছেন।
এখন মমতা কী করবেন? বিজেপি জানে, মমতার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভাসুর ও ভাদ্রবউয়ের মতো। সাংমা বিজেপি-র প্রার্থী হলে তাঁকে সমর্থন করা মমতার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। তাই সে ঘোষণা বিজেপি করছে না। বরং তাঁকে নবীন ও জয়ার প্রার্থী হিসেবেই তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে মমতার সমর্থন পাওয়ার পথ খোলা থাকে। মমতার সঙ্গে বিজেপি সরাসরি যোগাযোগও রাখছে না। খোদ সাংমাই গত কাল মমতার সঙ্গে কথা বলে তাঁর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।
মমতা কিন্তু এখনও নিজের সিদ্ধান্ত জানাননি। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, কাল সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক এবং তার পর চার বাম দলের বৈঠকের পরে তাঁদের কৌশল দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা। কারণ, মমতার রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিত অনেকটা বাম-রাজনীতির প্রবাহে বিচরণ করে।
শেষ পর্যন্ত মমতা যদি সাংমাকে সমর্থন করতে রাজি হন, তা হলে তাঁর সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই রয়েছে। মমতা সাংমাকে সমর্থনের পরে যদি প্রণববাবু জিতেও যান, তা হলেও জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস-বিরোধিতার জন্য বড় মঞ্চ পাবেন মমতা। সে ক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে না গিয়েও নবীন-জয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়তে পারবেন তিনি। এবং এনসিটিসি-র সময়ে জাতীয় ক্ষেত্রে অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট করে যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মমতা, সেই জায়গাটা বজায় রাখতে পারবেন। এটা কংগ্রেসের কাছে মোটেও স্বস্তির কারণ নয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের কোনও শরিককে তারা হারাতে চায় না।
আবার সাংমাকে সমর্থন করলে মমতার ঝুঁকির দিকও রয়েছে। কারণ, এর ফলে তাঁকে পরোক্ষে হলেও বিজেপির সঙ্গ নেওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তেই হবে। কংগ্রেস ও বামেরা এই নিয়ে প্রচার করবেই। যদিও মমতার ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, সাংমা আর যা-ই হোন, বিজেপির প্রার্থী নন। ফলে বিজেপির সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। এনডিএ-র ঘর করে আসা মমতা এখন রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করেছেন। ফলে এত সহজে তাঁর গায়ে এই তকমা লাগানো যাবে না। দু’দিন ধরে নীতীশ যে ভাবে ‘সাম্প্রদায়িকতা’র প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করছেন, তাঁকে আজ সমর্থন জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ। মমতার মতো ধর্মনিরপেক্ষ নেত্রীর সঙ্গে মিলে নীতীশকে একটি মঞ্চ গড়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
মমতা যদি ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলেও সমস্যা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভোটে হুইপ জারি করা যায় না। দলীয় সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কেউ প্রণববাবুকে ভোট দিলে (কবীর সুমন যেমন জানিয়েছেন, তিনি প্রণবকে ভোট দেবেন), তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। এই পরিস্থিতিতে নবীন-জয়ার সঙ্গে জোট বেঁধে নতুন সমীকরণ রচনার ঝুঁকি মমতা নেবেন কি না, সেটাই এখন দেখার।

জয়ের জন্য চাই
৫,৪৯,৪৪২


প্রণবের পক্ষে
ইউপিএ - তৃণমূল ৪,১২,১৮২
সপা ৬৮,৮১২
বসপা ৪৩,৩৪৯
আরজেডি ৮,৯৩৪
এলজেপি ৮৮১
মোট: ৫,৩৪,১৫৮
পাশে থাকতে পারে
জেডি (ইউ) ৪২,১৫৩
শিবসেনা ১৮,৪৯৫
অকালি দল ১১,৫৬৪

সাংমার পক্ষে
বিজেপি ২,২৩,৮৮৫
বিজেডি ৩০,২১৫
এডিএমকে ৩৬,৯২০
মোট: ২,৯১,০২০
অবস্থান স্পষ্ট নয়
তৃণমূল ৪৮,০৪৯
চার বাম দল ৫১,৬৮২


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.