শরীরে পুরুষালি ভাব প্রকট হওয়ার পরই ২০০৮ সালে ‘চোট দেখিয়ে’ অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন পিঙ্কি প্রামানিক!
বৃহস্পতিবার বাংলা ও ভারতের নামী এই মেয়ে অ্যাথলিটকে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ আটক করার পর এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। বাংলার অ্যাথলেটিক্স কর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, ফেডারেশন চেন্নাইতে ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পরই বাংলা দল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় পুরুলিয়ার এই অ্যাথলিটকে। এবং শুধু তাই নয়, বাংলার লজ্জা ঢাকার জন্য গোটা ঘটনাই চেপে গিয়েছিলেন কর্তারা। প্রচার করে দেওয়া হয়েছিল, চোটের কারণেই পিঙ্কিকে অবসর নিতে হয়েছে। রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট আশিস সেনগুপ্ত বললেন, “এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। চেন্নাইতে আন্তঃ রাজ্য মিটে মেয়েদের ৮০০ মিটারে পদক পাওয়ার সুযোগ ছিল ওর। কিন্তু ফেডারেশন কর্তারা আমাদের ম্যানেজারকে এসে বলেন পিঙ্কির বিরুদ্ধে হরমোন সংক্রান্ত অভিযোগ উঠছে। ঝুঁকি নিইনি।”
দশ বছর আগে পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজ্য মিটে এসে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন পিঙ্কি। খালি পায়ে নেমে পেয়েছিলেন অনেকগুলি পদক। তারপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজ্য ও জাতীয় স্তরে তো বটেই এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসেও পদক জিতেছেন আনায়াসেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, দেশে ছাড় পেলেও এশিয়াড-কমনওয়েলথে পিঙ্কি ছাড় পেলেন কী ভাবে? উত্তর হল, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির নতুন নিয়মের জন্যই। আগে লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য ‘র্যান্ডম’ টেস্ট হত। মহিলা সংগঠনগুলির চাপে এখন তা বদলেছে। নতুন নিয়মে অভিযোগ উঠলেই শুধু পরীক্ষা হয়। পিঙ্কি সেই সুযোগটা পেয়ে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, পিঙ্কিকে নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় ২০০৩-০৪ সালে তাঁর প্রথম পরীক্ষা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাইয়ের ডাক্তাররা। তাঁরা তাকে ‘মেয়ে’ বলেই স্বীকৃতি দেন। কোনও প্রশ্নই তোলেননি। এরপর রেলের চাকরির সময়ও নিয়মানুযায়ী মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছিল পিঙ্কির। সেখানেও পাস করে যান তিনি। এ দিনের ঘটনার পর রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা অবশ্য নতুন করে নিয়োগের সময়ের কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছেন। সর্বভারতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তা আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “অনেক মেয়েই আছে যাদের মধ্যে পুরুষালী ভাব থাকে। পিঙ্কিরও ছিল। ওর শরীরে পুরুষ হরমোন বেশি ছিল বলে শুনেছি।” সল্টলেক সাইয়ের অ্যাথলেটিক্সের প্রধান কোচ কুন্তল রায় বললেন, “ও আমার কাছে কোচিং নিতে এসেছিল শুরুর দিকে। আমার ওর হাবভাব দেখে সন্দেহ হয়। তাই নিইনি।”
বোহেমিয়ান জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া পিঙ্কি ইদানিং নানা ঝামেলায় জড়িয়েছেন। বারবার মোবাইলের সিম বদলাতেন। নিয়মিত নেশাও করতেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর প্রতিবেশিরা। অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাক থেকে সরিয়ে নেন নিজেকে। |