প্রণবকে কেন্দ্র করে জোটে কাজিয়া তুঙ্গে
রাষ্ট্রপতি পদ-প্রার্থী নিয়ে দিল্লির ‘উত্তাপে’র আঁচে টানাপোড়েন তীব্র হচ্ছে রাজ্যে জোট শিবিরে।
প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করার বিরোধিতা করায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, বহরপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী থেকে শুরু করে মমতা-মন্ত্রিসভার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও। রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের ‘ভুল-ত্রুটি ও দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও বৃহস্পতিবার প্রদীপবাবু দিয়েছেন। মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি নিয়ে প্রদীপবাবুর মতো ‘কড়া’ মনোভাব মানসবাবু দেখাননি। কিন্তু মানসবাবুও যে ভাবে তৃণমূলের সমালোচনায় গলা মিলিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট যে, হাইকম্যান্ডের সঙ্কেত পেয়েই প্রদেশ নেতৃত্ব সুর চড়াচ্ছেন। প্রসঙ্গত, রাজ্য মন্ত্রিসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে মানসবাবুর সম্পর্ক যথেষ্ট ‘ভাল’।
মমতার নাম না-করেই মানসবাবু এ দিন বলেছেন, “প্রণবদাকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা নিয়ে যাঁরা বিরোধিতা করে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম টেনে আনছেন, তাঁরা অহেতুক রাজনৈতিক হেঁয়ালি বন্ধ করুন।” কংগ্রেস মুখ খোলার অব্যবহিত পরেই রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী ও মমতা-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় মহাকরণ থেকে পাল্টা বলেছেন, “আমরা তো ওঁদের থাকতে বাধ্য করিনি! জোর করে আটকেও রাখা হয়নি! ওঁরা যা উচিত মনে করছেন, করতেই পারেন। কথা না-বলে কাজে করে দেখান! আমরা ওদের দমটা দেখতে চাই!”
‘দম’ দেখাতে তাঁরাও যে প্রস্তুত, তা বুঝিয়ে দিয়ে প্রদীপবাবু বলেছেন, “আমরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পারবেন তাঁরা কোথায় ছিলেন, কোথায় আছেন আর কোথায় যাবেন।” তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল যা আচরণ শুরু করেছে, তার ‘রাজনৈতিক মোকাবিলা’ করতে শুধু শহর কলকাতাতেই নয়, সারা রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস আন্দোলন গড়ে তুলবে। এমনকী, বিধানসভার অন্দরেও কংগ্রেস জোট-শরিকের বিরুদ্ধে সরব হবে বলে প্রদীপবাবু এ দিন জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, আজ শুক্রবার থেকেই বিধানসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে।
প্রদেশ সভাপতি যেমন রাজ্য মন্ত্রিসভায় তাঁদের থাকার ‘যৌক্তিকতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনই প্রণববাবুকে সমর্থন না-করলে মমতাকে বাংলার মানুষ ক্ষমা করবে না বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন সাংসদ অধীর। তাঁর কথায়, “বরাবরের ঝগড়ুটে মহিলা উনি! নিছকই ব্যক্তিগত আক্রোশ আর ঈর্ষা থেকে তিনি প্রণববাবুকে সমর্থন করছেন না। জেনে রাখুন, মমতা প্রণববাবুকে সমর্থন না-করলে বাঙালির কাছে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন!” মানসবাবু এবং অধীর জানান, স্বাধীনতার পরে বাঙালির প্রথম ‘কপাল খুলেছিল’ ১৯৯৬ সালে। সে বার জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনায় ‘জল ঢেলে’ দিয়েছিল তাঁর দল সিপিএম। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেই অধীরের মন্তব্য, “বাঙালি হিসাবে আমরাও মমতাকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চাই। উনি কেন বাঙালি হিসেবে প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে চাইছেন না?” তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে অধীরের সম্পর্ক অবশ্য একেবারেই ‘মসৃণ’ নয়।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে আলোচনা করে বেরিয়ে এসেই বুধবার মমতা যে ভাবে রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেসের ‘পছন্দের নাম’ বলে দিয়েছিলেন, তাকে ‘অনৈতিক, অন্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন প্রদীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, “দুই নেতৃত্বের মধ্যে বহু আলোচনা হয়। যেটা একান্ত ভাবে নিজেদের মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু মমতা যা করলেন, তা অনৈতিক, অন্যায় ও অসৌজন্যই শুধু নয়, এটা রাজনৈতিক প্রগলভতা।” যিনি ‘সৌজন্য’ দেখাতে জানেন না, তাঁর সঙ্গে ‘সম্পর্ক রাখার প্রয়োজন মনে করি না’ বলেও প্রদীপবাবু মন্তব্য করেন। একই ভাবে মানসবাবুও বলেন, “রাষ্ট্রপতি পদে প্রধানমন্ত্রীর নাম টেনে আনাও বেমানান। অশোভন। বেরসিক হেঁয়ালি।” তাঁদের দু’জনেরই বক্তব্য, লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে জোটের পক্ষে আগাগোড়া সওয়াল করে গিয়েছিলন প্রণববাবু। বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্টকে সরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মতোই আসন রফা করা হয়েছে।
এই প্রশ্নে সুব্রতবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “এটা কোনও ব্যক্তির ব্যাপার নয়। এ সব কথা জুড়ে দিয়ে প্রণববাবুকে ছোট করা হচ্ছে। কোনও ব্যক্তি আমাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। দেশ, রাজ্য এবং মানুষের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” প্রদীপবাবুদের জবাবে সুব্রতবাবু পাল্টা আরও বলেছেন, “মমতার সৌজন্যের অভাব দেখলে এবং বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুর কাছে সৌজন্য বেশি পেলে সেখানেই কংগ্রেস যাক!” কংগ্রেসের সঙ্গে সরকারে থাকায় অস্বস্তি বোধ করেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে সুব্রতবাবু বলেন, “আমরা তো স্বস্তি-অস্বস্তির প্রশ্ন তুলিনি। আমরা কাউকে বাধ্যও করতে পারি না! তবে আমরা স্বচ্ছন্দে সহাবস্থান করছি। কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা হলে নিজেরা সমাধান করব। বাইরে বলতে যাব না।”
মন্ত্রিসভায় থাকার প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যে প্রদীপবাবুর মতো ‘কট্টর’ অবস্থান নয় মানসবাবুর। তাঁর কথায়, “গণতন্ত্রে এই ধরনের বিতর্ক, তিক্ততা প্রায়ই হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইউপিএ-২তে তৃণমূল বৃহত্তম দল এবং রাজ্যে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের আমরা শরিক। দু’দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বই যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই হবে।” আবার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা মহম্মদ সোহরাবের বক্তব্য, “তিক্ততা আরও বেড়েছে। এই তিক্ততা নিয়ে একত্রে কাজ করা কঠিন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.