|
|
|
|
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন |
ফোনে সুমন-প্রণব কথা নিয়ে বিতর্ক কংগ্রেস-তৃণমূলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও নয়াদিল্লি |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘সন্ধি’ প্রচেষ্টার মধ্যেই একটি ফোনালাপ নতুন করে বিতর্ক তৈরি করল। যাতে জড়িয়ে পড়লেন ইউপিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ সাংসদ কবীর সুমন এবং রাজ্যের শাসক শিবিরের নেতারা।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার দুপুরে। সুমন দাবি করেন, প্রণববাবু তাঁকে ফোন করে ‘শারীরিক কুশল’ জানতে চান। তার পর সুমনই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা বলে প্রণববাবুকে জানান, তৃণমূল যা-ই সিদ্ধান্ত নিক, তিনি প্রণববাবুকেই ভোট দেবেন। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই একটি চ্যানেলে সুমন প্রণববাবুর প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। সুমনের কথায়, “দক্ষ রাজনীতিক হিসেবেই আমি ওঁকে ভোট দিতাম। কী ভাবে ভোট হয়, কোথায় (কলকাতা না দিল্লি) ভোট দিতে হয়, এসব জানতে চাইলাম। উনি বললেন, কলকাতা বা দিল্লি, যে কোনও জায়গাতেই ভোট দিতে পারি। তবে আমি দিল্লি গিয়ে ভোট দিলে তাঁর সঙ্গে দেখা হতে পারে।” সুমনের বক্তব্য, “উনি আমায় একটিও রাজনীতির কথা বলেননি। আমিই প্রসঙ্গটা তুলি। উনি শুধু বললেন, ‘তুমি দিল্লি এসে ভোট দিলে ভাল লাগবে। যাকে দেওয়ার তাকে দেবে’। আমি বললাম, আমি চাই উনি রাষ্ট্রপতি হোন। উনি হাসলেন।”
প্রণববাবুর তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, সুমনই তাঁকে ফোন করেছিলেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব প্রদ্যোৎ গুহ বলেন, “বেলা দেড়টা নাগাদ কবীর সুমন অফিসে ফোন করেছিলেন। উনি প্রণববাবুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আমি লাইনটা ধরিয়ে দিই। তারপর ওঁদের মধ্যে কথা হয়। দেড়-দু’মিনিট কথা হয়েছে।”
কে কাকে ফোন করেছিলেন, সেই বিতর্ক ছাপিয়েও অবশ্য দুপুর থেকেই প্রাধান্য পেতে শুরু করে তৃণমূলের এই অভিযোগ যে, ‘রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী’ প্রণববাবু তৃণমূলের সাংসদকে ফোন করে ‘দল ভাঙাচ্ছেন’। প্রণববাবুকে তীব্র কটাক্ষ করেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন বিধায়ক আব্দুল মান্নান। সব মিলিয়ে জোট শিবিরে চূড়ান্ত জটিলতা তৈরি হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে বিষয়টি জানান। তৃণমূল নেত্রী তাঁর ক্ষোভও গোপন করেননি। তার পরেই প্রণববাবুর তরফে ধোঁয়াশা পরিষ্কার করে জানানো হয়, সুমনই তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি নন। এআইসিসি-র মুখপাত্র রশিদ আলভিও বলেন, “আমরা কারও ভোট বিভাজন করতে চাই না। তা ছাড়া তৃণমূল আমাদের শরিক। শরিকদল ভাঙার কোনও ইচ্ছাই আমাদের নেই। আমরা এই ধরনের কাজ করি না।”
বস্তুত, কংগ্রেসের তরফে এমনও বলা হয় যে, প্রণববাবু যে মাপের নেতা, তাতে তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, প্রকাশ কারাটদের ফোন করতে পারেন। কিন্তু হঠাৎ কবীর সুমনকে ফোন করতে যাবেন কেন! দলের এক শীর্ষনেতার কথায়, “তৃণমূলের সমর্থন তো উনি প্রকাশ্যেই চেয়েছেন। মমতাকে বোন বলে সম্বোধন করেছেন। তারপর কেন হঠাৎ সুমনকে ফোন করতে যাবেন? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য!”
সুমন অবশ্য তাঁর দাবিতে অনড়।
ফোনের বিষয় জানাজানি হওয়ার পরেই প্রণববাবুর কড়া সমালোচনা করে মন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, “কবীর সুমন এবং প্রণববাবু দু’জনেই অনৈতিক রাজনীতির হেডমাস্টার! রাষ্ট্রপতি ভোটের প্রচার সবসময় দলীয় স্তরে হয়। প্রণববাবু তো সরাসরি মমতাকেই ফোন করতে পারতেন! তা না-করে উনি দল ভাঙার চেষ্টা করছেন। এমন এক জন এই চেষ্টা করছেন, যিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হতে চান! এতে দেশের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। এটা অন্যায়। অনৈতিক।” প্রণববাবুর নাম না-করে আক্রমণাত্মক টুইট করেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সুব্রতবাবুর নাম না-করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু বলেন, “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনৈতিক লোক আবার নৈতিকতার কথা বলছেন!” আর সরাসরি সুব্রতবাবুর নাম করেই মান্নান বলেন, “সুব্রত’দা এক সময় তৃণমূলের মেয়র হয়ে কংগ্রেসের সভায় এসে প্রণব’দার কাছে কংগ্রেসে আশ্রয় চেয়েছিলেন। সেই সুব্রত’দার মুখে নৈতিকতার কথা পৃথিবীর সেরা রসিকতা!”
তৃণমূলের নেতাদের মতে, সুমন নিজে মমতার সঙ্গে সংঘাতের পথ তৈরি করার জন্যই চেষ্টা করছেন। যাতে বিরক্ত মমতা তাঁকে বহিষ্কার করেন। সে ক্ষেত্রে তিনি ‘দলহীন সাংসদ’ হয়ে বহাল তবিয়তে থেকে যেতে পারবেন। দলের এক সাংসদের কথায়, “উনি যখন ব্যক্তিগত অভিমতকেই বেশি গুরুত্ব দেন, তখন দলে থাকার দরকার কী? উনি প্রণববাবুকে ভোট দিতেই পারেন। দল সেটা তাঁর সঙ্গে বুঝে নেবে। কিন্তু এ ভাবে একটা অযথা বিতর্ক বাধানোর অর্থ হয় না!” |
|
|
|
|
|