দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তিতে বছর দশেক আগে এক সিপিএম কর্মী খুনের মামলায় প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক আবুল বাশার লস্কর-সহ আট জনকে বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিল আলিপুর আদালত। বাশার তো বটেই, বাকি সাত অভিযুক্তও কংগ্রেসকর্মী। বাশার জামিনে ছাড়া থাকলেও অন্য সাত অভিযুক্ত ধরা পড়ার পর থেকেই জেল-হাজতে রয়েছেন।
অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার পরে প্রথম ফার্স্ট ট্রাক কোর্টের বিচারক শঙ্করমণি ত্রিপাঠী সাজা সম্পর্কে তাঁদের মতামত জানতে চান। বাশার-সহ আট অভিযুক্তই জানান, তাঁদের কেউই ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। সিপিএমের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের সকলেরই পরিবার রয়েছে। সেই দিরটি বিবেচনা করার জন্য তাঁরা আদালতের কাছে আর্জি জানান।
উস্তির নোয়াপাড়ায় ২০০২ সালের ২২ অক্টোবর রাতে খুন হন সিপিএমের সক্রিয় কর্মী আব্দুল লতিফ মোল্লা। অভিযোগ ছিল, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আবুল বাশার লস্করের নেতৃত্বে এক দল সশস্ত্র লোক আব্দুলের বাড়িতে ঢোকে। আব্দুল তখন বাড়ির বারান্দায় বিছানায় শুয়ে ছিলেন। বাশারের নির্দেশে তাঁর সশস্ত্র সঙ্গীরা আব্দুলকে চপার দিয়ে কুপিয়ে খুন করে পালায় বলে অভিযোগ।
এই মামলায় সাত জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হয়ে যাওয়ার পরে সইদুল হক হালদার ওরফে কুচো নামে এক ফেরার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশে। পরবর্তী কালে সে রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেয়। ‘সত্য ঘটনা’ কী, তা জানানোর জন্য অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত আবুল বাশার লস্করও রাজসাক্ষী হতে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই আবেদন প্রথমে নিম্ন আদালত এবং পরে কলকাতা হাইকোর্টও খারিজ করে দেয়।
অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবীরা আদালতে এই মামলার নানান ‘অসঙ্গতি’র কথা তুলে ধরেন। আইনজীবীরা বলেন, আব্দুল লতিফ মোল্লাকে বিছানার উপরে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদি তা-ই হয়, সে-ক্ষেত্রে বিছানার চাদর, তাঁর পরনের লুঙ্গি বা জামায় রক্তের দাগ থাকার কথা। পুলিশ তা হলে ওই সব জিনিস বাজেয়াপ্ত করল না কেন? আব্দুল লতিফ মোল্লার বাড়ির চার পাশে তাঁরই জ্ঞাতিরা থাকেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর সেই জ্ঞাতি-পড়শিদের কাউকেই এই মামলায় সাক্ষী করেনি। আব্দুলের জ্ঞাতিদের সাক্ষী করা হল না কেন, আদালতে সেই প্রশ্নও তোলেন আইনজীবীরা। নিকটজনদের মধ্যে সাক্ষী করা হয়েছিল শুধু নিহতের স্ত্রী এবং দুই নাবালিকা মেয়েকে। অন্য সাক্ষীদের অনেককেই ডাকা হয়নি বলে আইনজীবীদের অভিযোগ। |