নিজেরা সব সময়েই থেকেছেন আড়ালে। ভুয়ো মালিক খাড়া করে তাঁর নামে সংস্থা গড়ে তুলে কয়েক কোটি টাকার জমি কেনাবেচার কারবার চালিয়েছেন নেপথ্যে থেকেই। রাজ্যসভার প্রাক্তন সিপিএম সদস্যা সরলা মহেশ্বরীর স্বামী অরুণ মহেশ্বরী এবং জামাই অমিতাভ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সিআইডি-র। শ্বশুর ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে তদন্তে এই অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলে দাবি ওই গোয়েন্দা সংস্থার।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, নিজেদের এক প্রাক্তন কর্মীকে ‘শিকার’ হিসেবে ব্যবহার করেই ওই বেআইনি ব্যবসা চালাচ্ছিলেন শ্বশুর-জামাই। সেই কর্মীর সই জাল করে চালানো হত ওই কারবার। ‘শিমার ল্যান্ড অ্যান্ড কমার্শিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার বিভিন্ন নথিপত্র ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্তও করেছে পুলিশ। ওই সংস্থার অন্যতম
|
অরুণ মহেশ্বরী |
ডিরেক্টর হিসেবে শঙ্কর ভট্টাচার্যের সই সেই নথিতে নিপুণ ভাবে নকল করা হয়েছে বলে সিআইডি-র সন্দেহ। সেই নকল সইয়ের সাহায্যে প্যান কার্ড-সহ নানা ধরনের জাল নথি তৈরি করা হত। শঙ্করবাবু এবং তাঁর স্ত্রী প্রগতি ভট্টাচার্যের অভিযোগের ভিত্তিতেই গত রবিবার সরলাদেবীর স্বামী অরুণ এবং জামাই অমিতাভকে গ্রেফতার করে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। ওই দম্পতিকে বিন্দুবিসর্গ বুঝতে না-দিয়ে তাঁদের একটি সংস্থার মালিক সাজিয়ে জমির কারবার চালানো হত
বলে অভিযোগ।
অন্যের সই নকল করে তাঁদের মালিক সাজানো হত কী ভাবে?
সিআইডি সূত্রের খবর, যাঁকে মালিক সাজানো হচ্ছে, প্রথমে কয়েকটি সাদা কাগজে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়ার পরে তা নকল করেই জমি ক্রয়বিক্রয় সংক্রান্ত নথি তৈরি করতেন অভিযুক্তেরা। মহেশ্বরীদের জামাই অমিতাভের সংস্থায় দীর্ঘদিন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন শঙ্করবাবু এবং তাঁর স্ত্রী প্রগতিদেবী। সেই সময়েই জোর করে তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে একাধিক বার সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে ওই দম্পতির অভিযোগ। তবে অভিযুক্তেরা যখন জমি বিক্রি করতেন বা কিনতেন, সেই সময় শঙ্করবাবু এবং তাঁর স্ত্রী প্রগতিদেবীর ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখার দরকার আছে বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কেন? সিআইডি-কর্তাদের ব্যাখ্যা, কারও নাম করে জমি কেনা বা বেচার সময় নিয়ম অনুযায়ী তাঁদেরও সরকারি রেজিস্ট্রারের কাছে সশরীরে হাজির থাকতে হয়। অরুণ-অমিতাভদের সংস্থার (শিমার) নাম করে জমি কেনাবেচার সময় কী হয়েছিল, সেটা যাচাই করতে হবে। এক সিআইডি-কর্তা বলেন, “ওই সব জমি কেনা বা বেচার সময় শঙ্করবাবু হাজির ছিলেন, নাকি ভুয়ো কাউকে সরকারি রেজিস্ট্রারের কাছে হাজির করানো হয়েছিল, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এই ব্যাপারে ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসারদের সঙ্গে সঙ্গে জেলা রেজিস্ট্রারের দফতরের আধিকারিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। |