ইংল্যান্ড-৩ (ক্যারল, ওয়ালকট, ওয়েলবেক)
সুইডেন-২ ( জনসন আত্মঘাতী, মেলবার্গ) |
একেই বোধহয় বলে থ্রিলার! এ ধরনের ম্যাচ দেখতেই তো রাত জাগা! রুদ্ধশ্বাস নব্বই মিনিট। যেখানে শেষ মুহূর্ত অবধি ঠিক নেই কে জিতবে। এই জন্যই তো ফুটবল এত আকর্ষণীয়। শেষ বিচারে ইংল্যান্ড যে তিনটে পয়েন্ট তুলে নিল, তার পিছনে হজসনের একটা সিদ্ধান্ত। ঠিক সময়ে ওয়ালকটকে নামিয়েছিলেন তিনি। ও-ই কিন্তু দুটো টিমের মধ্যে তফাতটা গড়ে দেয়। নেমেই দুর্দান্ত শটে একটা গোল, তারপর জয়সূচক গোলেও অবিশ্বাস্য একটা ক্রস। যেখানে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে আলতো ব্যাক-হিলে বল সুইডদের জালে পাঠাল ওয়েলবেক। গোলটা অবিশ্বাস্য কারণ ব্যাক-হিল সাধারণত মাটি ঘেঁষা শটে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে নেওয়া হল হাওয়ায়। আবার বলছি, ম্যাচের সেরা ওয়ালকট। সত্যি, এ বারের ইউরোর অন্যতম সেরা ম্যাচটা দেখলাম। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের ফুটবল, দুটো টিমই সারাক্ষণ অ্যাটাকিং খেলল। এই ধরনের ফুটবল দেখলে বিরক্তি আসার কোনও সুযোগ নেই।
ইংল্যান্ড ফুটবলের একটা অদ্ভূত দিক আমাকে টানে। যখন ওরা নিজেদের চ্যাম্পিয়ন ভেবে বড়াই করে না, তখনই ওরা সবচেয়ে বিপজ্জনক। তখনই ওদের খেলাটা খোলে। এটা ঠিক, স্পেনের মতো সৌন্দর্য বা জার্মানির মতো পেশাদারিত্ব এই ইংল্যান্ড টিমটার নেই। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার হিসেবে ল্যাডব্রোক্সে বাজির দরও ওদের পক্ষে নেই। কিন্তু শেষমেশ দুটো ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট পেয়ে দারুণ ভাবে নিজেদের আশা জিইয়ে রেখেছে। |
এ দিনের ম্যাচটার কথাই ধরা যাক। শেষ আটে যাওয়ার আশা টিকিয়ে রাখতে হলে জিততেই হত ইংল্যান্ডকে। বিশেষ করে ফ্রান্স আগের ম্যাচটা জিতে যাওয়ায়। শুরুতে সতর্ক। তারপরই ইংল্যান্ডের মিডফিল্ড কিন্তু খেলা ধরে নিয়েছিল। উইং প্লে ভাল হচ্ছিল। যথারীতি মিডফিল্ডে বল সরবরাহে এক নম্বর ছিল স্টিভন জেরার। রুনিকে খেলানো যাচ্ছে না, এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের অ্যাটাকিং থার্ডকে সচল রাখতে গেলে অ্যান্ডি ক্যারল ছিল সেরা বিকল্প। রুনির মতো বক্সের মধ্যে বিপজ্জনক নয়। কিন্তু ঠিক জায়গায়, ঠিক সময় হেডটা করতে পারে। এটা জানাই ছিল যে, ক্যারলের জন্য থাকবে বেশ কিছু লং বল। ডান দিক থেকে জেরারের যে ক্রসটা উড়ে এসে সুইডেনের বক্সে পড়ছিল সেটাতে হেড করে গোল করা সহজ ছিল না। কিন্তু ওই যে বললাম, হজসন টিমে ক্যারলকে রেখেই ছিলেন কারণ ও হেড স্পেশ্যালিস্ট। এক কথায় এ বারের ইউরোয় হেডে করা সেরা গোল।
সুইডদের কথায় আসি। শুধু উচ্চতা দিয়ে যদি বিচার করা হয়, ইউরোর ষোলোটা টিমের মধ্যে এক নম্বরে থাকবে সুইডেন। টিমে একগাদা লম্বা ছেলে আর ভাল হেডার থাকলে কী হয়, তার নমুনা হিসেবে ভবিষ্যতে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা এই ম্যাচটা বাছতেই পারেন। এক গোলে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে সুইডরা ইংরেজদের ডিফেন্স নিয়ে একটা সময় ছিনিমিনি খেলল। সুইডেনের দ্বিতীয় গোলটার কথাই ধরা যাক। সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় ছেড়ে রাখা হল মেলবার্গকে। ছ’ফুট দু’ইঞ্চি উচ্চতার মেলবার্গ প্রায় হাঁটতে হাঁটতে হেড করে বল জালে ঢুকিয়ে দিল। |