প্রায় এক বছর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (এসটিপি) প্রকল্পের প্রস্তাবিত পরিবর্তন এখনও ফাইলবন্দি হয়ে বিভিন্ন মন্ত্রকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রকল্পের নয়া সুবিধা বা ‘ইনসেনটিভ’ কাঠামো আলোচনার পর্যায়ে থেকে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক মন্দায় কোঠাসা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ও বিভিন্ন রাজ্যের চাপে এ বার নড়েচড়ে বসছে কেন্দ্র।
১৯৯১ সালে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে তৈরি হয়ে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক অফ ইন্ডিয়া নামে স্বশাসিত সংস্থা। মূলত ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সহায়তার জন্য এই প্রকল্প তৈরি করে কেন্দ্র। এস টি পি প্রকল্পের আওতায় থাকা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দিতে কর ও রফতানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হত। এর মধ্যে ছিল আয়কর ছাড়। ২০১১ সালের মার্চ মাসের পর থেকে এই আয়কর ছাড়ের সুবিধা তুলে দেয় কেন্দ্র।
এই মুহূর্তে ইনসেনটিভ প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। ইনফোসিসকে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল বা সেজ গড়ার অনুমতি দিতে পারবে না রাজ্য সরকার। কিন্তু লগ্নি মানচিত্রে জরুরি এই ব্র্যান্ডকে ধরে রাখতে ইনসেনটিভ প্রকল্পকেই সমাধানসূত্র হিসেবে দেখছে রাজ্য। কেন্দ্রকে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছে তারা। প্রসঙ্গত এই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সক্রিয় হয়েছিল বিগত সরকার ও ন্যাসকমও।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এসটিপি। আয়কর ছাড়ের সুবিধা তুলে নেওয়ার আগে পর্যন্ত এ রাজ্যে এসটিপি-র বৃদ্ধির হার ছিল ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১১-র পরে তা এক ধাক্কায় নেমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশের কম। ২০১০-’১১ সালে এ রাজ্যের এসটিপি থেকে রফতানির পরিমাণ ছিল ৫৬৬৫ কোটি টাকা। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯২০ কোটি টাকা। সংস্থার সংখ্যা ২০০ থেকে কমে হয়েছে ১৫৯।
এক দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা। অন্য দিকে এই আর্থিক সুবিধা হারিয়ে সমস্যায় পড়েছে অধিকাংশ সংস্থা। সমাধানসূত্র হিসেবে নয়া ‘ইনসেনটিভ’ প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। গত বছর অগস্ট মাসে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-এর প্রধান ওঙ্কার রাই জানিয়েছিলেন, প্রকল্প তৈরির আগে একটি সমীক্ষা করা হচ্ছে। উপদেষ্টা সংস্থা ডেলয়েট টুশে এই রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব পায়। গত বছরের শেষেই তারা রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে নতুন ইনসেনটিভ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প চূড়ান্ত করে কার্যকর করতে পারেনি কেন্দ্র।
ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাজারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির জেরে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ আর্থিক অঞ্চল গড়তে লগ্নিকারীরা আকর্ষণ হারাচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো, ভিডিওকন-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা বিশেষ আর্থিক অঞ্চল গড়া থেকে অব্যাহতি চেয়েছে। এ ছাড়াও ১১টি নির্মাণ সংস্থা বিশেষ আর্থিক অঞ্চল তৈরি করতে আরও সময় চেয়েছে। তারাও কারণ হিসেবে বিশ্ব বাজারের বেহাল আর্থিক পরিস্থিতিকেই দেখিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এসটিপি প্রকল্পে নতুন সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করলে লগ্নি টানতে সুবিধা হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। শুধু ছোট সংস্থাগুলিকে টিঁকিয়ে রাখা নয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরেও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ ধরনের ইনসেনটিভ প্রকল্প কাজে আসবে বলে মনে করছেন মন্ত্রকের এক কর্তা। |