সেই চৌঠা মে। শেষ বার জোরালো বৃষ্টি হয়েছিল। প্রায় ৬৫ মিলিলিটারের বৃষ্টির সেই টি টোয়েন্টি ইনিংসের পরে আর দেখা নেই। একটানা দেড় মাস ধরে পুড়ছে নবদ্বীপ। স্বাভাবিকের থেকে চার-পাঁচ ডিগ্রি বেশ গরম। ৮০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা আর ঝলসানো রোদে ওলটপালট হয়ে গিয়েছে শহরের জনজীবন। তার ধাক্কা পড়েছে অর্থনীতির উপরেও। একটানা এই গরমে নবদ্বীপ-মায়াপুরে পর্যটন মরসুম প্রায় ফাঁকাই গিয়েছে এ বার। শহরের ব্যবসায়ী মহলের বক্তব্য, এক রকম নজিরবিহীন ভাবেই এ বারে স্কুল কলেজের গরমের ছুটিতে প্রায় পর্যটক শূন্য ছিল নবদ্বীপ-মায়াপুর। রাস্তাঘাটের মতো খাঁ খাঁ করছে হোটেলগুলিও।
স্থানীয় ব্যবসায়ী বিধান কুণ্ডু বলেন, “নবদ্বীপে সাধারণত পর্যটকেরা সপরিবারে আসেন। সে কারণেই গরমের ছুটির মতো সময়ে সর্বদাই ভিড় থাকে। এ বার গরমের জন্য সেই ভিড়টা উধাও। তীর্থযাত্রী কয়েকজন এসেছেন। কিন্তু তাতে পর্যটন ব্যবসা বাঁচে না।” মায়াপুরের একটি হোটেলের মালিক প্রদীপ দেবনাথ বলেন, “এমন অবস্থা এই প্রথম দেখছি। দশ শতাংশও লোক হচ্ছে না। দৈনন্দিন খরচ ওঠানোটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” কিছু হোটেল তাদের কর্মী সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছে।
একই সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরাও। এই ছুটির মরসুমের দিকে তাকিয়ে থাকতেন তাঁরা। তাঁদেরই অন্যতম সুজিত সাহা বলেন, “বিক্রিবাটা এমনিতেই হচ্ছে না। শহরের লোক বাজারে আসছেন সন্ধ্যার পরে। তার উপরে শহরে পর্যটক নেই।” ইসকনের জন সংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “এই সময়ে অন্য বারের তুলনায় এ বার পর্যটক অনেকই কম। গরমের জন্যই এই অবস্থা।” পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শহরের মানুষই বরং চলে যাচ্ছেন গ্রীষ্মাবকাশ কাটাতে পাহাড়ে। পর্যটন ব্যবসায়ী কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “যত লোক বেড়াতে যেতে চাইছেন, তার অর্ধেক লোককে ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের নিজেদের শহর ফাঁকা। কেউই আসছেন না।” নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “পাখা, রেফ্রিজারেটর, বাতানুকূল যন্ত্র, ঠান্ডা পানীয় বা ছাতার বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু অন্য জিনিসপত্রের বাজার খুবই খারাপ।
তবে শহর বুক বাঁধছে রথযাত্রার দিকে তাকিয়ে। বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপে সেই উৎসবে অন্তত রোদের তাত উপেক্ষা করেই ভিড় বাড়বে বলে আশা সকলের। |