বাড়ির সামনে সদ্য টাঙানো সামিয়ানা। পাতা হয়ে গিয়েছে মঙ্গলঘট। ছাদনাতলাও প্রস্তুত। এমনকী পাত্র পর্যন্ত হাজির। কিন্তু পাত্রের বাবা উত্তম মণ্ডল এই বিয়েতে নারাজ। তিনিই প্রশাসনকে খবর দিয়ে ইসলামপুরে শেষ মুহূর্তে বন্ধ করলেন তাঁর নাবালক ছেলে উজ্জ্বলের সঙ্গে নাবালিকা পাত্রী মামনি মণ্ডলের বিয়ে।
উত্তমবাবু বলেন, “আমার ছেলের সঙ্গে ওই কিশোরীর ভাব-ভালোবাসা হয়েছে, এরকম একটা কথা দিন কয়েক আগে আমার কানে এসেছিল। তবে তখন বিশ্বাস করিনি। কিন্তু গত শনিবার পাশের গ্রামে কীর্তন শুনতে যাচ্ছে বলে সেই যে ছেলে গেল তো আর ফিরল না। দু’দিন ধরে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি খুঁজেও ছেলের হদিস করতে পরিনি। অবশেষে এ দিন দুপুরে গ্রামের মাস্টারমশায় অসীমকুমার দাসকে সঙ্গে নিয়ে গোরাইপুর গ্রামে গিয়ে দেখি ওই কিশোরীর বাবা দিলীপবাবু বাড়িতে সামিয়ানা টাঙিয়ে, ছাদনাতলা তৈরি করে বিয়ের সব আয়োজন পাকা করে ফেলেছেন।” প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অসীমবাবু বলেন, “নাবালক-নাবালিকার বিয়ে অবৈধ। এ কথা বলা সত্ত্বেও পাত্রীর বাবা দিলীপবাবু ওই বিয়ে দিতে অনড় ছিলেন।” অবশেষে তাঁরা নবগ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘চাইন্ড
হেল্প লাইন’-এ ফোন করে সবিস্তারে জানান। ‘চাইন্ড হেল্প লাইন’-এর দুই কর্মী সানোয়ারা বেগম ও মহম্মদ সফিউল্লা খবর পেয়ে পৌঁছে যান ইসলামপুর থানায়। তাঁর দু’জনেই বলেন, “পুলিশ নিয়ে আমরা ওই বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে নাবলক বর ও নাবালিকা কনেকে উদ্ধার করি।”
মামনির বাবা দিলীপ মণ্ডল বলেন, “আমার মেয়ের সঙ্গে উজ্জ্বলের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ছেলে পক্ষ রাজি হবে না ভেবে গোপনে ওই বিয়ের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু তা যে বেআইনি তা জানতাম না।” উজ্জ্বল কয়েকদিন থেকে তাঁর বাড়িতেই ছিল।
ইসলামপুর থানার ও সি সন্দীপ সেন বলেন, “নাবালক ও নাবালিকাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দু’পক্ষের অভিভাবকেরা লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয় যে, ওই বিয়ে বেআইনি। তাই তাঁরা ওই বিয়ে বাতিল করলেন বলে মুচলেকা দেন। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আর বিয়ে দেওয়া হবে না বলেও মুচলেক দেন অভিভাবকেরা। তার পর নাবালক নাবালিকা দু’জনই যে যার বাড়ি ফিরে যায়।”
ইসলামপুর থানার গোরাইপুর গ্রামের মামনির মামার বাড়ি পাশের মুর্শিদাবাদ থানার শ্রীশনগর গ্রামে। ওই গ্রামেই বিয়ে হয়েছে মুর্শিদাবাদ থানার মুড়ো গোয়ার গ্রামের উজ্জ্বলের দিদির। অষ্টম শ্রেণি পাশ উজ্জ্বলের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে পাঠরত মামনির দেখা হয় ওই গ্রামে। সেই সূত্রে প্রণয়। তা থেকেই বিয়ের আয়োজন।
তবে পরে দিলীপবাবু বলেন, “মেয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত আর তার বিয়ের চেষ্টা করব না।” উত্তমবাবু বলেন, “ছেলেকে বলেছি, তুমি সাবালক হও। তার পরও তুমি যদি ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চাও তখন ধূমধাম করে আমিই ওই মেয়েকে পুত্রবধূ করে ঘরে তুলে আনব।” উজ্জ্বল বলে, ‘বাবার কথাই মেনে নিয়েছি।” নিজের ভুল বুঝতে পেরে মামনিও পুলিশকে জানিয়েছে, “মাধ্যমিক পাস করার পর বিয়ের বিষয়ে ভাবব। তার আগে নয়।”
|