|
|
|
|
ধানের গোলায় হানা দিয়ে উদ্ধার ‘চুরির’ টাকা |
অমর্ত্য মুখোপাধ্যায় |
টিমটিমে টর্চ আর ‘চার্জ’ ফুরিয়ে আসা মোবাইলের আলোয় ধানের গোলার ভিতরে কখনও এলোপাথাড়ি কোদাল চালাচ্ছেন দুই পুলিশকর্মী। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুতেই তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কোথায় লুকনো রয়েছে টাকার বান্ডিলগুলো। যত বারই ধানের গোলায় আঘাত পড়ছে, ছোট-ছোট পোকা ভন্ভন্ করে বেরিয়ে আসছে। অনেক চেষ্টার পরে যখন হাল ছাড়তে বসেছেন তাঁরা, তখনই এক জনের হাত ঠেকল কড়কড়ে কাগজে। তড়িঘড়ি হাতড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এল একের পর এক টাকার বান্ডিল।
গত শনিবার গভীর রাতে এ ভাবেই জয়নগর থানার বুঁইচগ্রামের একটি ধানের গোলা ও জমি হাতড়ে ‘চুরি’ যাওয়া সাড়ে ১৯ লক্ষ টাকা উদ্ধার করলেন বৌবাজার থানার দুই সাব-ইনস্পেক্টর দেবাশিস দত্ত ও সুদীপ্ত ঘোষ। নিউ সি আই টি রোডের একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি সংস্থায় ২০ লক্ষ টাকা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন সেখানকারই এক জন কর্মচারী। ডিসি (সেন্ট্রাল) বিশাল গর্গ বলেন, “ধৃতের নাম রাধেশ্যাম মণ্ডল (২২)। বাড়ি কুলতলি থানার গাবতলায়। বাকি ৫০ হাজার টাকার খোঁজ চলছে।” |
|
অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী |
পুলিশ জানায়, পি-১৭ নিউ সি আই টি রোডে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি সংস্থা রয়েছে লেক টাউনের বাসিন্দা সঞ্জয় কনসলের। ছ’বছর ধরে সেখানে পিওনের কাজ করে রাধেশ্যাম। রাতে সেখানেই থাকে। গত ৫ জুন সঞ্জয় বৌবাজার থানায় চুরির অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ওই দিন দুপুরে রাধেশ্যামকে একটি ব্রিফকেসে ২০ লক্ষ টাকা ভরে তা মধ্য কলকাতার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে আসতে বলেন তিনি। দুপুর দু’টোর পরেও পিওনকে ফিরতে না দেখে সন্দেহ হয় সঞ্জয়ের। তার তিনটি মোবাইলই বন্ধ ছিল। অনেক খুঁজেও রাধেশ্যামের সন্ধান না পেয়ে রাতে থানায় যান সঞ্জয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতেই কুলতলি রওনা হন দুই এসআই। সেখানে গিয়ে লাভ হয়নি। পরদিন নরেন্দ্রপুরে রাধেশ্যামের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানা যায়, রাধেশ্যামের স্ত্রীকে নিয়ে তার শাশুড়ি ক্যানিং গিয়েছেন। ওই রাতে পুলিশ জানতে পারে, নতুন সিম-কার্ড নিয়েছে রাধেশ্যাম। তার ‘টাওয়ার লোকেশন’ দেখে পুলিশ জানে, হলদিয়ার আশপাশে রয়েছে রাধেশ্যাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই সে পালায়। পুলিশ জানতে পারে, রাধেশ্যাম দু’টো নতুন সিম নিয়েছে এবং মৈপীঠ থানা এলাকায় গা-ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় থানার ওসি শুভেন্দু সরকারের সাহায্যে বৌবাজার থানার দুই এসআই অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাধেশ্যামের কোনও পাত্তা পাননি।
শেষমেশ গত ১৬ জুন সকালে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সন্ধ্যার পরে বুঁইচগ্রামে পৌঁছন তাঁরা। পৈতৃক ভিটে থেকে রাধেশ্যামের খোঁজ মেলে। তার পরে টাকার সন্ধানও পাওয়া যায়। টাকা-সহ অভিযুক্তকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। ১৭ জুন রাধেশ্যামকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ২৩ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|